Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সকাল সকাল প্রচার সেরে দুপুরে ছাদের তলায়

কারও জন্য এটাই ছিল শেষ রবিবার। কারও হাতে এখনও থাকছে আর একটি। গরমের জঙ্গি মেজাজে ভোট প্রচারের ঝাঁঝ তবু ধাপে ধাপে ঠোক্কর খেল। এপ্রিল মাসের শেষ রবিবারটিতে দিনে-দুপুরে বাইরে-ঘুরে প্রচার করা যথাসম্ভব এড়ানোরই চেষ্টা করলেন প্রার্থীদের একাংশ। বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই শহর-মফস্সলের বেশির ভাগ রাস্তার চেহারা দেখলে মনে হতেই পারত, এ কোথায় এসেছি!

বাড়িতে প্রচারের কাজে ব্যস্ত কাকলি ঘোষদস্তিদার ও তথাগত রায়। পার্টি অফিসে ঋজু ঘোষাল। রণজিৎ নন্দী ও সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

বাড়িতে প্রচারের কাজে ব্যস্ত কাকলি ঘোষদস্তিদার ও তথাগত রায়। পার্টি অফিসে ঋজু ঘোষাল। রণজিৎ নন্দী ও সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২০
Share: Save:

কারও জন্য এটাই ছিল শেষ রবিবার। কারও হাতে এখনও থাকছে আর একটি। গরমের জঙ্গি মেজাজে ভোট প্রচারের ঝাঁঝ তবু ধাপে ধাপে ঠোক্কর খেল। এপ্রিল মাসের শেষ রবিবারটিতে দিনে-দুপুরে বাইরে-ঘুরে প্রচার করা যথাসম্ভব এড়ানোরই চেষ্টা করলেন প্রার্থীদের একাংশ।

বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই শহর-মফস্সলের বেশির ভাগ রাস্তার চেহারা দেখলে মনে হতেই পারত, এ কোথায় এসেছি! চারধার সুনসান। প্রচারে ‘প্যাক-আপ’ ঘোষণা করে প্রবীণ প্রার্থী কর্মীদের বললেন, “বাড়িতে জরুরি কাজ পড়েছে! শুধু রাস্তায় টো টো করলে কি আমার চলবে বল্! কাগজপত্র নিয়েও তো বসতে হবে।” শুনে কর্মী-সমর্থকরাও স্বস্তির শ্বাস ফেললেন। ছুটির সকালে ভোটপ্রচারের আবহসঙ্গীত থামল।

এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ঢুকে প্রার্থীরা করছেনটা কী?

দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তথাগত রায়কে দেখা গেল, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মনোনয়নের কাগজপত্র পড়ছেন। শুভানুধ্যায়ীদের কারও কারও সঙ্গে ওই কাগজে কিছু জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনাও করলেন। ওই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ও কেন্দ্র পরিক্রমা অনেক দূর সেরে ফেলেছেন। বেলা পড়তেই বাড়ি ঢুকে তাঁর কাজ ছিল, বিভিন্ন বুথে পোলিং এজেন্ট বসানোর বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করা। বারাসতের তরুণ কংগ্রেস প্রার্থী ঋজুল ঘোষালও বেলা ১১টার মধ্যে ঘোরাঘুরি মিটিয়ে পার্টি অফিসে ঢুকেছেন। ল্যাপটপে ভোট-সংক্রান্ত কিছু জরুরি কাজে ডুবে গেলেন তিনি।

গরমের সৌজন্যেই সম্ভবত দিন ১০-১৫ বাদে বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার এ দিন তাঁর সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরেছিলেন। কলকাতা ছাড়িয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ছড়ানো কেন্দ্রে প্রচার সারতে ইদানীং মধ্যমগ্রামের আস্তানাতেই বেশি থাকছেন কাকলি। বেশির ভাগ দিনই সকালে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে সন্ধে কাবার। এই রবিবার কাছাকাছি সল্টলেকে প্রচার থাকায় দক্ষিণ কলকাতায় ফিরতে পারেন কাকলি। চান সেরে ভেজা চুল এলিয়ে কিছু ক্ষণ ছেলের পিয়ানো শুনে ‘রিল্যাক্স’ করলেন তিনি।

যাদবপুরের বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীকেও প্রচারের ফাঁকে এমন অবসর খুঁজতে হচ্ছে। প্রকৃতির মেজাজ যেমনই থাক, সুজনবাবু এখন রোজ সকালে মাটি কামড়ে ভাঙড়ে পড়ে থাকছেন। অন্য দিন, সেখান থেকেই এক ফাঁকে কারও বাড়িতে পোশাক পাল্টে অন্যত্র বৈকালিক প্রচার সারতে চলে যাচ্ছেন। এ দিনও বিকেলে কোদালিয়া, সুভাষগ্রামে মিছিল করার কথা ছিল প্রার্থীর। তবু অল্প কিছু ক্ষণের জন্য একটু ঠান্ডা হতে নিজের বাড়িতে ঢুকেছিলেন তিনি।

যাদের ভোট আগে, তাঁরা অবশ্য এই সময়টুকু বার করতেও দুশ্চিন্তায় থাকছেন। টানা প্রচারে সামান্য অসুস্থ হয়েছেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। তাই মা পই পই করে বলে গিয়েছিলেন, দুপুরে এক ফাঁকে ফিরে দু’টি ভাত খেয়ে যেতে। তার আগে আসানসোলের মুন্সিবাজারে আড়াই ঘণ্টা হেঁটে ঘুরেছেন বাবুল। বাঁকুড়া টাউনে রোদ নিয়েই প্রচার করতে হয়েছে বাসুদেব আচারিয়াকে। শিয়রে ভোট, তাই মুনমুন সেন এ দিন সকালে তালড্যাংরায় রোড-শো করেন। দুপুরে হোটেলে একটু জিরিয়েই বিকেলে পুরুলিয়ায় মিটিং।

তারকা-প্রার্থী দেব নিজের কেন্দ্র ছেড়ে বর্ধমানের পূর্বস্থলী, হাটগোবিন্দপুরে ব্যস্ত ছিলেন। তবে সেখানে ঘুরে-ঘুরে প্রচারের বদলে মঞ্চ বেঁধে জনসভাই বসেছে। সকালে কলকাতা পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরেছিলেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে রোদে কর্মীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় বেলা ১১টার মধ্যেই নিজের ভোট কেন্দ্রের অফিসে ঢুকে পড়েছেন। সেখানে বসে-বসেই জনসংযোগ সারতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

সুদীপবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী বাম প্রার্থী রূপা বাগচিরও পরিকল্পনা ছিল, রোদে কম ঘুরে কোথাও ছাদের নীচে বসে ভোটারদের সঙ্গে ছোট ছোট বৈঠক। রূপা সেটাই করেছেন। সকালে উল্টোডাঙায় একটি বাড়িতেই এলাকার ক’জন ভোটারকে ডেকে নিয়ে গল্প করলেন। পরে কুমোরটুলিতেও ছায়ায় বসে প্রচার। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে চিৎপুরের যে বাড়িটায়, সেখানে ঢুকে ছাদে দাঁড়িয়ে গঙ্গার বাতাসের লোভে কিছু ক্ষণ থমকে গেলেন প্রার্থী। লুয়ের ফাঁকে এক ঝলক স্নিগ্ধ স্পর্শ মিলল।

প্রচারের এত ঝক্কিতেও অটুট রয়েছে কোনও কোনও প্রার্থীর রসবোধ। এক জন বলছিলেন, “এ দেশে আমেরিকার ঘড়ি মেনে প্রচার করা গেলেই বেশ হতো! ওদের সকাল মানে, আমাদের সন্ধেয় প্রচার শুরু। রাতভর প্রচার চালিয়ে রোদ উঠতেই বাড়ি ঢুকে যেতাম!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

riju basu lok sabha vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE