লোকসভা ভোটের সময় সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। কিন্তু আপাতত সংঘাতের রাস্তায় হাঁটতে চায় না তৃণমূল ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কেন্দ্রে বিজেপি আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দার্জিলিং সফরের প্রাক্কালে দু-দলের নেতারাই এমন বার্তা দিচ্ছেন।
আজ, বুধবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর দার্জিলিঙে পৌঁছনোর কথা। ম্যাল চৌরাস্তায় তাঁর প্রশাসনিক সভাও করার কথা। দু’বছর আগে ম্যালের এমনই এক সভায় গোর্খাল্যান্ডের দাবি ওঠায় তৃণমূল-মোর্চা সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। তার পরে সম্পর্ক নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গেলেও আগের অবস্থা কখনওই ফেরেনি। লোকসভা ভোটে সরাসরি একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছে তারা। এ বার দু’পক্ষই বাড়তি সতর্ক। আজ মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা। তামাঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদও চালু হতে পারে। এই ধরনের পর্ষদের বিরোধিতা করেছিল মোর্চা। তবে এ বার তারা উচ্চবাচ্য করেনি।
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য ওই অনুষ্ঠানের কোনও সরকারি আমন্ত্রণ জিটিএ সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ বা কোনও নেতার কাছে পৌঁছয়নি। মোর্চা নেতা বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “সরকারি ভাবে ডাকলে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা নিশ্চয়ই ভাবব।” তৃণমূলের পাহাড় কমিটির সভাপতি রাজেন মুখিয়ার দাবি, “পাহাড়কে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁরা দলমত নির্বিশেষে উন্নয়নে সামিল হবেন বলে আশা করি।” সূত্রের খবর, জিটিএ-র পদাধিকারীদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মন্ত্রী গৌতম দেবই মোর্চা নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন।
শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে তাই মোর্চা নেতাদের থাকারই সম্ভাবনা। অনেকের মতে, দার্জিলিঙের উন্নয়নে রাজ্যকে এড়িয়ে কেন্দ্রের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়, এটা বুঝেই গুরুঙ্গরা মেপে পা ফেলছেন। তাই মাঝেমধ্যে মমতার সমালোচনা করলেও ‘পাহাড়ে স্বাগত’ জানানোর প্রস্তুতিও নিয়েছেন তাঁরা। মোর্চা নেতা জ্যোতিকুমার রাইয়ের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত। তবে আশা করি, প্রশাসনিক সভার আড়ালে বিভাজনের রাজনীতি হবে না।”
পাহাড়ের তৃণমূল নেতারাও বেশ সংযত। গত লোকসভা ভোটে পাহাড়ের ৩ বিধানসভা কেন্দ্রে ৯০ হাজার ভোট পান তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া। সেই ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতেই পাহাড়ে উন্নয়ন চালু রাখার পক্ষপাতী মমতা। কিন্তু মোর্চার সঙ্গে সংঘাতে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে। যেমন, জিটিএ-কে এড়িয়ে রাজ্যের পক্ষ থেকে দার্জিলিং ম্যালের অদূরে হকারদের পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণার করা হয়। কিন্তু সেই প্রকল্পের প্রস্তাবিত ভবনের নকশা এখনও মোর্চা পরিচালিত পুরসভা অনুমোদন করেনি। ফলে অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতারা। তাঁরাও বলছেন, সংঘাতে না গিয়ে উন্নয়নের ব্যাপারে বোঝাপড়া করে চলতে চান।
সাম্প্রতিক অতীতে মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক উত্তরবঙ্গ সফরে নানা ধরনের বিভ্রাট ঘটায় পুলিশ-প্রশাসনও তটস্থ। মালদহ ও মংপং দু’জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে বাতানুকূল যন্ত্রে আগুন ধরেছে। মাদারিহাট ও মংপংয়ে তাঁকে টানা লোডশেডিংয়ে অন্ধকারে থাকতে হয়। দুই ক্ষেত্রে একাধিক অফিসার সাসপেন্ড হন। ওই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে এ বার পূর্ত ও বিদ্যুৎ দফতরের রাজ্যস্তরের অফিসার, ইঞ্জিনিয়ররা দার্জিলিঙে পৌঁছে গিয়েছেন। চিফ ইঞ্জিনিয়র পর্যায়ের অফিসাররা ‘এসি, ‘রুম হিটার’ ও অন্য বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy