Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রিয়াজদের ধরে চাকরি, মানছেন না আশিস

সুমিত নাহার মৃত্যুর তদন্তে নেমে এ বার তাঁর হোটেলের ম্যানেজার আশিস মান্নার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন পুলিশ অফিসারদের একাংশ। এই ঘটনায় দুই মূল অভিযুক্ত দীপক সাউ এবং রিয়াজ আহমেদের পরিবারের দাবি, আশিস ওই দু’জনের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এবং সেই সুবাদেই তাঁকে সুমিত নাহার হোটেলে চাকরি করে দেন রিয়াজরা। আর এই দাবির সূত্র ধরেই তদন্তকারীদের একাংশ আশিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। হাওড়া কাণ্ডের এক তদন্তকারীর বক্তব্য, “এই মামলার অন্যতম মূল চরিত্র আশিস।

আশিস মান্না

আশিস মান্না

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

সুমিত নাহার মৃত্যুর তদন্তে নেমে এ বার তাঁর হোটেলের ম্যানেজার আশিস মান্নার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন পুলিশ অফিসারদের একাংশ। এই ঘটনায় দুই মূল অভিযুক্ত দীপক সাউ এবং রিয়াজ আহমেদের পরিবারের দাবি, আশিস ওই দু’জনের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এবং সেই সুবাদেই তাঁকে সুমিত নাহার হোটেলে চাকরি করে দেন রিয়াজরা। আর এই দাবির সূত্র ধরেই তদন্তকারীদের একাংশ আশিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। হাওড়া কাণ্ডের এক তদন্তকারীর বক্তব্য, “এই মামলার অন্যতম মূল চরিত্র আশিস। তাই তাঁর সম্পর্কে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।”

কিন্তু আশিস নিজে তো বটেই, সুমিতবাবুর মা মঞ্জু নাহাও দুই অভিযুক্তের পরিবারের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন। আশিসের বক্তব্য, “মঞ্জু নাহা নিজেই আমাকে চাকরি দিয়েছিলেন। দীপক ও রিয়াজকে আমি চাকরির জন্য বলেছিলাম বটে, কিন্তু ওরা সাহায্য করেনি।” সেই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে মঞ্জুদেবীও এ দিন বলেন, “সুমিত আর হোটেলের আর এক ম্যানেজার কৃষ্ণই নিয়ে এসেছিল আশিসকে। আশিসকে যে দিন কাজে রেখেছিলাম, সে দিনই বাড়ি ফেরার পথে দীপক আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, আশিসকে কাজে রেখে আপনি কিন্তু ভাল করলেন না।”

দুই অভিযুক্তের পরিবারের আরও দাবি, আশিস তৃণমূল করতেন। সুতরাং তৃণমূলের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে ম্যানেজার করার যুক্তি ধোপে টেকে না।

তিনি যে তৃণমূল কর্মী, সে কথা অস্বীকার করেননি আশিস। মঞ্জুদেবীও বলেন, আশিস যে তৃণমূল করেন, সেটা তাঁর জানা ছিল। শাসক দলের ঘরের লোককে ম্যানেজার করলে তোলাবাজির অত্যাচার কমবে, এমনটাই ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে সেটা হল না কেন? কেন সুমিতবাবুর মৃত্যুর দু’দিন আগে হোটেলে এসে আশিসকে মারধর করবে দীপক? যে ঘটনার ছবি ধরা রয়েছে হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায়। এ ব্যাপারে আশিসের বক্তব্য, “মঞ্জুদেবী ও সুমিত নাহা দু’জনেই বলেছিলেন, দীপক যেন হোটেলে ঢুকতে না-পারে। ওকে কোনও খাতাপত্র যেন দেখানো না হয়। আমি যাঁর চাকরি করি, তাঁর কথাই তো শুনব। সে জন্যই দীপক-রিয়াজের সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়।”

তবে পুলিশের কাছে রিয়াজ সম্পর্কে তেমন কোনও অভিযোগ করেননি আশিস। তাঁর যাবতীয় অভিযোগ দীপকের বিরুদ্ধে। আশিস এ দিন বলেন, “রিয়াজ ভাল ছেলে। তৃণমূল করলেও কখনও দাদাগিরি বা তোলাবাজি করেনি। দীপকের বন্ধু রিয়াজ। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়েই ও ফেঁসে গিয়েছে।” ২০ জুন যখন সুমিতবাবুকে মারধর করেছিলেন দীপক, তখন রিয়াজ ধারে কাছেও ছিলেন না বলে আশিসের দাবি। তিনি বলেন, “দীপকের নামে থানায় অভিযোগ করার পরে রিয়াজ আমাকে সাবধান করেছিল, দীপকের হাতে প্রচুর ছেলে রয়েছে। ও তোমার ক্ষতি করে দেবে।”

কে এই আশিস? তদন্তকারীরা জানান, হাওড়ার গোলাবাড়ি থানার পিছনে ২৮ নম্বর বেচুরাম চৌধুরী লেনে শ্বশুরবাড়ির চারতলা ফ্ল্যাটের এক তলায় থাকেন আশিস। ২০০৩ সাল থেকে বিদেশি বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী দোকানে-দোকানে বিক্রি করতেন। সে সময়ে দীপক, রিয়াজ, সুমিত নাহা তিন জনই তাঁর ক্রেতা ছিল বলে আশিসের দাবি। রিয়াজের ব্যবসায় গিয়ে হিসেবপত্র দেখাশোনার কাজও করতেন আশিস। সে সময়ে তিনি কংগ্রেস করতেন বলে দাবি আশিসের। তবে আশিসের বাবা ছিলেন ঘুসুড়ি হনুমান জুটমিলের বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নের নেতা।

আশিসের পড়শিরা জানিয়েছেন, কংগ্রেস করার সময় থেকেই হাওড়া পুরসভায় তৃণমূলের এক মেয়র পারিষদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন আশিস। তাঁর স্ত্রী রিনাও ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত হাওড়া পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। আশিস অবশ্য এ দিন বলেন, “দলের কোনও নেতা যেমন রিয়াজ ও দীপকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না, তেমনই আমারও খোঁজখবর কেউ নেননি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE