মিডল্যান্ড পার্ক, সেক্টর-৫, সল্ট লেক। সারদার অফিস। সুদীপ্ত সেনের চেম্বার। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দশটার ঘর পেরিয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া রাজমহল, সাহেবগঞ্জ, দুমকা থেকে সারদার এজেন্টরা এসেছেন। এমডি-র সঙ্গে মিটিং। এমডি এবং এজেন্টরা ছাড়াও ঘরে তখন বসে রয়েছেন আরও একজন। পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী মন্ত্রী। নাম মদন মিত্র। সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে ভিন রাজ্যের এজেন্টরা সবাই তাঁকে চেনেন। কয়েকজন এজেন্ট আব্দার করলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলবেন। সেই ছবি তাঁদের নিজের নিজের এলাকায় ‘ব্যবসা’ বাড়াতে (পড়ুন, লোক ঠকাতে) সাহায্য করবে। কিন্তু মন্ত্রী মশাই রাজি নন। অনুরোধ পাশ কাটিয়ে এমডি-র কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন দ্রুত।
কথায় কথায় এই ‘ছবিটি’ আঁকলেন মহম্মদ সালামত আনসারি। পেশায় রাজমহল মহকুমা আদালতের আইনজীবী। দ্বিতীয় পেশা, তিনি সারদার এজেন্ট। খুব ভাল ব্যবসা দিতেন কোম্পানিকে। আর তার জেরেই বাজারে এখনও তাঁর দেনা ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি। সারদায় লগ্নিকারীদের সুদের টাকা দিতে না পারলেও আস্তে আস্তে মূল টাকা শোধ করছেন তিনি। সালামত সাহেবের মক্কেলরা যে সকলেই সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আইনজীবী। তাঁরা অন্যত্র বদলি হয়ে গেলেও সালামত সাহেব তাঁদের টাকা শোধ করে চলেছেন। রাজমহলে বসেই সালামত সাহেবের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁর আক্ষেপ, “বুঝতে পারিনি এমন হবে।’’
২০১৩ সালে সারদা-কর্তা ফেরার হওয়ার পর থেকে সালামত সাহেবরা সংগঠন তৈরি করে আদালতে মামলা লড়ছেন। লক্ষ্য, চিটফান্ড সংস্থাগুলির কাছ থেকে টাকা ফেরত পাওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক, বিরোধী দলের নেতা, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শ্যামল সেন কমিশন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও ছুটে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের কথায় কেউই গুরুত্ব দিতে চায়নি বলে অভিযোগ। সালামত সাহেবের কথায়, রাজমহলের মানুষ অত্যন্ত গরিব। তাঁদের তাই সহজেই ‘বোকা’ বানাতে পেরেছিল চিটফান্ড সংস্থাগুলি। এখানকার এজেন্টদের মোটরবাইক দিয়েছিল সারদা। এলাকায় বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্সও দিয়েছিল। স্কুল তৈরি করা হবে বলে রাজমহলের কৈলাসপাত্রীতে এজেন্টদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে জমিও দেখে যান সারদার কর্তারা। কয়েক জনকে বেড়াতেও নিয়ে গিয়েছিল। নিজেদের পত্রিকাগুলি রাজমহলে বিক্রি করা শুরু করেছিল। সব দেখে শুনে এলাকার মানুষ বিশ্বাস করে সারদায় টাকা লগ্নি করে। বিশ্বাস করি আমরাও। কী ছাপা হত সে সব পত্রিকায়? রাজমহলের এজেন্টরা জানান, পত্রিকায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের ছবি থাকত। কাছেই মালদহ থেকে সারদার লোকজন এখানে এসে আমানতকারীদের অভয় দিতেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা সারদার সঙ্গে আছেন। তাই টাকা মার যাওয়ার কোনও ভয় নেই।
সংস্থা উঠে যাওয়ার পরে দেনার দায়ে বাকুটি গ্রামের সারদার এজেন্ট মনসুর আলি আত্মঘাতী হন। রাজমহলের অলোক রায়কে মোটরবাইক দিয়েছিল সারদা। এখন দেনার দায়ে তিনি ফেরার। রাজমহলের প্রতারিত চিটফান্ড এজেন্টদের সংগঠন ‘ঝাড়খণ্ড নন-ব্যাঙ্কিং অধিকর্তা ও জমাকর্তা সমিতি’-র সদস্যদের অভিযোগ, বিতর্কের মুখে পড়তে হবে বলে তৃণমূল শেষ পর্যন্ত রাজমহলের আসনটি বাবুলাল মরাণ্ডির জেভিএমকে ছেড়ে দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সালামত জানান, বাবুলাল মরাণ্ডির কাছেও তাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। কলকাতায় শ্যামল সেন কমিশন তাঁদের অভিযোগ জমা নিতে চায়নি। অন্য রাজ্যের বাসিন্দা বলে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলা হয়নি। তাঁদের বলা হয়, ঝাড়খণ্ড সরকারের মাধ্যমে কমিশনে আসতে হবে। কিন্তু সরকারও তাঁদের বিষয় নিয়ে উদ্যোগী হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy