বর্ষবরণের রাতে রাস্তার উপরেই দু’টি খুনের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পুলিশি নজরদারি।
বুধবার প্রথম ঘটনায় বাঁশদ্রোণীর বিদ্যাসাগর পার্কে খুন হন এক যুবক। সেই ঘটনায় তাঁর বন্ধুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে বেলুড়ের গিরিশ ঘোষ রোডে। নিজের বাড়ির কাছেই এক ব্যবসায়ী খুন হন। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির পরিচিত চার যুবক। দু’টি ঘটনাতেই বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, বেলুড়ের ছাঁট লোহা ও ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী অজয় সাউ (৩৫) রাত ১১টা নাগাদ মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির গলির উল্টো দিকে মিষ্টির দোকানে তখন তাঁর এক প্রতিবেশী যুবক দাঁড়িয়ে। সঙ্গে আরও তিন জন। প্রত্যেকেরই মুখ মাফলার-গামছায় ঢাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, ফারুক শেখ নামে এক যুবকের ডাকেই বাড়ি না ঢুকে মিষ্টির দোকানের সামনে মোটরবাইক নিয়ে চলে যান অজয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বর্ষবরণের খরচ বাবদ অজয়ের কাছে ১০ হাজার টাকা চায় ফারুক। দিতে পারবেন না জানিয়ে মোটরবাইক ঘুরিয়ে বাড়িমুখো হতেই অজয়ের থুতনির ডান দিকে রিভলভার ঠেকিয়ে গুলি চালায় ফারুকের এক সঙ্গী। গুলি থুতনি দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকের কপাল ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। তখন মোবাইল থেকে নিজের দাদা ও বন্ধুকে ফোনে কিছু বলার চেষ্টা করেছিলেন অজয়। কিন্তু মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর গলায় চপারের আঘাত করে ফারুকেরা। মোটরবাইক থেকে ছিটকে মাটিতে পড়েন অজয়। এর পরেই তাঁর বাইকটি নিয়ে ওই চার জন বেলুড় মঠের দিকে চম্পট দেয়।
কিন্তু রাস্তার উপরে এমন ঘটতে দেখেও কেউ এগোলেন না কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, “ফারুকদের সঙ্গে বন্দুক, চপার ছিল। তাই ভয়ে কেউ এগোয়নি।” পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে এলাকায় পুলিশের নজরদারি নিয়েও। এক পুলিশকর্তা বলেন, “সব রাস্তায় রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের গাড়ি ছিল। তবে গাড়ি তো এক জায়গায় থাকবে না। তখন অন্য কোথাও ছিল।” খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যায় বেলুড় থানার পুলিশ। তারাই অজয়কে হাসপাতালে নিলে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার সব দোকান বন্ধ। মিষ্টির দোকানের সামনে মোতায়েন পুলিশ। উল্টো দিকেই অজয়ের বাড়ির গলিতে জটলা। গলিতে ঢুকেই প্রথম বাড়ি ফারুকের। ঘটনার পর থেকে অবশ্য ওই বাড়িতে কেউ নেই। দরজায় তালা। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে পুণে থেকে এসেছেন অজয়ের স্ত্রী রেণু সাউ। অজয়ের দাদা সঞ্জয় বলেন, “পুরনো রাগ মেটাতে ভাইকে মেরেই দিল ফারুক।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দিন কুড়ি আগে ইট মেরে নিজের ছোট ভাইপোর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল ফারুক। এর জন্য তাকে বকাবকি করেছিলেন অজয়। এই ঘটনার পরে ফারুক অজয়কে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার জেরেই খুন, না কি এর পিছনে ব্যবসায়িক শত্রুতা আছে, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
অন্য দিকে, বর্ষবরণ উপলক্ষে বিদ্যাসাগর পার্ক এলাকায় বন্ধু সঞ্জয় নায়েক ওরফে ব্রজর বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছিল পেশায় গাড়িচালক রাজু মণ্ডলের (৩২)। পুলিশ জেনেছে, সেখানে মদ্যপান করেন ওই যুবকেরা। এর পরেই পুরনো কোনও বিবাদ ঘিরে সেখানে রাজুর সঙ্গে ব্রজর গণ্ডগোল শুরু হয়। বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। তাঁকে মারতে মারতে রাস্তায় নিয়ে আসেন ব্রজ ও তার সহযোগীরা। পুলিশের দাবি, রাজুর দেহের উপরের অংশে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। রাজুর দেহের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। রাজুর স্ত্রী এই ঘটনায় একটি খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy