Advertisement
E-Paper

রোজ ভ্যালির দাবি মানছে না সেবি

সারদা কেলেঙ্কারির আবহে রাজ্যের আরও একটি লগ্নি সংস্থার সঙ্গে সেবির দ্বৈরথ তুঙ্গে উঠল। গত কাল লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে বলে রোজ ভ্যালিকে যে নির্দেশ দিয়েছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি, তাতে সহারা-কাণ্ডের ছায়াও স্পষ্ট। সেবির নির্দেশে বলা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে লগ্নিকারীদের কাছ থেকে তোলা ২ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে রোজ ভ্যালিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:৫৯

সারদা কেলেঙ্কারির আবহে রাজ্যের আরও একটি লগ্নি সংস্থার সঙ্গে সেবির দ্বৈরথ তুঙ্গে উঠল। গত কাল লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে বলে রোজ ভ্যালিকে যে নির্দেশ দিয়েছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি, তাতে সহারা-কাণ্ডের ছায়াও স্পষ্ট।

সেবির নির্দেশে বলা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে লগ্নিকারীদের কাছ থেকে তোলা ২ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে রোজ ভ্যালিকে। সেই নির্দেশ মেনে টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিলেও আইনি লড়াই জারি রাখছেন রোজ ভ্যালি কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্ট বা সিকিউরিটিজ অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনালে (স্যাট) যাওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা।

একই সঙ্গে রোজ ভ্যালি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ২ হাজার কোটি টাকার বেশির ভাগই ইতিমধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। বাকি রয়েছে আর মাত্র ১৭৫ কোটি টাকার মতো। এই দাবি অবশ্য সেবি কর্তারা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, নিয়ম না মেনে টাকা তোলায় যে ‘আশীর্বাদ’ প্রকল্প বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে যাঁরা টাকা ঢেলেছেন তাঁদের সকলের নাম, ঠিকানা লগ্নির পরিমাণ ইত্যাদি জানতে চাওয়া হয়েছিল সেই ২০১০ সালে। সে জন্য তিন মাস সময় চেয়েছিল রোজ ভ্যালি। কিন্তু এখনও তারা সেই তথ্য দিতে পারেনি। ফলে টাকা ফেরানোর এই দাবি নিয়ে সংশয় রয়েছে। লগ্নিকারীদের যে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে, তা প্রমাণ করতে ব্যাঙ্কের নথি এবং লগ্নিকারীদের থেকে নেওয়া রসিদও জমা দিতে হবে, বলেছে সেবি।

উল্লেখ্য, সেবি যখন সহরাকে লগ্নিকারীদের ২৪ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে বলেছিল, তখন সহারাও দাবি করেছিল আর মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা ফেরত দেওয়া বাকি আছে। কিন্তু সেই দাবি সেবি মানেনি, সুপ্রিম কোর্টও না। এর পরই গত ফেব্রুয়ারির শেষে সহারা কর্তা সুব্রত রায়কে গ্রেফতার করে তিহাড় জেলে পাঠানো হয়। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মতো জামিনের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা দিতে না পারায় এখনও জেলেই রয়েছেন তিনি।

রোজ ভ্যালির সঙ্গে সেবির আইনি যুদ্ধ দীর্ঘদিনের। ২০১১ সালে একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশে সেবি রোজ ভ্যালি রিয়েল এস্টেটস কনস্ট্রাকশন্সকে লগ্নিকারীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। তাদের ‘আশীর্বাদ’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেবি বলে, এটি আসলে ‘কালেক্টিভ ইসভেস্টমেন্ট স্কিম’। এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র রোজ ভ্যালির নেই। রোজ ভ্যালির পাল্টা বক্তব্য, আশীর্বাদ প্রকল্পে জমি বিক্রির জন্য টাকা তোলা হয়েছিল। এটি ‘কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’ নয়। কাজেই বিষয়টি সেবি-র আওতাতেই পড়ে না।

সেবির ২০১১ সালের নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে রোজ ভ্যালি। তার পর থেকেই কখনও সুপ্রিম কোর্ট, কখনও হাইকোর্ট, কখনও আবার স্যাটে সেবির সঙ্গে রোজ ভ্যালির আইনি যুদ্ধ চলেছে। এর মধ্যে সেবির অভিযোগের ভিত্তিতেই ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) রোজ ভ্যালির দফতরে হানা দিয়েছে।

গত ১৮ জুন সেবির তরফে রাজীব কুমার অগ্রবাল ২১ পৃষ্ঠার নির্দেশ জারি করে বলেছেন, ‘আশীর্বাদ’ প্রকল্পে জমি বিক্রির নামে আগাম অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছিল। কিন্তু লগ্নিকারীরা জমি না নিয়ে সুদ-সহ আমানত ফেরত নিতে পারেন, তেমন ব্যবস্থাও ছিল। সে ক্ষেত্রে চড়া হারে সুদ দিচ্ছিল রোজ ভ্যালি। অতএব এই প্রল্প বন্ধ করে লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। সেই অর্থ জোগাড় করতে রোজ ভ্যালি কর্তৃপক্ষ শেয়ার বাজার থেকে টাকা তুলতি পারবেন না। লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত না দিতে পারলে রাজ্য সরকারকে সংস্থার মালিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে রোজ ভ্যালির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কাজও শুরু করবে সেবি।

রোজ ভ্যালির বক্তব্য, যে ‘আশীর্বাদ’ প্রকল্প নিয়ে ২০১০ সালেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ লগ্নিকারীরাই টাকা ফেরত পেয়ে গিয়েছেন। মাত্র ১৭৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া বাকি। যা ফেরত দিতে কোনও অসুবিধাই হবে না। কারণ সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

পশ্চিমবঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কাজকারবার রাজনৈতিক তরজার অন্যতম প্রধান বিষয়। সিপিএম এ জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকেই দায়ী করে। উল্টো দিকে তৃণমূল অভিযোগ করে সিপিএমের আমলেই এই সব সংস্থার বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছিল। সেবির তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ইকনমিক অফেন্সেস ইনভেস্টিগেশন সেল) অভিযোগ জানিয়েছিল রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে। তার ভিত্তিতে সেবি এই সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

rose valley sebi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy