Advertisement
E-Paper

ভেঙে পড়া সুদীপ্তের মুখে কুলুপ

পাঁচ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে সারদা কাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকারের গড়া শ্যামল সেন কমিশনের এজলাসে বুধবার দেখা গিয়েছিল তাঁকে। দেখা গেল বৃহস্পতিবারেও। কিন্তু দু’দিনের ছবিতে কত তফাত! বুধবার ছিলেন স্বাভাবিক। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষায় ‘ভাল মুডে’। কথা বলেছেন স্বাভাবিক ছন্দে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩২

পাঁচ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে সারদা কাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকারের গড়া শ্যামল সেন কমিশনের এজলাসে বুধবার দেখা গিয়েছিল তাঁকে। দেখা গেল বৃহস্পতিবারেও। কিন্তু দু’দিনের ছবিতে কত তফাত!

বুধবার ছিলেন স্বাভাবিক। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষায় ‘ভাল মুডে’। কথা বলেছেন স্বাভাবিক ছন্দে।

রাত পোহাতেই চেহারা বদলে গিয়েছে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের। স্পষ্টতই ভেঙে পড়েছেন। কারও সঙ্গে কথা নেই। সারা ক্ষণ হয় দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলেন, নয়তো বসে ছিলেন মাথা নিচু করে। বিধ্বস্ত। বিভ্রান্ত। আগের দিনের সুদীপ্তের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের সুদীপ্তকে মেলানো কঠিন হচ্ছিল!

সুদীপ্তের চেহারা ও আচরণ যদি পরিবর্তন নম্বর এক হয়, দু’নম্বর পরিবর্তন তাঁর নিরাপত্তায়। বুধবার নামমাত্র পুলিশ ছিল তাঁর সঙ্গে। এ দিন কিন্তু সারা ক্ষণ অন্তত এক ডজন পুলিশের ব্যূহে রাখা হয় তাঁকে। কাউকে সারদা-কর্ণধারের ধারেকাছে ঘেঁষতেই দেওয়া হয়নি।

গত বছরের ২৩ এপ্রিল ভূস্বর্গে গ্রেফতার হওয়ার পরে এক বছরে সুদীপ্তের চেহারায় বদল এসেছে অনেক। শ্যামল সেন কমিশন গঠনের পরে সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় নিয়মিত কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে হাজিরা দিতে হচ্ছে তাঁকে। কমিশনের একাধিক কর্মীর কথায়, “প্রথম দিকে আড়ষ্ট থাকলেও ধীরে ধীরে তিনি স্বাভাবিক হচ্ছিলেন। এজলাসে এলে অনেকের সঙ্গে কথা বলতেন। হাসতেও দেখা যেত তাঁকে। বুধবারেও এসেছিলেন বেশ ভাল মুডেই। তাঁর মধ্যে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা ছিল না।”

২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই বৃহস্পতিবার এক অন্য সুদীপ্তকে দেখলেন কমিশনের কর্মীরা। কেন এই তফাত? বুধবার রাতেই সুদীপ্তের প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিৎ সেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি সেনকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। পুলিশি সূত্র জানাচ্ছে, সেই খবর পাওয়ার পর থেকেই সারদা-কর্ণধারের মেজাজ বদলাতে শুরু করে।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ কমিশনে হাজির হন সুদীপ্ত। পরনে ছিল সাদা পায়জামা ও একই রঙের হাফ-হাতা কুর্তা। কমিশনের এক কর্তা জানান, পোশাক অন্যান্য দিনের মতো থাকলেও তাঁর চোখেমুখে ছিল বিষণ্ণতার ছাপ। তা হলে কি স্ত্রী ও ছেলের গ্রেফতারের খবরেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন সারদা-কর্তা?

ধরা পড়ার পরে সুদীপ্ত একাধিক বার সংবাদমাধ্যমের সামনে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে যেন গ্রেফতার করা না-হয়। তা হলে তিনি সব ফাঁস করে দেবেন। কমিশনের এক কর্তা জানান, তাঁকে গ্রেফতার করার পরে বছরখানেকের মধ্যে পুলিশ তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের না-ধরায় স্বস্তিতেই ছিলেন সুদীপ্ত। কিন্তু বুধবার রাতে বড় ছেলে ও দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রেফতার করার খবর পাওয়ার পর থেকে ভেঙে পড়েন তিনি। এ দিন কমিশনে হাজিরা দিলেও সারা ক্ষণ নীরব ছিলেন।

সুদীপ্ত এ দিন ঘণ্টা দুয়েক কমিশনে কাটালেও তাঁর স্ত্রী-পুত্রের গ্রেফতারি নিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যেরা তাঁকে কোনও প্রশ্ন করেননি। তবে তাঁর মেজাজ বদলের সঙ্গে নিরাপত্তার পরিবর্তনটাও নজর করেছেন কমিশনের সদস্যেরা। তাঁদের এক জন জানান, বুধবার কমিশনে হাজির করানোর সময় হাতে গোনা কয়েক জন পুলিশকর্মী ছিলেন সুদীপ্তের সঙ্গে। তাঁদের হাবভাবও ছিল ঢিলেঢালা। কিন্তু এ দিন ডজনখানেক পুলিশকর্মী সারা ক্ষণ তটস্থ হয়ে ঘিরে রেখেছিলেন সারদা-প্রধানকে। তাঁর ধারেকাছে কাউকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। এমনকী সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও আটকে দেওয়া হয়।

কেন এই বজ্র আঁটুনি?

কমিশনের এক অফিসারের কথায়, “স্ত্রী ও ছেলেকে গ্রেফতার করা হলে সুদীপ্ত সব ফাঁস করে দেবেন বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এত দিনে তাঁরা গ্রেফতার হওয়ায় হাতের কাছে সংবাদমাধ্যমকে পেলে সুদীপ্ত মুখ খুলতে পারেন। সেই আশঙ্কা থেকেই এ দিন কাউকে তাঁর কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।”

কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেন জানান, রাঁচির একটি সংবাদ চ্যানেল কেনা নিয়ে এ দিন সুদীপ্তকে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়। ওই চ্যানেলের মালিক অরুণ পোদ্দারও হাজির ছিলেন। বেলা ২টোর পরে মূল অভিযুক্ত কমিশন থেকে বেরোতেই পুলিশ তাঁকে ঘিরে ফেলে। তখন মাথাটা নামানোই ছিল সারদা-কর্ণধারের। সেই অবস্থায় সোজা লিফটের দিতে চলে যান। সেখান থেকে গাড়িতে। পরে সুদীপ্তের আইনজীবী ডি কে শর্মা বলেন, “আমার মক্কেল আজ খুবই ডিস্টার্বড ছিলেন। কেন, তা বুঝতে পারছি না।”

anup chatterjee sudipta sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy