Advertisement
E-Paper

শঙ্কুর টোলে শান্তির অভিষেক

রবিবার ছিল নেশাখোরদের আন্দোলন বলে প্রতিবাদকারীদের আক্রমণ। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজের ফেসবুক পেজে ফের নতুন বার্তা দিলেন তৃণমূলের তরুণ সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তিনি ‘শান্তির প্রতীক’! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। তাঁর আগের দিনের মন্তব্য যদি বিতর্ক তৈরি করে থাকে, অভিষেকের সোমবারের বক্তব্য আবার নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৫
রাজভবন থেকে বেরিয়ে আসছেন শঙ্কুদেব পণ্ডা।  নিজস্ব চিত্র

রাজভবন থেকে বেরিয়ে আসছেন শঙ্কুদেব পণ্ডা। নিজস্ব চিত্র

রবিবার ছিল নেশাখোরদের আন্দোলন বলে প্রতিবাদকারীদের আক্রমণ। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজের ফেসবুক পেজে ফের নতুন বার্তা দিলেন তৃণমূলের তরুণ সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তিনি ‘শান্তির প্রতীক’! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী।

তাঁর আগের দিনের মন্তব্য যদি বিতর্ক তৈরি করে থাকে, অভিষেকের সোমবারের বক্তব্য আবার নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে! শঙ্কুদেব পণ্ডার নেতৃত্বে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত বশ্যতা স্বীকার করেছেন শঙ্কুস্যারের কাছে। তখন অভিষেকের প্রতিবাদ দলে কি অন্য বাতাস বয়ে আনবে? নাকি, ফেসবুকের বার্তা ফেসবুকেই রেখে শেষ পর্যন্ত শঙ্কুস্যারের পাঠশালায় নাম লেখাতে হবে তৃণমূলের যুবরাজকেও।

ফেসবুকে এ দিন অভিষেক বলেছেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুন্ডামির নিন্দা করি। আমরা গণতন্ত্রকে সম্মান করি। আমরা চাই, ক্যাম্পাসে শান্তির পরিবেশ থাকুক। তথাকথিত কায়েমি স্বার্থের নামে নৈরাজ্যের রাজত্বের আমরা বিরুদ্ধে’। অভিষেক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘শিক্ষায় উৎকর্ষের সন্ধানে ছাত্র ও শিক্ষকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা শান্তি চাই। আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি চাই’।

কিন্তু শঙ্কুদের এই শান্তির বাণী স্মরণ করাবে কে, সেই প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই। শাসক দলে কে বড়, শঙ্কু না অভিষেক সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। শঙ্কু এ দিন চিরাচরিত দাপটের সঙ্গেই যাদবপুর-কাণ্ডে ছাত্র মিছিলের প্রতিবাদে ডাকা তৃণমূলের পাল্টা মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মিছিলের পরে আগাম সময় না-পাওয়া সত্ত্বেও রাজভবনে গিয়ে ঢুকে পড়েছেন। রাজ্যপাল যাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন, সে জন্য তৃণমূলের একেবারে উপরতলা থেকে ফোন পর্যন্ত গিয়েছে রাজভবনে। সব মিলিয়ে শঙ্কুর কর্তৃত্বে টোল খাওয়ার লক্ষণ এ দিন অন্তত দেখা যায়নি।

যদিও তৃণমূলের অনেকের মতে, মুকুল রায়ের বিকল্প হিসেবে অভিষেককে তুলে ধরার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংগঠনের সর্ব ক্ষেত্রেই ক্রমশ তাঁর ধীর উত্থান দেখা যাবে। এ দিনের মিছিলে অভিষেক ছিলেন না। (কেন, তার ব্যাখ্যায় তৃণমূলের একাংশ বলছে, সচেতন ভাবেই এ দিনের মিছিলে অভিষেককে পাঠাননি দলনেত্রী। যে মিছিল নিয়ে এত প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া, সেখানে যুবরাজকে পাঠিয়ে ভাবমূর্তি নষ্ট করার ঝুঁকি তিনি নিতে চাননি।) কিন্তু অভিষেকের বেঁধে দেওয়া সুর মেনেই মিছিলে মদ-গাঁজা বিরোধী স্লোগান উঠেছে মুহূর্মুহূ। মিছিল শেষে মেয়ো রোডের সমাবেশ থেকে অভিষেকের সুরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অরাজকতার বিরুদ্ধে সরব হন শঙ্কু!

কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি অভিষেকের দেখানো পথে শঙ্কুস্যার হাঁটবেন? অভিষেকের পিসি মুখ্যমন্ত্রীকে পিসি বলে ডাকা শঙ্কুর মাথায় মমতার অপার আশীর্বাদ রয়েছে বলেই তৃণমূল নেতাদের মত। তার জোরেই শঙ্কুর নামে রীতিমতো কাঁপেন রাজ্যের যাবতীয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ-শিক্ষকেরা। তাঁর নেতৃত্বাধীন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে একের পর কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহের অভিযোগ উঠছে লাগাতার। উপাচার্যদের সমঝে দেওয়া হচ্ছে, দাবি না-মানলে পরিণাম ভাল হবে না। ছাত্র ভর্তি ঘিরে উঠছে একের পর অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ। তৃণমূলের এক তরুণ নেতার কথায়, “শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ব্রাত্য বসু বা পার্থ চট্টোপাধ্যায় অনেক সময়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু দলনেত্রী কখনও ঘুরপথেও শঙ্কুর সমালোচনা করেননি!” অভিষেকের মন্তব্যের পর ছবিটা বদলাবে কিনা, সংশয় দলেই।

অভিষেক যখন শঙ্কুর কাজকর্মের উল্টো সুরে বিবৃতি দিচ্ছেন, বিরোধীরা অবশ্য তাঁকে ছাড়েনি। তারা হাতিয়ার করেছে তৃণমূল সাংসদের আগের দিনের মন্তব্যকেই। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এ দিন দলের কিষাণ মোর্চার সমাবেশের অবসরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট এই সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে! যা ছিল যাদবপুরের পড়ুয়াদের আন্দোলন, তা-ই হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের আন্দোলন।” বন্ধ কারখানা খোলার দাবিতে এ দিন কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, প্রসেনজিৎ বসুদের গণমঞ্চের মিছিলের শেষে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার কটাক্ষ, “ওই যে ভাইপো, জেনেটিক প্রবলেম আছে যে ছোকরাটার, সে নিশ্চয়ই মহাদেবের প্রসাদ খায়! না হলে জানল কী করে, কে কোথায় খাচ্ছে? নবান্ন থেকে ওদের গোটা বংশকে ঝাড়ে বংশে দূর করতে হবে!”

যোগ দিন, না হলে...

পাল্টা মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য সদস্যদের কাছে এসএমএস পাঠিয়েছিল তৃণমূলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা। এসএমএস-এর নীচে নাম রয়েছে সংগঠনের সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু এবং সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাধুখাঁ-র। বলা হয়েছে, ‘দিদির নির্দেশে ২২শে সেপ্টেম্বর বেলা ১টায় বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়াম থেকে রাজভবন পর্যন্ত মিছিল করবে ওয়েবকুপা। মিছিলে সর্বশক্তি নিয়ে যোগ দিন। না হলে ...’

‘না হলে’ কী? সবক শেখানো হবে? সোমবার রাতে ফোন করা হয়েছিল কৃষ্ণকলিদেবীকে। প্রশ্নটা অর্ধেক শুনেই তিনি ফোন কেটে দেন। তার পর আর ফোন ধরেননি। গোবিন্দবাবুর ব্যাখ্যা, “সদস্যদের মধ্যে কেউ এডিট করে ‘না হলে’ (অর এলস) কথাটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এটা আমরা করিনি।” মিছিল ডেকেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। আপনারা কেন লিখলেন ওয়েবকুপা-র মিছিল? তাঁর জবাব, “মিছিল টিএমসিপি ডাকলেও আমাদের সদস্যদেরও যোগ দিতে বলায় সংগঠনের নাম লেখা হয়েছে।”

jadavpur university student agitation student molest abhijit chakrabarty shankudeb panda abhisekh bandyopadhyay webcupa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy