Advertisement
E-Paper

ভোটের হাওয়ায় এ বার দোলের রং সবুজ

ভোটের রং লেগেছে দোলের গায়ে। নইলে লাল-গোলাপি আবিরের চাইতেও বেশি সবুজ আবির কেন মজুত করছেন বিক্রেতারা? শিলিগুড়ি থেকে তমলুক, সর্বত্র রঙের বাজারে সবুজের দাপট। এমনকী মহাপ্রভুর ধাম নবদ্বীপ, যেখানে মঠ-মন্দিরে লাল আবিরে বিগ্রহকে প্রণাম করাই রীতি, সেখানেও এ বার চাহিদার নিরিখে এক নম্বরে সবুজ আবির।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩২

ভোটের রং লেগেছে দোলের গায়ে। নইলে লাল-গোলাপি আবিরের চাইতেও বেশি সবুজ আবির কেন মজুত করছেন বিক্রেতারা?

শিলিগুড়ি থেকে তমলুক, সর্বত্র রঙের বাজারে সবুজের দাপট। এমনকী মহাপ্রভুর ধাম নবদ্বীপ, যেখানে মঠ-মন্দিরে লাল আবিরে বিগ্রহকে প্রণাম করাই রীতি, সেখানেও এ বার চাহিদার নিরিখে এক নম্বরে সবুজ আবির। নবদ্বীপ বড়বাজারের ব্যবসায়ী নন্দ রায় বলেন, “আবির বলতে চিরকাল যে লাল আবিরকে বুঝতাম, তার বিক্রি নেই বললেই চলে। অন্য দিকে সবুজ আবির বিক্রি করে কূল পাচ্ছি না।” মঠ-মন্দির থেকে সাধারণ ক্রেতা, সকলেই প্রথমে সবুজ আবির খুঁজছেন, জানান তিনি। খুচরো এবং পাইকারি দু’ভাবেই আবির বিক্রি করেন নন্দবাবু। গত বছর ২০০ বস্তা আবির (প্রতিটি ২৫ কিলোগ্রাম) বিক্রি করেছিলেন, যার মধ্যে ১২৫ বস্তাই ছিল সবুজ। এ বার ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে প্রায় ২০০ বস্তা, তার মধ্যে ১৪০ বস্তাই সবুজ আবির, জানিয়েছেন তিনি।

চাহিদা এমনই চড়া, যে টান পড়তে শুরু করছে জোগানে। কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে খুচরো আবির বিক্রি করেন মদন দত্ত। তিনি বলেন, “বাজারের চাহিদা দেখে মাল কিনতে গিয়ে পাইকারি বিক্রেতার কাছে পাঁচ বস্তা সবুজ আবির চাইলে, দিচ্ছে দু’বস্তা।” এ বছর ২০ বস্তা আবির তুলেছেন মদনবাবু। তার মধ্যে ১০টাই সবুজ।

কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের ছবিটাও খুব আলাদা নয়। দোল পূর্ণিমার দিন থেকে বিগ্রহ রাখা থাকে বাইরে, ভক্তরা এসে আবির দেন। মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “ক’বছর আগেও লাল বা গোলাপি আবির দেওয়াই রীতি ছিল। এখন সবুজই দেখছি বেশি।” কাছেই ভবানীগঞ্জ বাজারের আবির ব্যবসায়ী সুকুমার চন্দ্র দে জানান, গত বার তিনি প্রায় পাঁচ কুইন্টাল সবুজ আবির বিক্রি করেছেন। গোলাপি তিন কুইন্টাল, লাল দু’কুইন্টালের কম। আর এ বারে? “সবুজ আবিরের চাহিদা খুব। লাল যেটুকু নিচ্ছে তা ঠাকুরকে দিয়ে নিয়মরক্ষার জন্য।”

এ চিত্র গোটা রাজ্যের, জানালেন ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহেশ সিংহানিয়া। “দোলের সময়ে এ রাজ্যে ১০ হাজার টন আবির বিক্রি হয়। নানা মানের আবিরের নানা দাম, সব মিলিয়ে বিক্রি প্রায় ১০ কোটি টাকার ব্যবসা। এ বার কিন্তু তার প্রায় ৭০ শতাংশই সবুজ আবির,” জানান তিনি। অন্যান্য বারে বাকি বছর ৪০০-৫০০ টন আবির বিক্রি হয়। ভোটের জন্য এ বার সেই বিক্রি অনেকটাই বাড়বে, বলেন মহেশবাবু।

দোল আর ভোট, দুই মিলিয়ে আবিরের চাহিদা এ বার চড়া, সে খবর মিলছে জেলায় জেলায়। মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “গত বছর জেলায় ১২০০ টন আবির বিক্রি হয়েছিল। এ বার ১৭০০ টন মজুত করা হয়েছে। যে হারে বিক্রি হচ্ছে তাতে বিহার থেকে আরও আনাতে হবে।” আলিপুরদুয়ারের ব্যবসায়ী কাজল সাহা জানান, দু’হাজার কিলোগ্রাম আবির মজুত করেছেন তিনি। তার ৭০০ কেজি সবুজ আবির।

মাঝারি ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলছেন। মালদহের চিত্তরঞ্জনপুর বাজারের ব্যবসায়ী প্রণবেশ দত্ত বলেন, “গত বছর ৫০ কিলোগ্রাম আবির বিক্রি করেছিলাম। এ বার নিবার্চনের জন্য চাহিদা বাড়বে বলে দেড় কুইন্টাল মজুত করেছি। যা চাহিদা, তাতে মনে হচ্ছে আরও লাগতে পারে।”

বাড়তি আবির মজুত করেছেন দুর্গাপুরের ঘোষ মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও। গুদাম ঠাসা হচ্ছে আবিরের বস্তায়। তবে তার বেশির ভাগটাই যে সবুজ আবির, তা-ও স্বীকার করলেন তাঁরা। দুর্গাপুর বাজারের এক আবির বিক্রেতা জানান, গড়ে প্রতি বছর পাঁচ-কিলোগ্রামের ৪০ বস্তা করে আবির বিক্রি হয়। এ বার তিনি আরও ১০ বস্তা বেশি মজুত করেছেন। সাত বস্তাই বিশেষ একটি রঙের। কোন রং তা ভাঙলেন না। তবে বাড়তি আবির লাগবে, পাড়ার নেতারা তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেই তাঁর এই প্রস্তুতি।

ঘোষ মার্কেটের ব্যবসায়ী সুমন সাউয়ের সাফ কথা, ভোটের ফল ঘোষণার পর আবির চাইলে আগাম অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে। চাহিদা বাড়ায় কোথাও কোথাও দাম-ও বেড়েছে সবুজ আবিরের। মালবাজারের ব্যবসায়ী মণীশ অগ্রবাল জানান, সব রঙের আবির তৈরির খরচ এক হলেও, চাহিদা বেশি বলে খোলা বাজারে সবুজ আবিরের দাম প্রতি কিলোগ্রামে ১০-১৫ টাকা বেশি।

কিন্তু ভোটের বাজারে দাম নিয়ে মাথা কে ঘামায়? তাই রায়গঞ্জ থেকে কোলাঘাট, সর্বত্র ছোট ব্যবসায়ীরাও বেশি করে মজুত করছেন সবুজ আবির। রায়গঞ্জের বন্দর বাজারের মাধব সরকার গত বছরের চাইতে ২২ কিলোগ্রাম বেশি আবির মজুত করবেন। কোলাঘাট বাজারের দশকর্মা ভাণ্ডারের সাগর দাস এ বার বাড়তি অর্ডার দিয়েছেন ২০ কিলোগ্রাম। সবটাই সবুজ।

তবে কি অন্য রঙেরা বাদ? রায়গঞ্জের মোহনবাটি বাজারে কিছু ব্যবসায়ী গেরুয়া আবির বিক্রি করছেন। আর মালবাজারের একটি নাচের স্কুলের ছাত্রীরা দোলের প্রভাতফেরিতে ব্যবহার করবে না লাল-সবুজ। তাদের কথায়, “নিরপেক্ষ থাকতে কেবল নীল আর হলুদ রং আনব সকলে।”

abir vote
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy