Advertisement
E-Paper

মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে, ভেঙে পড়লেন কুণাল

আদালতে ঢোকার পথে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন সারদা-কাণ্ডে ধৃত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। চিৎকার করে বলতে থাকেন, সিবিআই তদন্তের ক্ষেত্রে যেন রাজনৈতিক বোঝাপড়া না হয়। তারপর আদালত কক্ষে ঢুকে বিচারকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শনিবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে কাঁদতে কাঁদতে কুণাল অভিযোগ করেন, তাঁর মুখ বন্ধ রাখার জন্য নানা মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁকে জেলে রাখা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৪ ০২:১৮
জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করানোর আগে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি কুনাল ঘোষের। শনিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জলপাইগুড়ি আদালতে হাজির করানোর আগে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি কুনাল ঘোষের। শনিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

আদালতে ঢোকার পথে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন সারদা-কাণ্ডে ধৃত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। চিৎকার করে বলতে থাকেন, সিবিআই তদন্তের ক্ষেত্রে যেন রাজনৈতিক বোঝাপড়া না হয়। তারপর আদালত কক্ষে ঢুকে বিচারকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শনিবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে কাঁদতে কাঁদতে কুণাল অভিযোগ করেন, তাঁর মুখ বন্ধ রাখার জন্য নানা মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁকে জেলে রাখা হচ্ছে। বিচারক অবশ্য তাঁর জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেননি।

গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মামলায় কুণালবাবুকে নানা আদলতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিবারই পুলিশ ভ্যান থেকে আদালতে ঢোকার পথে সংবাদমাধ্যমের সামনে চিৎকার করে নিজের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদ করেন কুণাল। এ দিন আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে কুণালকে বলতে শোনা যায়, “আমি আপনাকে লিখিতভাবে কিছু কথা জানাতে চেয়ে প্রিজনার্স পিটিশন ফর্ম চেয়েছিলাম। কিন্তু দমদম সেন্ট্রাল জেল কর্তারা সেটা দেননি।”

বিচারক অবাক হয়ে জানতে চান, সেটা কেন দেওয়া হবে না? বিচারক তাঁকে জানান, ওই ফর্ম পাওয়ার অধিকার বন্দিদের আছে। তিনি কুণালকে জেল কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। ওই সময় কুণাল জানান, কয়েক বার জেল কর্তাদের জানিয়েও লাভ হয়নি। এ বিষয়ে দমদম জেলে প্রশ্ন করা হলে এক কর্তা বলেন, “উনি প্রচুর চিঠি লিখছেন। কত বার আর ফর্ম দেব?”

এ দিন কুণাল বিচারকের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশ ১২টি মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। প্রতিটিতে তিনি জামিন পেয়েছেন। কুণালের অভিযোগ, ফের ১ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা তছরুপের মামলা রুজু করা হয়েছে। অথচ সংস্থার মিডিয়া কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে গেলে তিনি সুদীপ্ত সেনকে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ দেন বলেও দাবি করেন কুণাল। তিনি বলেন, “আমি ওই টাকা ফেরতের জন্য শ্যামল সেন কমিটির কাছে আবেদন করেছি।”

এর পরেই কুণাল কান্নায় ভেঙে পড়ে বলতে থাকেন, “হুজুর আইনের প্যাঁচে পড়ে জেলে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু বাড়ির এলাকার মানুষ ভাবছে, বিরাট অপরাধ করে জেল খাটছি। এত বড় অসম্মানের বোঝা আর বইতে পারছি না।” পাশে দাঁড়ান সহ-অভিযুক্ত সোমনাথ দত্ত কুণালকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। নিজেকে কোন মতে সামলে কুণাল বলতে থাকেন, “আমি তো পালাইনি। যখন পুলিশ ডেকেছে, হাজির হয়েছি। তবু কেন এত হেনস্থা? আমাকে জামিন দেওয়ার ব্যবস্থা করুন হুজুর।” বিচারক জানতে চান, সব মামলা তো সিবিআই-এর হেফাজতে চলে যাবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের বক্তব্য কী? কুণাল বলেন, “আমিও চাই সব মামলা সিবিআই দেখুক নিরপেক্ষ ভাবে সমস্ত দুর্নীতি বাইরে আসুক।”

গত ১৩ এপ্রিল ভক্তিনগর থানায় ৪০৬/ ১২০ (বি)/ ৪২০ ধারায় রুজু করা নতুন একটি মামলায় শনিবার সোমনাথ দত্ত এবং কুণালকে জলপাইগুড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হয়। শুক্রবার রাতে আদালতের এক ল-ক্লার্কের মৃত্যুর কারণে এদিন আইনজীবীদের কেউ কাজে যোগ দেননি। আদালত হাজতে পৌঁছে কুণাল নিজে তাঁর বক্তব্য জানানোর জন্য বিচারকের কাছে অনুমতি চান। বেলা আড়াইটা নাগাদ বিচারক শান্তনু দত্ত দুই অভিযুুক্তকে ডেকে নেন। সরকারি আইনজীবী না থাকায় বিচারক নিজেই প্রশ্ন করেন। প্রায় ২৫ মিনিট সওয়াল জবাবের পর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়ে যায়। বিচারক কেস ডায়েরি চেয়ে পাঠান। দ’ুজনকেই এদিন দমদম পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আগামী ১৩ জুন ফের ওই মামলা আদালতে উঠবে।

এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ কুণাল ও সোমনাথকে ভক্তিনগর থানার পুলিশ জলপাইগুড়ি আদালত চত্বরে নিয়ে পৌঁছয়। পুলিশ ভ্যান থেকে নেমেই কুণাল চিৎকার করে বলতে শুরু করেন, “সুপ্রিম কোর্ট সারদা মামলার তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার পরেও রাজ্য পুলিশ নতুন করে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে হেনস্থা করছে। কোথাও আমার বক্তব্য রেকর্ড করা হচ্ছে না।” সেই সময়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশকর্মীরা তাঁকে টেনে হাজতে ঢোকাতে চেষ্টা করলে তিনি বাধা দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, “কেন্দ্রের নতুন সরকারের কাছে আমার একটাই আবেদন, সারদার মামলা নিয়ে সিবিআই তদন্তের ক্ষেত্রে যেন রাজনৈতিক বোঝাপড়া না হয়।”

saroda kunal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy