Advertisement
E-Paper

শিক্ষক কম, বাধ্য হয়েই ছুটি বহু স্কুলে

থাকার কথা ১১ জনের। কিন্তু কোথাও রয়েছেন সাত জন। কোথাও আবার পাঁচ জন। শিক্ষকের এমন সঙ্কট নিয়ে জর্জরিত এ রাজ্যের সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলি। ফলে, অনেক জায়গায় সপ্তাহে সব দিন ক্লাস নেওয়া যায় না। সপ্তাহের মাঝেও ছুটি দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুল সরকারের থেকে অনুদান পায়। কিন্তু এ রাজ্যে মাত্র ৪০টি স্কুল রয়েছে, যেগুলি সরাসরি পরিচালনা করে সরকার।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯

থাকার কথা ১১ জনের। কিন্তু কোথাও রয়েছেন সাত জন। কোথাও আবার পাঁচ জন। শিক্ষকের এমন সঙ্কট নিয়ে জর্জরিত এ রাজ্যের সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলি। ফলে, অনেক জায়গায় সপ্তাহে সব দিন ক্লাস নেওয়া যায় না। সপ্তাহের মাঝেও ছুটি দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

রাজ্যের অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুল সরকারের থেকে অনুদান পায়। কিন্তু এ রাজ্যে মাত্র ৪০টি স্কুল রয়েছে, যেগুলি সরাসরি পরিচালনা করে সরকার। যার পরিচালন সমিতির মাথায় আছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। দীর্ঘ দিন ধরেই এই সব স্কুলগুলিতে শিক্ষকের পদ খালি পড়ে রয়েছে। তার উপরে ২০১১ সালে প্রি-প্রাইমারি বিভাগ যোগ হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি দীপক দাসের কথায়, “কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় এই স্কুলগুলিতে শিক্ষক পদ ফাঁকা থাকায় পঠন-পাঠন নিয়ে ভয়াবহ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”

সরকারি প্রাথমিক স্কুল চালু হয় ১৯৭৫ সালে। বিভিন্ন জেলা স্কুলে সকালের বিভাগে এই স্কুল চলে। শুরুতে এক জন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, তিন জন শিক্ষক, এক জন করে ক্রীড়া শিক্ষক ও অঙ্কন শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বছর পাঁচেক পরে এই স্কুলের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণি যোগ করা হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে আরও পাঁচ জন করে শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে একটি করে এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে দু’টি করে বিভাগ চালু হয়। অর্থাৎ, এই আটটি বিভাগের জন্য মোট ১১ জন শিক্ষক বরাদ্দ করা হয়। বছর তিনেক আগে স্কুলে প্রি-প্রাইমারি বিভাগ যোগ হওয়ায় ক্লাসের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১। পুরনো শিক্ষকেরা অবসর নেওয়ার পরে নিয়োগ হয়নি।

কেন এই পরিস্থিতি? বিভিন্ন স্কুল সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে সরকারি নিয়ম বদলে বিএড উত্তীর্ণ শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এরই মধ্যে ১৯৯৮-এ স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে স্কুলে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। বিএড পাশ করা প্রার্থীরা এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষকতার সুযোগ পাচ্ছেন। সেখানে বেতনক্রম বেশি এবং কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বাড়ির কাছে স্কুলে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয় পিএসসির মাধ্যমে। উত্তীর্ণদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হতে হতে প্রায় তিন বছর গড়িয়ে যায়। তার পরে নানা প্রক্রিয়া চলে। এক শিক্ষকের কথায়, “সব প্রক্রিয়া যখন শেষ হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেই প্রার্থী ইতিমধ্যে এসএসসি-র মাধ্যমে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। অথচ, তা পিএসসি-কে জানাননি। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পদ ফাঁকা থেকে যায়।”

পুরুলিয়া জেলা স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে এখন রয়েছেন ৭ জন শিক্ষক। বীরভূম জেলা স্কুলে এই বিভাগে রয়েছেন ৯ জন শিক্ষক। আরও খারাপ পরিস্থিতি বাঁকুড়া জেলা স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে। সেখানে শিক্ষক আছেন মাত্র ৫ জন। ফলে, প্রতিটি শ্রেণির সপ্তাহে তিন দিন করে ক্লাস হয়। বাকি তিন দিন শ্রেণিগুলির ছুটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনও প্রয়োজনে তাঁরা ছুটি পর্যন্ত নিতে পারেন না বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। বীরভূম জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক সাহা এই প্রসঙ্গে বলেন, “শূন্যপদ তাড়াতাড়ি পূরণ হলে পড়ুয়া-সহ সকলেই উপকৃত হবে।”

তবে সমস্যা মিটবে কী ভাবে, সে ব্যাপারে স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে সদুত্তর মেলেনি। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা ডিরেক্টর রাজেশ সিংহ মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেছেন, “বিষয়টি শিক্ষা সচিব বলতে পারবেন।” শিক্ষা সচিব অর্ণব রায়ের অফিসে ফোন করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

primary school inadequate teachers arpita majumder durgapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy