Advertisement
০৪ মে ২০২৪

স্কুল থেকে পুলিশ সরাও, নির্দেশ হাইকোর্টের

গত অক্টোবরে রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণ গিয়েছিল তিন জনের। পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তার পর বসেছিল পুলিশ ক্যাম্প। এক মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে মাখড়ার স্কুল থেকে সেই পুলিশ ক্যাম্প সরানোর নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। শুক্রবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশের সঙ্গেই মাখড়ার আশপাশের অন্য স্কুলে এ রকম ক্যাম্প চললে সেখান থেকেও তা তুলে দিতে বলেছে রাজ্যকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও পাড়ুই শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

গত অক্টোবরে রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণ গিয়েছিল তিন জনের। পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তার পর বসেছিল পুলিশ ক্যাম্প। এক মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে মাখড়ার স্কুল থেকে সেই পুলিশ ক্যাম্প সরানোর নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। শুক্রবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশের সঙ্গেই মাখড়ার আশপাশের অন্য স্কুলে এ রকম ক্যাম্প চললে সেখান থেকেও তা তুলে দিতে বলেছে রাজ্যকে।

এ দিন নির্দেশ দেওয়ার সময় বিচারপতিরা জানান, শিক্ষা বিষয়টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। প্রত্যেক শিশুর শিক্ষার অধিকার রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অর্থ এই নয় যে, কারও অধিকার খর্ব করা হবে। প্রধান বিচারপতির কথায়, “অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে স্কুলে। পুলিশের এই ধরনের কার্যকলাপ শিশুদের অধিকার ভঙ্গের সামিল।” বেঞ্চের নির্দেশ, এমন কোনও জায়গায় পুলিশ ক্যাম্প করতে হবে, যাতে কোনও মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত না হয়।

মাখড়ার বাসিন্দাদের একটা অংশ অবশ্য চাইছেন, গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প থাকুক। তাঁদের আশঙ্কা, গ্রাম থেকে ক্যাম্প তুললে ফের এলাকা অশান্ত হতে পারে। প্রশাসনের একটি সূত্রের যদিও বক্তব্য, স্কুল থেকে পুলিশ ক্যাম্প সরে যাওয়া মানে গ্রাম থেকে সরে যাওয়া নয়। গ্রাম বা এলাকার অন্যত্র ক্যাম্প করা যায় কিনা, তা দেখা হবে।

গত ২৭ অক্টোবর বীরভূমের ওই গ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দু’দিন পরেই প্রাথমিক স্কুলে পুলিশ ক্যাম্প বসে। সম্প্রতি ‘রামপুরহাট নাগরিক সঙ্ঘ’ নামে এক সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে জানায়, পুলিশ ক্যাম্পের জন্য স্কুলের স্বাভাবিক কাজ ও পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। আরও দাবি করা হয়, ইলামবাজার, মহম্মদবাজারের কিছু স্কুলেও ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চকে আবেদনকারীদের আইনজীবী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গত ৯ জানুয়ারি পাড়ুই থানার পলসা গ্রামে পুলিশের উপস্থিতিতে বোমাবাজি হয়েছে। সেখানকার স্কুলেও পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। যদিও গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) অভ্রতোষ মজুমদার দাবি করেছেন, “ওই স্কুলগুলির কিছু ঘরে পুলিশ থাকলেও অন্য ঘরে পড়াশোনা চলছে।”

দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে এ দিন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর বলেন, “দেখছি শুধুমাত্র বীরভূমেই এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে!” বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “জেলাশাসক এবং এসপি তো এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন।” প্রধান বিচারপতির আরও মন্তব্য, “ক্যাম্পের ছবিতেও দেখা যাচ্ছে ক্লাসরুমে উনুন জ্বলছে, কড়াইয়ে রান্না হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিকে কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। পুলিশ ক্লাসের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, এই দৃশ্য তো ছাত্রদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে। এ ভাবে কি পড়াশোনা হয়?” মাখড়ায় সংঘর্ষের জেরে বেশ কিছু দিন পর্যন্ত ওই প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা আতঙ্কে ক্লাসে যেতে পারেনি। এমনকী, এলাকার অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র, টিকাকরণ কর্মসূচি-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় একাধিক পরিষেবা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। স্বাভাবিকতা ফেরাতে গ্রামে বসে পুলিশ ক্যাম্প। আতঙ্ক কাটিয়ে পড়ুয়ারা ধীরে ধীরে স্কুলেও ফিরেছিল। এ দিন মাখড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ ফজলুল হক বলেন, “ওই পুলিশ ক্যাম্প স্থায়ী ছিল না। এখন যা অবস্থা, তাতে ক্যাম্প দরকার।” ওই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে গ্রামবাসী শেখ আসগর আলি, বাবলু শেখ, মনিরা বিবিরা বলছেন, “গ্রামে আর কোথায় ক্যাম্প হবে? পুলিশ ক্যাম্পের ফলে ছেলেমেয়েদের নিশ্চিন্তে স্কুলে পাঠাতে পারি।” তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের জেরে ডিসেম্বর থেকে পাড়ুইয়ের পলসা-বেলুটি প্রাথমিক স্কুলেও পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানিককুমার সাহার কথায়, “ক্যাম্প আছে বলেই পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে সাহস পারছে।” তাঁর সুরেই কথা বলেছেন এলাকাবাসীর একটা বড় অংশই। বারবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী এবং পুলিশ সুুপার অলোক রাজোরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parui police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE