Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
প্রশ্ন আলোচনায়

মেয়ের অধিকারের লড়াইয়ে পুরুষ কোথায়

সমাজে ‘পুরুষ’ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা কী রকম? তার জন্য কোন বাধ্যবাধকতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের? সমাজনির্মিত ‘পৌরুষ’ না থাকলে, কী ভাবে হেনস্থা হতে হয়? সমাজ কী ভাবে একজনের উপর চাপিয়ে দেয় পৌরুষের ধারণা, তাকে বাধ্য করে সেই অনুযায়ী চলতে, সে সব প্রশ্ন নিয়েই সম্প্রতি দু’দিন ধরে আলোচনা ও কর্মশালার আয়োজন করেছিল পাঁচটি অ-সরকারি সংস্থা, স্বয়ম, কলকাতা রিস্তা, এবং আলাপ, সংযোগ ও ঝাড়খণ্ডের ‘ফোরাম টু এনগেজ মেন’।

রূপসা রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

সমাজে ‘পুরুষ’ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা কী রকম? তার জন্য কোন বাধ্যবাধকতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের? সমাজনির্মিত ‘পৌরুষ’ না থাকলে, কী ভাবে হেনস্থা হতে হয়?

সমাজ কী ভাবে একজনের উপর চাপিয়ে দেয় পৌরুষের ধারণা, তাকে বাধ্য করে সেই অনুযায়ী চলতে, সে সব প্রশ্ন নিয়েই সম্প্রতি দু’দিন ধরে আলোচনা ও কর্মশালার আয়োজন করেছিল পাঁচটি অ-সরকারি সংস্থা, স্বয়ম, কলকাতা রিস্তা, এবং আলাপ, সংযোগ ও ঝাড়খণ্ডের ‘ফোরাম টু এনগেজ মেন’। মূল বিষয় ছিল, মেয়েদের উপর হিংসা বন্ধ করতে, সচেতনতা বাড়াতে পুরুষদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন তাঁদের? তাঁদের সঙ্গে কাজ করেই বা পুরুষদের কেমন অভিজ্ঞতা? ঝাড়খন্ড, বিহার, ওড়িশা থেকেও বিভিন্ন প্রতিনিধিরা যোগ দেন এই কর্মশালায়। এখান থেকে উঠে আসা প্রশ্নগুলি নিয়ে নভেম্বরে দিল্লিতে একটি জাতীয়স্তরের কর্মশালায় যোগ দিতে যাচ্ছে এই পাঁচ সংস্থা।

লিঙ্গসমতার জন্য বিভিন্ন স্তরের লড়াইয়ে পুরুষদের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা ও কী ভাবে তা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনাই ছিল প্রথম দিনের বিষয়। তার পরের দিন, পৌরুষ, যৌনতা ও আত্মপরিচয় সম্পর্কিত কর্মশালা। দেখানো হয়েছে, রাহুল রায়ের সিনেমা ‘হোয়েন থ্রি ফ্রেন্ডস মিট’ যেখানে চার বন্ধু বেড়ে ওঠার গল্প বলে পরস্পরকে। আর সেখানেই ধরা পড়ে যায়, ছোট থেকে কী কী অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাঁদের।

সেখানে উঠে আসে যৌনপরিচয়ের সঙ্গে আত্মপরিচয়ের বিরোধ ও সম্পর্কের প্রশ্ন, ছেলেদের ছেলে হয়ে ওঠার প্রশ্ন। অনেকেরই অভিজ্ঞতা বলে, ‘সংজ্ঞা’ অনুযায়ী পুরুষ না হতে পারলে, সমাজে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তাদের। তাদের উপর মেয়েলি তকমা এঁটে দেওয়া হয়েছে, ফলে তাঁরা হয়ে উঠেছেন উপহাসের পাত্র। আর যাঁরা রূপান্তরকামী, তাঁদের সামাজিক হেনস্থার পরিমাণ তত বেশি। এমনিতেই রূপান্তরকামীরা এখনও সমাজের কাছে ‘অস্বাভাবিক’ অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকেন। ‘কলকাতা রিস্তা’ সংস্থার সদস্য, রূপান্তরকামী ডক্টর সন্তোষ গিরির কথায়, “এ বছর রূপান্তরকামীদের নিজস্ব পরিচিতিতেই ভোট দেওয়ার অধিকার সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সমাজে তার ছাপ পড়েনি।” ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় সন্তোষের। জানালেন, সঠিক পুরুষ না হওয়ার জন্য মাধ্যমিক পাশ করার পরে বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। ছোটবেলায় স্কুলে দুষ্টুমি করলে অন্য ছাত্রদের মারার জন্য যেখানে স্কেল ব্যবহার করতেন শিক্ষক, তাঁর জন্য শাস্তির ধরন ছিল অন্য। তাঁর পেটে খামচে দিতেন শিক্ষক। যথাযথ ভাবে পুরুষের সাজ না করায় বাড়িতে আসতে বারণ করে দিয়েছিলেন দিদি। আর সম্প্রতি মাকে নিয়ে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার পরে সেখানে তাঁকে ঢুকতে দেননি মন্দির কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের রায় অবশ্য ততদিনে বেরিয়ে গিয়েছে।

আরও খারাপ অভিজ্ঞতা রূপান্তরকামী মধুজা নন্দীর। তাঁকে ‘স্বাভাবিক’ করার জন্য বাড়ির লোক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ‘সবক’ শেখানোর জন্য চিকিৎসকেরা ইলেকট্রিক শক প্রয়োগ করেছিলেন তাঁর উপর। সন্তোষ জানান, কাদাপাড়া এলাকায় তাঁদের সংস্থা কাজ করে। সেখানে বিভিন্ন পুজো পার্বণে তাঁরা যেমন সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি নেন, তেমনই প্রাত্যহিক কাজকর্মে তাঁরা স্থানীয় ক্লাবগুলির সদস্যদের পাশে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সন্তোষের কথায়, “তাতে দূরত্ব অনেকটাই কমে।” আবার অনেকের কাছ থেকে বিদ্রূপ, কটূক্তি শুনতে হয়। সন্তোষের ব্যাখ্যা, “এই বিষয়টাকে সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতে হবে। যে পুরুষরা মেয়েদের সঙ্গেই সংবেদনশীল ব্যবহার করতে পারেন না, তাঁরা রূপান্তরকামীদের কী চোখে দেখবেন?”

‘এবং আলাপ’ সংস্থাটির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। কর্মশালায় তাঁদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া জানালেন, রাজ্যে মেয়েদের উপর ক্রমশ বেড়ে চলা হিংসা নিয়ে তাঁদের মতো ভাবছেন ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে অনেকেই। তাঁরা হয়তো সময়ের অভাবে তেমন ভাবে সক্রিয় হতে পারছেন না। কিন্তু মেয়েদের উপর হিংসার ঘটনা নিয়ে চুপ করে থাকতে পারছেন না কেউই। সংস্থার পক্ষে শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত বলেন, “কর্মশালা থেকে ফিরে গিয়ে যদি এ বার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মস্থলেও এই বিষয়গুলি নিয়ে মতামত, দৈনন্দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার ছোট ছোট পরিসর তৈরি করা যায়, তাহলে হয়তো প্রাত্যহিকতায় তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

আশ্চর্য প্রদীপ নেই, বিজয়ায় বিমান-বার্তা

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

প্রতি বারই নিজের দফতরে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেন তিনি। বামফ্রন্টের প্রবীণতম নেতা অশোক ঘোষ এ বার সেই আসরেই ডেকে নিয়েছিলেন গোটা বামফ্রন্টকে। বিজয়ার পাশাপাশিই উপলক্ষ ফরওয়ার্ড ব্লকের নিহত নেতা হেমন্ত বসুর জন্মদিন পালন। নবতিপর অশোকবাবুর ডাকে সাড়া দিয়ে রবিবার ফ ব দফতরের অনুষ্ঠানে হাজির হন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের মদন ঘোষ, রবীন দেব, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, প্রবীর দেব, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, আরসিপিআইয়ের মনোজ বাইনের মতো সব শরিক দলের নেতারা। অশোকবাবু ফের দাবি করেছেন, হেমন্তবাবুর হত্যা-রহস্য উন্মোচিত হোক। এই আসরেই বিমানবাবু বলেছেন, “রাজ্য জুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকে পরিবর্তন করার জন্য আলাদিনের কোনও আশ্চর্য প্রদীপ আমাদের হাতে নেই! অনেক মানুষ প্রতিবাদ করছেন, আমাদের কর্মী-সমর্থকেরাও আসছেন। কিন্তু মানুষকে পাশে পেতে গেলে আমাদের আরও বেশি কর্মী সমাবেশ করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE