Advertisement
E-Paper

মনে হচ্ছে তো জরুরি অবস্থা, বলছেন বাবুল

জনপ্রিয় সেই হিন্দি গানের কলিতে থাকা ‘প্যার’ শব্দটা পাল্টে ‘নফরত’ করার এখনও কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাবুল সুপ্রিয় ওরফে সুপ্রিয় বড়াল। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী। প্রথমে মদ্যপ অবস্থায় প্রচারের মিথ্যা অভিযোগে জেরবার হওয়া, তার পর অস্ত্র আইনে আনা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১৪

জনপ্রিয় সেই হিন্দি গানের কলিতে থাকা ‘প্যার’ শব্দটা পাল্টে ‘নফরত’ করার এখনও কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাবুল সুপ্রিয় ওরফে সুপ্রিয় বড়াল। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী। প্রথমে মদ্যপ অবস্থায় প্রচারের মিথ্যা অভিযোগে জেরবার হওয়া, তার পর অস্ত্র আইনে আনা মামলায় অভিযুক্ত হওয়া আর সব শেষে বৃহস্পতিবার রাতে রানিগঞ্জের সার্কেল ইনস্পেক্টরের অফিসে বসে টানা সওয়া দু’ঘণ্টা পুলিশি জেরার মুখে পড়েও ‘ঘৃণা’ শব্দটা আসছে না বাবুলের মনে। কিন্তু একটা বাংলা গানের লাইন সামান্য বদলে গুনগুন করতে ইচ্ছে করছে তাঁর কত কী যে সয়ে যেতে হয় রাজনীতিতে এলে!

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসানসোল লোকসভা আসনে তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করার পরপরই বাবুল জানিয়েছিলেন, রাস্তায় নেমে ভোট চাইতে গিয়ে তাঁর আর্জি হবে, ‘কহো না প্যার হ্যায়।’ আর গত ২০ দিন নানাবিধ অভিজ্ঞতার পর বাবুল দেখছেন, রাজনীতির জগৎটা তাঁকে ব্যথাও দিচ্ছে বিস্তর। তাঁর কথায়, “এক জন শিল্পী হিসেবে আমি খুব ব্যথিত। পুলিশের হাতে হেনস্থার ঘটনা লোকের কাছ থেকে শোনা, খবরের কাগজে পড়া এ সব এক রকম। আর নিজে সেই পুলিশি হেনস্থার মুখোমুখি হওয়া সম্পূর্ণ অন্য রকম অভিজ্ঞতা।”

অভিজ্ঞতাটা কী রকম?

ক্লাস নাইনের পরীক্ষা শেষ করা মেয়ের আবদার মেটাতে শুক্রবার সকালে মুম্বই পৌঁছনো বাবুল জানাচ্ছেন, কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পেয়ে সেই মতো অভিযুক্তের কাছে কিছু জানতে চাওয়াটা এক ব্যাপার। কিন্তু একটার পর একটা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে এবং অভিযুক্তের মুখে নিজেদের ইচ্ছে মতো কথা বসানোর চেষ্টা করে ভয়ের বাতাবরণ তৈরির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ অন্য। গায়কের মতে, এক জন পুলিশ অফিসারের অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে যখন এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়, তখন তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে কতটা ঠিক, সেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। বাবুলের কথায়, “এ তো মনে হচ্ছে, রাজ্যে জরুরি ব্যবস্থা জারি রয়েছে!” রাজনীতির ময়দানে নবাগত এই শিল্পীর বক্তব্য, তিনি সৎ ও স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচনে লড়তে চেয়েছিলেন। “কিন্তু শাসক দলের নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসন পর্যন্ত হাত ধুয়ে পিছনে পড়ে যাবে, সেটা ভাবিনি।” তাঁর দাবি, “আমাকে মুখ্য চরিত্র হিসেবে খাড়া করে তৃণমূল নেতা সেনাপতি মণ্ডল একটা থ্রিলার লিখে ফেললেন! যার ফল ভোগ করতে হল আমাকে।”

আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল অবশ্য বলছেন, “ওঁর (বাবুল সুপ্রিয়) আইনজীবীর সামনেই ওঁকে জেরা করা হয়েছে। যার পুরোটা ভিডিও রেকর্ডিং করা আছে। হেনস্থা করা হয়েছে কি না, তা ওই রেকর্ডিং-ই বলবে।” মূলত যে পুলিশ অফিসার বাবুলকে বৃহস্পতিবার রাতে জেরা করেছেন, রানিগঞ্জের সেই সার্কেল ইনস্পেক্টর তথা ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার বামাপদ দাসের কথায়, “আমি কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।”

শাসক দল তৃণমূলের রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি ও রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সেনাপতি মণ্ডলের অভিযোগ, বাবুল সুপ্রিয়র নেতৃত্বে এক দল হামলাকারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গোলমাল বাধিয়েছিল। বাবুল বলেন, “ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, আমার এক সঙ্গী নাকি বন্দুক উঁচিয়ে গ্রামবাসীদের তাড়া করেছে। কে সেই লোক, আমিও জানতে চাই। পুলিশ কিন্তু তার নাম বলতে পারেনি।”

বিজেপি-র জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার জানান, পুলিশ পুরোদস্তুর প্রশ্নমালা তৈরি করে বাবুল সুপ্রিয়কে জেরা করছিল। বাবুলের নিজের হিসেবে, প্রায় সওয়া দু’ঘণ্টা জেরায় তাঁকে প্রায় ৭০টি প্রশ্ন করা হয়। নির্মলবাবুর অভিযোগ, পুলিশ প্রথমটায় আক্রমণাত্মক ঢঙেই জেরা শুরু করেছিল। নিজেদের মতো করে বাবুলের মুখে কথা বসানোরও চেষ্টা করেছিল পুলিশ। “কিন্তু বাবুল রুখে দাঁড়ানোয় পুলিশ রণে ভঙ্গ দেয়,” বলেন নির্মলবাবু।

বাবুলের মনে হলেও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু মনে করেন না যে রাজ্যে জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি চলছে। তবে তাঁর কথায়, “নিত্য নতুন মিথ্যা মামলা সাজিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি পরিষ্কার রাখার চেষ্টা চলছে।” একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে বিমানবাবুর মন্তব্য, “সরকারের তিন বছর পূর্ণ না হতেই যে সব ঘটনা সামনে এসেছে, তাতে মানুষ ওঁদের চেহারা চিনতে পারছেন। তাই, মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যকে বিপদে ফেলতে চাইছে।”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “বাবুল সুপ্রিয় আমার রাজনৈতিক বিরোধী হতে পারেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অন্যায়।” এই ঘটনাকে রাজ্য প্রশাসনের ‘স্বৈরাচারী মানসিকতা’ বলে অভিহিত করে অধীরবাবু বলেন, “এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর মানসিকতা দায়ী। মুখ্যমন্ত্রী আসলে নির্বাচনে তাঁর দলের যত বেশি অনিশ্চয়তা দেখছেন, তত বেশি স্বৈরাচারী হয়ে উঠছেন।”

অধীরবাবু জানান, হেনস্থা করার জন্য তাঁকেও মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে যে দুই পুলিশ অফিসার তাঁকে জেরায় জেরবার করে দিয়েছিলেন, তাঁদের অবশ্য দোষারোপ করতে নারাজ বাবুল। তাঁর কথায়, “ওই দুই পুলিশ অফিসার ব্যক্তিগত ভাবে খারাপ, সে কথা আমি বলছি না। কিন্তু উপরতলা থেকে চাপ এলে পুলিশকে কত অসহায় ভাবে সেই নির্দেশ কার্যকর করতে হয়, বৃহস্পতিবার রাতে নিজেকে দিয়েই সেটা বুঝলাম।”

বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন যে তৃণমূল নেতা, সেই সেনাপতি মণ্ডল কিন্তু মনে করেন না যে, এ ক্ষেত্রে শাসক দলের কথা মতো পুলিশ কাজ করেছে। তাঁর কথায়, “তা-ই যদি হত, তা হলে পুলিশ দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’টো মামলা না করে একতরফা মামলা করত। আমার বিরুদ্ধেও ছিনতাইয়ের মতো মিথ্যা অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাতে আমাকে জামিন নিতে হয়েছে।”

বাবুল আগাম জামিন নেবেন কি না, সেই ব্যাপারে বিজেপি নেতৃত্ব এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। বিষয়টা দলীয় নেতৃত্বের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন বাবুল। আপাতত ঠিক আছে, মুম্বই থেকে ফিরে সোমবার বিকেল থেকে ফের পুরোদমে প্রচার শুরু করবেন আসানসোল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী।

এত সব ঝড়-ঝাপটার পর কী ভাবছেন বাবুল?

“জেদটা আরও বেড়ে গেল, জানেন। ক’দিনে এক ধাক্কায় অনেক পরিণত হয়ে গেলাম। উৎসাহও বেড়ে গেল। এ বার লড়াই শেষ পর্যন্ত।”

babul supriya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy