Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ

সংঘাত এড়াতে কলকাতা বাদ মোদী-আমলেও

কলকাতা বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ঠিক ছিল, কলকাতা-সহ দেশের ছ’টি বিমানবন্দর তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। তবে, পুরোপুরি নয়। বিমানবন্দরের দৈনন্দিন কাজকর্ম, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং সামগ্রিক উন্নয়নের ভার তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। আপাতত কলকাতা ও চেন্নাইয়ের ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এল কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

কলকাতা বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।

ঠিক ছিল, কলকাতা-সহ দেশের ছ’টি বিমানবন্দর তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। তবে, পুরোপুরি নয়। বিমানবন্দরের দৈনন্দিন কাজকর্ম, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং সামগ্রিক উন্নয়নের ভার তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। আপাতত কলকাতা ও চেন্নাইয়ের ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এল কেন্দ্র। ঠিক হয়েছে, বাকি চার বিমানবন্দর আমদাবাদ, জয়পুর, লখনউ ও গুয়াহাটি নিয়ে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হবে।

বিগত বাম সরকারের মতো রাজ্যের তৃণমূল সরকারও বিমানবন্দর বা তার কোনও কাজ বেসরকারি হাতে দেওয়ার বিরোধী। চেন্নাইয়েও এ ব্যাপারে বাম সংগঠনগুলির প্রবল বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল মনমোহন সরকারকে। মোদী সরকার তাই আপাতত এ দু’টি বিমানবন্দরকে বেসরকারিকরণের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বিরোধিতার কারণে উন্নয়নের সঙ্গে আপস করল নরেন্দ্র মোদীর সরকার?

বিজেপি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, আমেরিকা যাওয়ার আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকার উন্নয়নের প্রশ্নে আপস করতে রাজি নয়। তবে রাজ্যগুলির সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে নয়, তাদের সঙ্গে নিয়েই উন্নয়নের রথ ছোটাতে চান তিনি। আর মতবিরোধ হলে রাজ্যগুলিকে নিরন্তর বোঝানোর কাজ চালিয়ে যাওয়াই হবে সরকারের নীতি। আগামী দিনে কেন্দ্র আরও কয়েকটি বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ করতে চায়। সেই তালিকায় কলকাতা ও চেন্নাইয়ের নাম জুড়ে নেওয়ার রাস্তা খোলাই থাকছে। তা ছাড়া, সম্প্রতিই কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে কলকাতা ও চেন্নাই বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল বানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে এখনই এই দুই বিমানবন্দরে উন্নয়নের তেমন সুযোগ নেই।

তবে কলকাতা বিমানবন্দরের পরিষেবা নিয়ে কিন্তু বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। ছাদ থেকে জল পড়া, অপরিচ্ছন্ন শৌচালয়, ট্রলির সমস্যা, নতুন টার্মিনালের কাচ ভেঙে পড়া ইত্যাদি নিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিমানবন্দরের পরিচালন ব্যবস্থার দিকে। তা সত্ত্বেও কলকাতা ও চেন্নাইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার যদি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তা হলে তাকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে মোদী সরকার।

এক সময় দেশের সব বিমানবন্দরই ছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে। প্রথম ইউপিএ সরকারের সময়ে, প্রফুল্ল পটেল বিমানমন্ত্রী থাকাকালীন দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই বেসরকারিকরণ ছিল পুরোপুরি, ১০০ শতাংশ। কিন্তু সে সময় বেসরকারিকরণের প্রশ্নে কলকাতায় বাম সরকার ও চেন্নাইয়ে বাম কর্মী সংগঠনের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় মনমোহন সরকারকে। চার দিনের জন্য কলকাতা বিমানবন্দর। পুরোপুরি বন্ধ করে রাখেন বেসরকারিকরণ-বিরোধীরা। সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ইউপিএ সরকার।

দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় ঠিক হয়, একশো শতাংশ বেসরকারিকরণ না করে কলকাতা ও চেন্নাই-সহ ছ’টি বিমানবন্দরকে চুক্তির ভিত্তিতে তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। কলকাতার ক্ষেত্রে প্রাথমিক কথাবার্তা হয় সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি-র সঙ্গে। ঠিক হয়, তাদের সঙ্গেই চুক্তি হবে। কিন্তু, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন্ত্রকের বিরোধের ফলে তা বাতিল হয়ে যায়। নতুন করে টেন্ডার করে ওই ছ’টি বিমানবন্দরের সঙ্গে চুক্তির জন্য বেসরকারি সংস্থাকে আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে আন্দোলন শুরু হয় কলকাতায়। রাজ্যে তখন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় চলে এসেছে এবং সেই দলের সাংসদ সৌগত রায়ের নেতৃত্বে ওই আন্দোলনে সামিল হয় সিপিএমও। ফের চিন্তায় পড়ে কেন্দ্র। তা ছাড়া, কলকাতা ও চেন্নাইয়ের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত কী হবে, তা নিয়েও বিরোধ বাধে যোজনা কমিশন এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে।

সেই বিরোধ মেটার আগেই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ঘটেছে পালাবদল। এখন আবার সংঘাত এড়াতে চায় মোদী সরকার। কলকাতা ও চেন্নাই বিমানবন্দর তাই আপাতত থাকছে সরকারি হাতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE