Advertisement
E-Paper

মদন কেবিনে আর তিনি ফাটকে কেন, লিখিত নালিশ কুণালের

তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ। এক সারদা মামলাতেই গ্রেফতার হয়ে জেল হেফাজতে রয়েছেন দু’জনে। অথচ পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র সরকারি হাসপাতালের বাতানুকূল ভিআইপি কেবিনে দিন কাটাচ্ছেন, আর তিনি কারা-ফাটকে। দু’জনের বন্দিদশার কেন এই আকাশপাতাল ফারাক— বুধবার সিবিআই আদালতের বিচারকের কাছে চিঠি দিয়ে তা জানতে চাইলেন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৩

তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ। এক সারদা মামলাতেই গ্রেফতার হয়ে জেল হেফাজতে রয়েছেন দু’জনে। অথচ পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র সরকারি হাসপাতালের বাতানুকূল ভিআইপি কেবিনে দিন কাটাচ্ছেন, আর তিনি কারা-ফাটকে। দু’জনের বন্দিদশার কেন এই আকাশপাতাল ফারাক— বুধবার সিবিআই আদালতের বিচারকের কাছে চিঠি দিয়ে তা জানতে চাইলেন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ।

ঘটনাচক্রে, মন্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার দিনক্ষণ ঠিক করতে এ দিনই আলোচনায় বসার কথা ছিল মেডিক্যাল বোর্ডের। কিন্তু এ দিন ওই বোর্ড বসেনি। এ ব্যাপারে এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের ব্যাখ্যা— “মন্ত্রীর হল্টার টেস্টের রিপোর্ট পেতে রাত হয়ে যাবে বলেই এ দিন আর মেডিক্যাল বোর্ড বসল না।” আজ, বৃহস্পতিবার বড়দিনের ছুটি। তাই মন্ত্রী কবে হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবেন তা শুক্রবারের আগে জানা যাবে না বলে প্রদীপবাবু জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের এই কাজের সমালোচনা করেছেন হাসপাতালের চিকিত্‌সকদেরই একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, মন্ত্রীকে আরও বেশি দিন হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করতেই নানা অজুহাত খাড়া করে মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মাত্র সপ্তাহ দু’তিন আগে সিবিআইয়ের নোটিস পাওয়ার পরই একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে এক রকম জোর করেই ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন মদন। সেখান থেকে হঠাত্‌ই তিনি এই এসএসকেএমে ভর্তি হতে চলে আসেন। সে বারও দীর্ঘদিন তাঁকে ভর্তি রেখে শ’খানেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও মন্ত্রীর তেমন কোনও বড় ব্যামো ধরতে পারেননি চিকিত্‌সকেরা, যার জন্য তাঁর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকা দরকার। এ বার আবার সেই এসএসকেএমেই ভর্তি করা হয়েছে মদনকে, যে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতিও তিনিই। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরাও আশ্বস্ত হয়ে বলছেন, হোক না জেল হেফাজত, হাসপাতালে ঘরের স্বাচ্ছন্দেই থাকতে পারছেন মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ এই মন্ত্রী।

গত সোমবার সিবিআই আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের এজলাসে দাঁড়িয়ে মদনের সঙ্গে তাঁর বন্দিদশার বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছিলেন কুণাল। তৃণমূলের এই সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ আদালতে বলেছিলেন, “তিনি তো হেটেলে রয়েছেন, ফোন করছেন! মন্ত্রীর জন্য এক রকম ব্যবস্থা, আর বাকিদের জন্য অন্য ব্যবস্থা হবে কেন?” সেই সময়ে বিচারক তাঁকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাতে বলেছিলেন। এ দিন প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে কুণাল এই লিখিত অভিযোগটিই আদালতে পাঠান।

অভিযোগে কী লিখেছেন কুণাল?

কুণালের অভিযোগ, তিনি জামিন না পেয়ে ফাটকে দিন কাটাচ্ছেন। সপ্তাহে এক দিন পরিবারের এক জনকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। অথচ গ্রেফতার হয়ে জেল হেফাজতে থাকা রাজ্যের এক মন্ত্রী বিনা বাধায় দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। দেখা করতে পারছেন তাঁর পরিচিত ও আত্মীয়দের সঙ্গেও। কুণাল অভিযোগ করেছেন চিকিত্‌সকদের ভূমিকা নিয়েও। তাঁর দাবি, মন্ত্রীর চিকিত্‌সার দায়িত্ব যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে জড়িত ধরে নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ সেই চিকিত্‌সকদের পরামর্শ মতোই রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এসএসকেএম হাসাপাতালের বাতানুকূল কেবিনে বিশেষ সুবিধা দিয়ে রাখা হচ্ছে। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী সারদা মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে আদালতে তাঁর আইনজীবীরা জেলে তাঁকে বিশেষ কিছু সুবিধা দেওয়ার আবেদন জানান। আদালতের নির্দেশে সেই সুবিধা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী পাবেন। কিন্তু সাংসদ হিসেবে কুণাল কেন সেই সব সুবিধা পাবেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ।

আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের কথায়, একই মামলায় একই অভিযোগে অভিযুক্ত জেল হেফাজতে থাকা দুই বন্দির ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম হতে পারে না। তিনি বলেন, “জেলে তো কুণালকে ব্যক্তিগত লেখাও লিখতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ কুণালকে এখন বিচারাধীন বন্দিও বলা যাবে না। কেন না, তাঁর বিচারই শুরু হয়নি। এক জন বন্দি হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী তাঁর বেশ কিছু সুবিধা প্রাপ্য। জেলে থাকার অর্থ এই নয় যে, কারও মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র ইচ্ছে মতো কেড়ে নিতে পারে।”

এ নিয়ে কুণাল কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলাও দায়ের করেছেন বলে জানান অরুণাভবাবু।

madan mitra saradha kunal complaint
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy