Advertisement
E-Paper

সিব্বল-পর্বে বিভ্রান্তি, তবু মমতা-জেহাদেই অধীরেরা

সারদা-কাণ্ড তৃণমূলকে বেসামাল করেছে। কংগ্রেসের ঘরেও আগুন লাগিয়েছে! শিবির-রাজনীতি কংগ্রেসে নতুন নয়। বাংলায় রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা প্রায় হারিয়ে ফেলার উপক্রম হলেও কংগ্রেসে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব যথারীতি বহাল। তার মধ্যেই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ বাংলার কংগ্রেসে নতুন সমস্যা তৈরি করেছে।

সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৮

সারদা-কাণ্ড তৃণমূলকে বেসামাল করেছে। কংগ্রেসের ঘরেও আগুন লাগিয়েছে!

শিবির-রাজনীতি কংগ্রেসে নতুন নয়। বাংলায় রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা প্রায় হারিয়ে ফেলার উপক্রম হলেও কংগ্রেসে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব যথারীতি বহাল। তার মধ্যেই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ বাংলার কংগ্রেসে নতুন সমস্যা তৈরি করেছে।

তাঁদের রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধারে অধীর চৌধুরীরা সারদাকে হাতিয়ার করে রাস্তায় নেমেছেন। তবে তেড়েফুঁড়ে আন্দোলন শুরু করতে না করতেই বিপত্তি! সারদা নিয়ে মমতা-সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছেন ইউপিএ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। তাঁর এই পদক্ষেপে স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে। প্রদেশ নেতৃত্বের কড়া প্রতিবাদের মুখে এআইসিসি-ও বলেছে, রাজ্য কংগ্রেসের ভাবাবেগ মাথায় রাখা উচিত ছিল সিব্বলের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের দায়ের-করা মামলায় সিব্বল লড়বেন না, এমন কোনও কথা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বলা হয়নি! সিব্বল শেষ পর্যন্ত যা-ই করুন, ক্ষুব্ধ প্রদেশ নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, রাজ্যে তাঁরা তৃণমূল-বিরোধিতার পথেই থাকবেন।

বস্তুত, সিব্বল-পর্বের জেরে কার্যত বিদ্রোহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে রাজ্য কংগ্রেসের অভ্যন্তরে। দলে প্রশ্ন উঠেছে, এ রাজ্যে যে তৃণমূলের হাতেই কংগ্রেস বিধ্বস্ত হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত দিল্লি কি তাদেরই হাত ধরতে চাইছে? দলের মধ্যে কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, দিল্লির নেতাদের এই ধরনের আচরণের জন্যেই ’৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল করতে বাধ্য হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দিল্লির নেতারা যে ভুল সিদ্ধান্ত নেন, নতুন দল করে এবং বাংলায় সিপিএম বিতাড়নে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে মমতা তা প্রমাণও করে দিয়েছেন!”

সেই মমতার দলের হাতেই তাঁদের প্রতিনিয়ত যে হেনস্থা হতে হচ্ছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে কংগ্রেস। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের সঙ্গে দলের হাত মেলানোর আশঙ্কা থেকেই দিল্লির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। দলের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর কাছে কয়েক দিন আগের শহিদ মিনারের সমাবেশে ব্যাপক ভিড়ের ছবি ও রিপোর্ট পাঠিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। সেখানেও রাহুল-ঘনিষ্ঠ অমিতাভ তাঁর নেতাকে জানিয়েছেন, শহিদ মিনারের সমাবেশে ঘোষণা সত্ত্বেও এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক সি পি জোশীর অনুপস্থিতির কারণে দলের কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দিল্লির নেতারা কি ইচ্ছুক নন?

কংগ্রেস হাইকম্যান্ড শেষমেশ সারদা-কাণ্ডে বিপর্যস্ত তৃণমূলের দিকে হাত বাড়ালে রাজ্যে কংগ্রেসের অবশিষ্ট সংগঠন ধরে রাখাও সমস্যা হবে বলে দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেরই আশঙ্কা। অধুনা অধীর-বিরোধী বলে পরিচিত কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানও হতাশ গলায় বলছেন, “যে আমি সারদা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করায় তৃণমূল দলটা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে, সেই আমিই কী করে মানুষের কাছে গিয়ে বলব, তৃণমূলকে ভোট দাও!” এক ধাপ এগিয়ে মান্নান আরও বলেছেন, “আমার একটাই আশা, তৃণমূলের নেতারা তো সবাই ধরা পড়বেন! তখন আমাদের দিল্লির নেতারা কার সঙ্গে আর জোট করবেন? আর যদি সত্যি তৃণমূলের সঙ্গে জোট হয়, তখন রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেওয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার থাকবে না!” মান্নান-বিরোধী নেতারাও মনে করছেন, দিল্লি তৃণমূলের প্রতি নরম হলে শাসক দলের হাতে অত্যাচারিত কংগ্রেস কর্মীরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে দল ছাড়বেন। তাতে লাভ হবে বিজেপি-রই। দলের এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “কংগ্রেস কর্মীরা তো আর তৃণমূলে যাবেন না! যাবেন বিজেপি-তে। উল্টো দিকে, তৃণমূলে ‘অসম্মানিত’ নেতা-কর্মীদের কংগ্রেস ফেরার পথও বন্ধ হবে!”

শহিদ মিনারের সমাবেশে উজ্জীবিত প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মনোজ চক্রবর্তীর ঘোষণা, “আমরা ছাড়ব না! তৃণমূলের সঙ্গে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াইয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত!” কিন্তু দিল্লির নির্দেশ তাঁরা উপেক্ষা করতে পারবেন? কংগ্রেস নেত্রী ও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর মালা রায়ের বক্তব্য, “দিল্লির দাসত্ব আর করতে পারব না! আমাদের কর্মীদের তো কিছু পাওয়ার নেই। তারা তৃণমূলের অত্যাচারে জর্জরিত। তারা চায় এলাকায় মাথা উঁচু করে বাস করতে।”

এই ডামাডোলের মধ্যেই সামনে এসে পড়ছে বনগাঁ লোকসভা ও কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, “জোট আবার কীসের? উপনির্বাচনে দু’জায়গাতেই কংগ্রেস একা লড়বে।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, দু-এক দিনের মধ্যেই দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হবে। শহিদ মিনারের সমাবেশ অধীরেরও মনোবল বাড়িয়েছে। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “আমি জানি, বাংলার কংগ্রেস কর্মীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে এককাট্টা!” এখন দেখার কংগ্রেসের বাংলা বনাম দিল্লির লড়াই কত দূর যেতে পারে!

saradha scam kapil sibbal congress sanjay sinha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy