Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সংস্কৃতির আগল ঘুচুক, চান ও-বাংলার শিল্পী-মন্ত্রী

নাটকে, গানে, বইয়ে, আদান-প্রদানে দুই বাংলার গাঁটছড়া তিনি শক্ত করতে চান।আর কেউ বললে বলা যেত, নেহাতই কথার কথা। কিন্তু কথাটা তাঁর ক্ষেত্রে খাটে না। এমনকী তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেও নয়। কারণ তিনি আসাদুজ্জামান নুর।

বইমেলার আলোচনা সভায়  আসাদুজ্জামান নুর। বুধবার কলকাতায়।  —নিজস্ব চিত্র।

বইমেলার আলোচনা সভায় আসাদুজ্জামান নুর। বুধবার কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৯:৫৯
Share: Save:

নাটকে, গানে, বইয়ে, আদান-প্রদানে দুই বাংলার গাঁটছড়া তিনি শক্ত করতে চান।

আর কেউ বললে বলা যেত, নেহাতই কথার কথা। কিন্তু কথাটা তাঁর ক্ষেত্রে খাটে না। এমনকী তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেও নয়। কারণ তিনি আসাদুজ্জামান নুর।

শুধু কলকাতা কেন, এ-বাংলার বহু ছোট শহরেও ঢাকা থেকে নিজের দল নিয়ে এসে নাটক করে গিয়েছেন তিনি। যে সময়ে ছাদে বাড়তি অ্যান্টেনা লাগিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’ দেখার চল, তখন থেকেই এ-বাংলার বসার ঘরে তাঁর নিত্য আনাগোনা। কলকাতায় ছড়িয়ে তাঁর বন্ধুমহল। মন্ত্রী তো হয়েছেন হালে, কিন্তু তার বহু আগে থেকেই তিনি জানেন, এ-বাংলার মানুষ কী ব্যগ্রতায় হুমায়ুন আহমেদের বই কিনে ফেলেন। কিংবা ও বাংলার শিল্পীদের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের কমপ্যাক্ট ডিস্ক। এ বাংলার মানুষ-জনের মনে এখনও সেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটকগুলোর ভাল লাগার রেশ, কিন্তু কেন যেন ও-বাংলার সব টিভি চ্যানেল ব্রাত্যই এ দেশের সেট-টপ বাক্সে। তিনি জানেন উত্তরবঙ্গের সেই সব মানুষের কষ্টের হদিশ, যাঁরা যখন-তখন চলে যেতে চান মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে সীমান্তের ও পারে ফেলে আসা স্বজনের কাছে। পারেন না, কারণ ভিসা করাতে যেতে হয় বহু দূর উজিয়ে সেই কলকাতায়।

সেই আসাদুজ্জামান নুর আবার কলকাতায় এসেছেন, এ বার নতুন পরিচয়ে। সংস্কৃতি মন্ত্রকের দায়িত্ব এখন তাঁর হাতে সঁপেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার কলকাতায় আনন্দবাজার পত্রিকাকে তিনি বলেন শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের একটা ভিসা অফিস ভীষণ ভীষণ দরকার।

দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের এক পদস্থ কর্তা হইহই করে বলে উঠলেন, “বিষয়টা বিবেচনায় আছে স্যার। তবে শিলিগুড়িতে নয়, উত্তর-পূর্বের প্রধান শহর গুয়াহাটিতে আমরা একটা ভিসা অফিস খোলার কথা ভাবছি।”

“না গুয়াহাটি নয়, শিলিগুড়িতেই ওটা করা দরকার। শিলিগুড়ি উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে। ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া পর্যটকদের সুবিধের বিষয়টাও তো দেখতে হবে। আমি উত্তর বাংলাদেশের নীলফামারির মানুষ, সেখানকার জনপ্রতিনিধিও। সুবিধে-অসুবিধেটা অনেক ভাল বুঝি,” দৃঢ় ঘোষণা আসাদুজ্জামানের।

শুধু কি ভিসা? সব দেশের সংস্কৃতি কেন্দ্র রয়েছে অন্য দেশে, ভারতেরও। সে দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-উৎসবকে বিদেশে মেলে ধরার কাজ করে এই সব সংস্কৃতি কেন্দ্র। বাংলাদেশের কোথায়? বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রীর প্রশ্ন, কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কেন বাংলাদেশের একটি স্থায়ী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে না? কলকাতায় থাকবে, দিল্লিতে থাকবে, থাকবে অন্য দেশের রাজধানীতেও। জানালেন, কাজের ক্ষেত্রে আপাতত সেটাই তাঁর অগ্রাধিকার। সবে দায়িত্ব নিয়েছেন। চেষ্টা করবেন যত শীঘ্র সম্ভব সংস্কৃতি কেন্দ্রের বিষয়টির বাস্তবায়নে। আর সে ক্ষেত্রে কলকাতা আসবে সবার আগে।

এসেছেন কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ দিবসের আলোচনায় অংশ নিতে। একই সময়ে ঢাকায় চলছে একুশের বইমেলা। কলকাতা বইমেলায় ফি বছর বাংলাদেশের বইয়ের জন্য বিশেষ প্যাভিলিয়ন থাকে, একটি দিন থাকে শুধুই বাংলাদেশ নিয়ে। আর ঢাকার বইমেলায় ভারতীয় প্রকাশকদের ‘প্রবেশ নিষেধ’। জানেন কি সংস্কৃতি মন্ত্রী?

বিস্মিত আসাদুজ্জামানের অকপট স্বীকারোক্তি, “বলেন কী! সত্যিই জানি না।” তার পর আনমনে নিজেই কারণ খুঁজতে লাগলেন, “এত দিন হয়তো জায়গার অভাব ছিল। বাংলা অ্যাকাডেমির মাঠটা তো ছোট। এ বার থেকে মেলা হচ্ছে সোহরাবর্দি উদ্যানে, দেখবেন আর এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। সে কি কাণ্ড!” হাইকমিশনের অফিসারের কাছে খোঁজ নিলেন, ভারত থেকে বই নিয়ে যেতে শুল্কের বাধা নেই তো কোনও? অফিসার জানালেন, নেই। মন্ত্রীর প্রশ্ন, “তা হলে? আপনাদের প্রকাশকেরা কি কোনও দিন বিষয়টা ঢাকার কানে তুলেছিল? হতে পারে উদ্যোগের অভাব।” নুরসাহেব জানালেন, ফিরে গিয়ে নিশ্চয়ই এ নিয়ে খোঁজখবর করবেন। বললেন, “একুশে তো এখন আর শুধু বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের দিনে পড়ে নেই। একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উন্নীত। আর সেই একুশের বইমেলার দরজা এ-বাংলার বাংলা-বইয়ের জন্য বন্ধ থাকবে? এ হয় না।”

দুই বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের মেলবন্ধনের যে চেষ্টা বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শুরু করেছেন, নতুন সংস্কৃতিমন্ত্রীও তার পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বললেন, এক সময়ে ভারতের ছবি, পাকিস্তানের ছবি, হলিউডের ছবি ঢাকার সিনেমা হলে চলত। তখন তো বাংলাদেশে তৈরি ছবিও সুপারহিট হয়েছে। তার পরে বিদেশি ছবির ওপর বিধিনিষেধ চেপেছে, আর ফল হয়েছে একটাই দর্শকের অভাবে ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পটাই উঠে যেতে বসেছে। মন্ত্রী বলেন, যে সব প্রযোজক-পরিচালক এই নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে, তাঁদের কাজের মান কুৎসিত, কিন্তু প্রভাব খুব বেশি। তবে তিনি নিশ্চিত, চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষের জীবিকার স্বার্থেই বন্ধ আগল খুলে নিতে হবে সরকারকে।

স্বগতোক্তি শিল্পী আসাদুজ্জামান নুরের, “জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে কি কোনও শিল্প বাঁচতে পারে? পারে না। আদান-প্রদানেই সমৃদ্ধি আসে, তা সে যে শিল্পই হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

book fair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE