Advertisement
E-Paper

মৃত্যু-স্রোত রুখতে বিশেষ পুলিশ

দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পড়ে রয়েছেন এক মোটরবাইক-আরোহী। পাশ দিয়ে হু হু করে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। কারও থামার সময় নেই, ইচ্ছেও নেই। রাজ্য ও জাতীয় সড়কে এই ঘটনা আকছার হয়। সংবাদের শিরোনামও হয়। অধিকাংশ ঘটনার পরিণতি চরম বিয়োগান্ত। দীর্ঘক্ষণ বাদে পুলিশ এসে আহতকে যখন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে, তখন শেষ অবস্থা। ডাক্তারেরা জানিয়ে দিয়েছেন, আর একটু আগে আনলে প্রাণটা বাঁচত।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৫

দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পড়ে রয়েছেন এক মোটরবাইক-আরোহী। পাশ দিয়ে হু হু করে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। কারও থামার সময় নেই, ইচ্ছেও নেই।

রাজ্য ও জাতীয় সড়কে এই ঘটনা আকছার হয়। সংবাদের শিরোনামও হয়। অধিকাংশ ঘটনার পরিণতি চরম বিয়োগান্ত। দীর্ঘক্ষণ বাদে পুলিশ এসে আহতকে যখন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে, তখন শেষ অবস্থা। ডাক্তারেরা জানিয়ে দিয়েছেন, আর একটু আগে আনলে প্রাণটা বাঁচত।

এই চেনা ছবিটা বদলাতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। নবান্নের খবর: সড়কে দুর্ঘটনার হিড়িক ও অসহায় মৃত্যু ঠেকানোর লক্ষ্যে রাজ্য পুলিশে নতুন বিভাগ চালু করা হচ্ছে, যার নাম হবে ‘হাইওয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ।’ রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশের অধীনস্থ বাহিনীটি রাজ্য ও জাতীয় সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্তভারও থাকবে তাদের হাতে। চলতি বছরের মাঝামাঝি হাইওয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ কাজে নামবে।

নতুন পরিকল্পনার প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশেরই একাংশের বক্তব্য: কলকাতা বাদ দিলে জেলা ও শহরতলিতে রাজ্য পুলিশের আওতাধীন এলাকায় ট্র্যাফিক পুলিশের দশা বেহাল। প্রতিটি জেলায় নাম-কা-ওয়াস্তে ‘হাইওয়ে পুলিশ’ আছে বটে, কিন্তু তার না আছে পরিকাঠামো, না লোকবল। এ হেন অবস্থায় ‘হাইওয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ’ কতটা কার্যকরী হবে, কর্তাদের অনেকে তা নিয়ে সন্দিহান। কিন্তু তা হলে নতুন বাহিনী তৈরির কথা আদৌ ভাবা হল কেন? রাজ্য পুলিশের সদর দফতর ভবানী ভবন সূত্রের ইঙ্গিত, এখানে কিছুটা হলেও দিল্লির চাপ কাজ করেছে। রাজ্য সড়ক ও রাজ্যের আওতায় থাকা জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা রুখতে জাতীয় সড়ক সুরক্ষা আয়োগ-ই প্রথম হাইওয়ে ট্র্যাফিক পুলিশবাহিনী গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই মতো রাজ্য সরকার রূপরেখা করেছে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর আগে কেন্দ্রের সুপারিশ মেনে স্পেশ্যাল ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন (এসআইআরবি) গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব হল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে পরিস্থিতি মোকাবিলা।

পুলিশি তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ১৫টি রাজ্য সড়কের দৈর্ঘ্য চার হাজার কিলোমিটার। ২৭টি জাতীয় সড়কও রয়েছে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারের। রাস্তাগুলোয় বছরে প্রায় ১২ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে। মারা যান সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। “অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারণ বেপরোয়া ড্রাইভিং। রাজ্য সড়ক বা জাতীয় সড়কে নজরদারি নেই। তাই নতুন বাহিনী বানানোর সিদ্ধান্ত।” মন্তব্য রাজ্য পুলিশের এক কর্তার।

ঘটনা হল, বর্তমানে প্রতি জেলায় ‘হাইওয়ে পুলিশ’ নামক একটি ট্র্যাফিক বিভাগ রয়েছে, যার মাথায় রয়েছেন এক-এক জন ডিএসপি। পুলিশের একাংশের মতে, ওদের যা পরিকাঠামো দেওয়া হয়, তাতে রাস্তায় লাঠি হাতে নধিরাম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকে না। দুর্ঘটনা ঘটলে থানাই তদন্ত করে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে থানাগুলো সারাক্ষণ এত ব্যস্ত যে, সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তে গুরুত্ব দেওয়ার অবকাশ নেই। অনেক ক্ষেত্রে মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বা বিমার টাকা পেতে নাজেহাল হতে হয়।

এই সমস্যা সুরাহার লক্ষ্যে হাইওয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ গঠনের পরিকল্পনা। ঠিক হয়েছে, নতুন বাহিনী গড়া হবে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের আদলে। কলকাতা পুলিশে যান শাসনের জন্য যেমন ‘ট্র্যাফিক গার্ড’ আছে, তেমন হাইওয়ে ট্র্যাফিকেও ৫০-৬০ কিমি রাস্তা নিয়ে আলাদা শাখা থাকবে। পাশাপাশি জাতীয় ও রাজ্য সড়কে ঘটা প্রতিটি দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য থাকবে স্বতন্ত্র বিভাগ ও পরিকাঠামো। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র কলকাতা পুলিশেই ট্রমা কেয়ার রয়েছে। নতুন বাহিনীতেও থাকবে।” নবান্নের খবর, জাতীয় সড়ক সুরক্ষা আয়োগের প্রস্তাব মতো বাহিনী গড়া হচ্ছে, তবে তার পরিকাঠামো তৈরি করবে রাজ্য প্রশাসন।

accident shibaji de sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy