Advertisement
E-Paper

শান্তি আর উন্নয়নে আস্থা, জঙ্গলমহল সবুজে সবুজ

তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে যে ধারাটা শুরু হয়েছিল, এ বার লোকসভা ভোটে সেই বৃত্তই সম্পূর্ণ করল তৃণমূল। জঙ্গলমহল এখন সবুজে-সবুজ। ২০০৯-এ ঝাড়গ্রামের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার একটিতেও তৃণমূল এগিয়ে ছিল না। ২০১১ সালে তারা জেতে চারটিতে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০৩:১৪

তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে যে ধারাটা শুরু হয়েছিল, এ বার লোকসভা ভোটে সেই বৃত্তই সম্পূর্ণ করল তৃণমূল। জঙ্গলমহল এখন সবুজে-সবুজ।

২০০৯-এ ঝাড়গ্রামের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার একটিতেও তৃণমূল এগিয়ে ছিল না। ২০১১ সালে তারা জেতে চারটিতে। এ বার লোকসভার ভোটে ফল তৃণমূলের পক্ষে ৭-০। হুবহু এক ফল বাঁকুড়াতেও। পুরুলিয়াতে ২০১১-য় একটি বিধানসভায় জিতেছিলেন বামেরা। ৬টিতে জেতেন কংগ্রেস-তৃণমূল জোট-প্রার্থী। এ বার জোট নেই।

তার পরেও পাঁচটি আসনে এগিয়ে তৃণমূল। বাম ও কংগ্রেস এগিয়ে একটি করে বিধানসভায়।

তৃণমূল শিবিরের দাবি, গত তিন বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মাওবাদী সমস্যা মিটিয়ে জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নের যে কাজকর্ম করেছে, তার পক্ষেই রায় দিয়েছে জঙ্গলমহল। ২০১১ সালে পরিবর্তনের ঝড়েও জঙ্গলমহলে কিছুটা বাম-অস্তিত্ব ছিল। এ বার সেটুকুও ধুয়ে-মুছে সাফ। বিজেপি যে ভোটটা বাড়িয়েছে, তা-ও ধসেছে মূলত বাম শিবির থেকেই। বাঁকুড়ার পরাজিত সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়া তো বলেই ফেলেছেন, “বিজেপির জন্যই হেরে গেলাম।”

পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া এই তিন জেলার জঙ্গলমহলে লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে চারটি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর এবং বাকি দুই জেলার দু’টি কেন্দ্র পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া। এই চারটি কেন্দ্রেই এ বার তৃণমূল প্রার্থীদের জয়জয়কার। ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী উমা সোরেন জিতেছেন তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে। মেদিনীপুরে সন্ধ্যা রায়ের জয়ের ব্যবধান প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার। বাঁকুড়ায় আর এক অভিনেত্রী মুনমুন সেন জিতেছেন প্রায় ৯৮ হাজার ভোটে। পুরুলিয়ায় তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো জয়ী হয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ভোটে।

তৃণমূলের প্রতি জঙ্গলমহলবাসীর এই সমর্থনের সূচনা ২০১১-য়। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের জমি আরও পোক্ত হয়। সেই পোক্ত জমিতে এ বার ঘাস-ফুলের ছড়াছড়ি যার কারণ খুঁজতে গিয়ে বারবারই সামনে আসছে শান্তি আর উন্নয়ন প্রসঙ্গ। গত তিন বছরে মাওবাদী খুন-নাশকতায় দাঁড়ি পড়েছে। জঙ্গলমহল জুড়ে শুরু হয়েছে সেতু, পলিটেকনিক, নতুন স্কুল-কলেজ, রাস্তার উন্নয়ন, পানীয় জলের সুবন্দোবস্তের কাজ। ২ টাকা কেজি দরে চাল বিলি আর পুলিশে নিয়োগ মানুষের মন টেনেছে।

পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় ঝাড়গ্রামের পরাজিত সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে শাসকের সন্ত্রাস, ছাপ্পা-রিগিংয়ের অভিযোগ করলেও সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার কিন্তু বলছেন, “মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। আমাদের দেননি।” বস্তুত সাংগঠনিক ভাবেও জঙ্গলমহলে যে এখন বামেরা কোণঠাসা তার প্রমাণ মিলেছে এ বারের ফলে। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের তিনটি বিধানসভায় (রানিবাঁধ, রাইপুর ও তালড্যাংরা) এ বার তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে, যা ২০১১-য় বামেরা ছিলেন। পুরুলিয়ায় বাঘমুণ্ডি (লোকসভায় কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোই স্থানীয় বিধায়ক) বাদ দিলে বলরামপুর ও জয়পুরেও রমরমা শাসক দলের।

সিপিএম সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই বসে গিয়েছেন। অনেকে দলীয় সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করাননি। যাঁরা দল ছাড়েননি, সেই সব সিপিএম নেতা-কর্মীর একাংশও লোকসভা ভোটের সময় সক্রিয় ছিলেন না।

বামেদের প্রতিকূলতা আরও বাড়িয়েছে ভোটের মুখে নেতাই-কাণ্ডে সিআইডি-র ধরপাকড়। ২০১১-র জানুয়ারিতে লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে ছোড়া গুলিতে ৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু ওই বছর বিধানসভা নির্বাচনে বাম-বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ ছিল। এ বার ভোটের ঠিক আগে লালগড়ের এক সময়ের দাপুটে সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডেদের গ্রেফতার জঙ্গলমহলবাসীর নেতাই-স্মৃতি উস্কে দিয়েছে এবং ভোটে তার যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে বলে মানছে সিপিএমেরই একাংশ।

(সহ-প্রতিবেদন: প্রশান্ত পাল ও দেবব্রত দাস।)

kingshuk gupta prasanta paul debabrta das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy