Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
মালদহে গ্রেফতার তিন হকার

মাঝরাতে স্টেশন থেকে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ

মাঝরাতে স্টেশনের সামনে থেকে এক তরুণীকে মুখে কাপড় গুঁজে ছুরি দেখিয়ে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল। সোমবার রাত ১টা নাগাদ মালদহ টাউন স্টেশনের অদূরে একটি স্টেডিয়ামের ওই ঘটনায় তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম মুন্না দাস, সুমন শেখ ও সানোয়ার শেখ। তিনজনই স্টেশন চত্বরে হকারের কাজ করে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৬
Share: Save:

মাঝরাতে স্টেশনের সামনে থেকে এক তরুণীকে মুখে কাপড় গুঁজে ছুরি দেখিয়ে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল। সোমবার রাত ১টা নাগাদ মালদহ টাউন স্টেশনের অদূরে একটি স্টেডিয়ামের ওই ঘটনায় তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম মুন্না দাস, সুমন শেখ ও সানোয়ার শেখ। তিনজনই স্টেশন চত্বরে হকারের কাজ করে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তিনজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার ধৃতদের আদালতে তোলা হবে।” ওই তরুণীকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রের দাবি।

বছর উনিশের ওই তরুণী পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানা এলাকায় তাঁর বাড়ি। সম্প্রতি এলাকার এক যুবক ফুঁসলে সহবাস করলে ওই তরুণী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। যুবকটি বিয়ে করতে রাজি হননি বলে তাঁকে গর্ভপাত করাতে হয়। এর পরে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া হলে তাঁকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলা হয় বলে তিনি দাবি করেছেন। সোমবার তিনি জঙ্গিপুর থেকে ট্রেনে উঠে রাত ১২টা নাগাদ মালদহ টাউন স্টেশনে নামেন।

তাঁর অভিযোগ, স্টেশনের বাইরে বার হতেই ছুরি দেখিয়ে, মুখে কাপড় গুঁজে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানায়, ওই তরুণীটি একবার তাঁকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানালেও দ্বিতীয়বার জেরায় জানান, ছোট গাড়িতে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মালদহ টাউন স্টেশনের সামনেই সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

পুলিশের কাছে অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছেন, ওই তিন যুবক তাঁকে স্টেডিয়ামে নিয়ে গিয়ে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে পরপর ধর্ষণ করে। লাগাতার অত্যাচারের জেরে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ভোরে জ্ঞান ফিরলে স্টেশনের সামনে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তরুণীকে কাঁদতে দেখে রেল পুলিশ যায়। অত্যাচারের কথা জানতে পেরে রেল পুলিশ ইংরেজবাজার থানায় খবর দেয়। ইংরেজবাজার থানার আইসি দিলীপ কর্মকার ওই তরুণীর অভিযোগ শুনে তা নথিভুক্ত করান। এর পরে পুলিশ তাঁকে নিয়ে স্টেশনে গেলে সেখানেই মুন্না দাস নামে এক হকারকে সনাক্ত করেন ওই তরুণী। পুলিশ মুন্নাকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে অন্য দুজনকে পুলিশ ধরেছে।

মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ওই তরুণীর বাবা অন্যের জমিতে মজুরি করেন। সপ্তম শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করার পর ওই তরুণী পড়াশোনা ছেড়ে দেন। ওই তরুণীর মা বলেন, “আমি আর আমার স্বামী পরের জমিতে ধান পোঁতার কাজে যাবো বলে খুব তাড়াহুড়ো করছিলাম। তখন মেয়ে টিভি দেখছিল বলে বকাবকি করেছিলাম। মেয়ে তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে অভিমানে বাড়ি থেকে চলে যায়।”

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে চলে যায় ওই তরুণী। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ভাইয়ের ফোনে ফোন করে ওই তরুণী। ওই তরুণীর ভাই বলেন, “দিদি তখন ট্রেনে ছিল। আমাকে ফোন করে ‘আমি এক দিদির সঙ্গে যাচ্ছি’ বলার পরেই ফোন কেটে যায়। পরে ওই ফোনে চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই আর দিদির সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। পরে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মালদহ ইংলিশবাজার থানার পুলিশ ফোন করে আমাদের মালদহ যাওয়ার কথা বলে।” প্রতিবেশীরা জানান, কিরীটেশ্বরী থেকে কয়েক কিমি দূরে ডাহাপাড়া স্টেশন। পায়ে হেঁটে বা পরিচিত কারও সাইকেলে চড়ে ডাহাপাড়া স্টেশনে পৌঁছে, সেখান থেকেই সম্ভবত ট্রেনে মালদহ পৌঁছন ওই তরুণী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

maldah berhampur gangrape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE