বার্তা। কড়া বার্তা। সতর্কবাণী। হুঁশিয়ারি।
ব্যস, এটুকুতেই আটকে গেলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র নতুন নেতৃত্ব। সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে সংগঠনের এক দল সমর্থক বিক্ষোভ দেখানোর পরেও ঘেরাও-আন্দোলন থেকে বিরত থাকার মামুলি বার্তা দিয়েই থামলেন টিএমসিপি-র নতুন রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। বার্তার থেকে কঠোরতর কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার রাস্তায় আর এগোলেন না। এমনকী তাঁর ওই বার্তাটুকু মেনে চলতে সংগঠন-সদস্যদের বাধ্য করানো যাবে কী ভাবে, সেই প্রশ্নের উত্তরও নেই অশোকবাবুর কাছে।
ঘেরাও-বিক্ষোভ থেকে যে বিরত থাকতেই হবে, দলের নির্দেশ না-মানলে যে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন হুঁশিয়ারি আগেও দেওয়া হয়েছে। খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় টিএমসিপি-কে বার্তা দিয়েছিলেন, যখন-তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে বিক্ষোভ-আন্দোলন করা যাবে না। বক্তব্য বা দাবিদাওয়া থাকলে প্রতিষ্ঠান-কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতি নিয়ে পাঁচ সদস্যের দল গিয়ে নিজেদের কথা জানাতে পারে। কিন্তু সেই সতর্কবাণী যে তাঁরা শুনেও শোনেননি, সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে টিএমসিপি-র নেতারা সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
জঙ্গিপনা ঠেকানো দূরের কথা, শঙ্কুদেব পণ্ডা টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন নিজেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তুমুল বিক্ষোভ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতেন। তাঁর পরে অশোকবাবু সংগঠনের হাল ধরায় পরিস্থিতির বদল হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। অশোকবাবু নিজে পিটিটিআই আন্দোলনের প্রাক্তন নেতা। বাম আমলে তিনি বহু বিক্ষোভ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে শঙ্কুর মতো যখন-তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ এখনও নেই তাঁর বিরুদ্ধে। ভবিষ্যতে টিএমসিপি-র কেউ ওই ধরনের জঙ্গি আন্দোলনের পথ ধরলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সোমবারের ঘটনায় জড়িতদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা যে তাঁদের নেই, জানিয়েছেন সেটাও।
ভবিষ্যতে বিক্ষোভ-আন্দোলন করলে নিছক শাস্তির বার্তা না-দিয়ে ওই দিনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না টিএমসিপি?
অশোকবাবু বলেন, “আমি তো সবে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছি। তার পরে এটাই প্রথম আন্দোলন। তাই একটু দেখে নিচ্ছি।”
যদিও টিএমসিপি-সভাপতির এই হুঁশিয়ারিতে তাঁর অধীন নেতারা কতটা সংযত হবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, সোমবারের কর্মসূচির কথাই অশোকবাবুকে আগাম জানানো হয়নি! এই নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদেরও কেউ কেউ ক্ষুব্ধ বলে দলের খবর। প্রশ্ন উঠছে, সভাপতিকে না-জানিয়ে এই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হল কী ভাবে?
অশোকবাবু অবশ্য মঙ্গলবার বলেন, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নেতারা পরে আমার সঙ্গে দেখা করে জানান, জনা পাঁচেক পড়ুয়ার দাবিপত্র পেশ করতে যাওয়ার কথা ছিল। তাই আলাদা করে বিষয়টি ওঁরা আমাকে জানাননি। পরে আরও কিছু ছাত্রছাত্রী সেই দলে সামিল হন। তাই সেটি বহরে বেড়ে যায়।”
টিএমসিপি-র নেতা-সদস্যেরা ওই কর্মসূচির কথা সংবাদমাধ্যমকে তো আগেভাগেই জানিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, কর্মসূচির উদ্যোক্তারা সংগঠন-প্রধানকে আগাম তা জানানোর প্রয়োজন অনুভব করলেন না কেন? তা হলে কি সংগঠনের অন্যেরা কি অশোকবাবুকে নেতা হিসেবে মানছেন না? সে-ক্ষেত্রে তাঁর বার্তাকেই বা তাঁরা কতটা গুরুত্ব দেবেন?
অশোকবাবু অবশ্য এ-সব প্রশ্ন বা জল্পনাকে আমল দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, “আগামী দিনে কী হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যৎই দেবে।” সংগঠন সূত্রের খবর, কলেজে কলেজে টিএমসিপি-র ইউনিট ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হচ্ছেন অশোকবাবু।
এক গুচ্ছ দাবি নিয়ে সোমবার টিএমসিপি-র যে-সব নেতা-সমর্থক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান, তাঁদের মধ্যে বহিরাগতেরাও ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী সে-দিনই ওই আন্দোলনের বিরোধিতা করে কড়া বার্তা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মিছিল-অবস্থান করে, স্লোগান দিয়ে যে সমস্যার হবে না, তা জানিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসও। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমেই এত দিন সব সমস্যার সমাধান করেছি। ভবিষ্যতেও তা করতে পারব বলে আমি আশাবাদী। এ ভাবে মিছিল-অবস্থান করে স্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করে আন্দোলন ভবিষ্যতে হবে না বলে আশা করব।”
সুরঞ্জনবাবু জানান, সে-দিন টিএমসিপি যে-সব দাবি জানিয়েছে, তার মধ্যে যেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মেটানো সম্ভব, সেগুলোর ব্যাপারে তাঁরা উদ্যোগী হবেন। কিন্তু অর্থনীতি বিভাগের ক্যাম্পাসে খেলার মাঠ, হেস্টিংসে ছাত্রী-আবাসে জলের জোগান বাড়ানো ইত্যাদি দাবি মেটানো একক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। তার জন্য সরকারের সাহায্য চাই। তাই খেলার মাঠের জন্য ক্রীড়া দফতর, জলের জোগানের জন্য পুরসভার কাছে চিঠি পাঠাবেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। আজ, বুধবারেই সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান উপাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy