Advertisement
E-Paper

মাথা-বড় ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার প্রতীক্ষায় মা

তার বয়সের অন্য বাচ্চারা যখন খেলে-দৌড়ে বেড়ায়, তখন বিছানা থেকে উঠে আকাশটাই দেখা হয় না বছর তিনেকের অরিত্রের। কারণ, তার শরীরের অর্ধেকের বেশি ওজন তার মাথার। যত দিন যাচ্ছে, মাথা আরও বড় হচ্ছে!

নিজস্ব সংবাদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২০
হাইড্রোসেফালাস’ রোগে আক্রান্ত শিশু। — নিজস্ব চিত্র

হাইড্রোসেফালাস’ রোগে আক্রান্ত শিশু। — নিজস্ব চিত্র

তার বয়সের অন্য বাচ্চারা যখন খেলে-দৌড়ে বেড়ায়, তখন বিছানা থেকে উঠে আকাশটাই দেখা হয় না বছর তিনেকের অরিত্রের। কারণ, তার শরীরের অর্ধেকের বেশি ওজন তার মাথার। যত দিন যাচ্ছে, মাথা আরও বড় হচ্ছে!

অরিত্র ‘হাইড্রোসেফালাস’ রোগে আক্রান্ত। এই রোগে মস্তিষ্কে জল জমতে থাকে এবং তার চাপে মাথা ক্রমশ বড় হতে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যুও হয়। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের নিউরো-সার্জেন সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, হাইড্রোসেফালাসের চিকিৎসা অবশ্যই হয়। তবে দেখতে হবে, রোগী কী অবস্থায় আছে। প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারও হতে পারে। বিশেষ পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের জল পেটের মধ্যেও পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতির নাম ‘ভেনট্রিকিউলোপেরিফোনিয়াম’। এই পদ্ধতি সফল না হলে পরের ধাপ হচ্ছে ‘ইটিভি’। এই বিশেষ ধরনের অস্ত্রোপচারে মস্তিষ্কের কোনও একটি বিশেষ অংশে জমে থাকা জল সারা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে অথবা সেই জল বাইরেও বের করা যেতে পারে।

নিউরো-সার্জেন অমিতাভ চন্দের মতে, জন্মের সময় থেকেই অনেক শিশুর এটা হতে পারে। বা পরে মেনিনজাইটিস বা টিউমার থেকেও এই অবস্থা হয়। মস্তিষ্ক কতটা নষ্ট হয়েছে বা কতটা সুস্থ মস্তিষ্ক অবশিষ্ট রয়েছে তার উপরে রোগীর ভাল হওয়া নির্ভর করে। তিনি জানান, এখন চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মস্তিষ্ক থেকে জল বার হওয়ার একটা রাস্তা তৈরি করে দেন। এই পদ্ধতিকে ‘এন্ডোস্কোপিক থার্ড ভেন্ট্রিকুলোস্টোমি’ বলা হয়।

অরিত্রের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা অবশ্য এখনও কোনও আশা দেননি। বাবা-মা তাকে নিয়ে যত বারই চিকিৎসকদের কাছে গিয়েছেন, প্রতি বারই শুনতে হয়েছে যে, বড় স্বল্পায়ু তাদের ফুটফুটে ছেলেটি। অরিত্রের বাবা, চাকদহের মদনপুর মার্লোডাঙার বাসিন্দা অজিত দাস পেশায় কাঠের মিস্ত্রি। চাকদহ রোডের ধারে কলোনিতে একচিলতে উঠোন ঘেরা টিনের ছাউনির এক কামরার ঘর। বড় মেয়ে অর্পিতার বয়স ১১।

অজিতবাবুর স্ত্রী কণিকা জানালেন, জন্ম থেকেই মাথা অস্বাভাবিক বড় ছিল অরিত্রের। তাই তাকে ‘বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি’তে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই। ছেলে বেশি দিন বাঁচবে না। এখনও সেই কথা বলতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন কণিকাদেবী। আঁচলে মুখ মুছে বলেন, ‘‘বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে আমাদের।’’

কিছুদিন আগে একটি সংবাদপত্রে অজিতবাবুরা দেখেন, একই রোগে আক্রান্ত এক শিশুকন্যার চিকিৎসা হয়েছে গুড়গাঁওয়ে। খুলি ফুটো করে জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার মাথার ভিতরে জমে থাকা জলীয় পদার্থ অনেকটাই বের করা গিয়েছে। তাতে তার মাথার আয়তন কমেছে ৩০ সেন্টিমিটার। তবে চিকিৎসা সম্ভব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন অজিতবাবুরা। দু’লক্ষ টাকা খরচ করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। কণিকাদেবী বললেন, ‘‘ছেলেকে চোখের সামনে মরতে দেখতে হবে? শুনছি, এখন এখানে বিনা পয়সায় সব চিকিৎসা হয়। আমার ছেলের জন্য কি কোনও দরজা খোলা নেই?’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy