Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সময়ে আবেদন করেও এল না অনুদান, বঞ্চিত বহু হাই-মাদ্রাসা

সরকারি অনুদান পেতে একই সঙ্গে করা হয়েছিল আবেদন। অথচ, পৃথক ফল হল এক যাত্রায়। হাওড়ার প্রায় সাড়ে পাঁচশো হাইস্কুলের মধ্যে ১৮২টি এ বছর কেন্দ্রীয় অনুদান পাচ্ছে। কিন্তু একই সময়ে আবেদন করেও একই জেলার ৩০টি হাই-মাদ্রাসার ভাঁড়ার থাকছে শূন্য।

নুরুল আবসার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

সরকারি অনুদান পেতে একই সঙ্গে করা হয়েছিল আবেদন। অথচ, পৃথক ফল হল এক যাত্রায়। হাওড়ার প্রায় সাড়ে পাঁচশো হাইস্কুলের মধ্যে ১৮২টি এ বছর কেন্দ্রীয় অনুদান পাচ্ছে। কিন্তু একই সময়ে আবেদন করেও একই জেলার ৩০টি হাই-মাদ্রাসার ভাঁড়ার থাকছে শূন্য।

পরিস্থিতির জন্য রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের দিকেই আঙুল তুলেছেন হাই-মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকেরা। তাঁদের ক্ষোভ, বিধি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা মেটাতে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের ব্যর্থতা এবং তৎপরতার অভাবেই এই পরিস্থিতি। অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারেননি রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। তবে তাঁর দাবি, দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের (আরএমএসএ) অধীনে নবম-দশম শ্রেণির জন্য অনুদান দেয় কেন্দ্র। ২০০৯-এ শুরু হওয়া এই প্রকল্পের টাকায় বাড়তি ক্লাসঘর, গ্রন্থাগার, পরীক্ষাগার, প্রান্তিক এলাকায় শিক্ষকদের আবাসন তৈরি করতে পারে স্কুল বা হাই-মাদ্রাসাগুলি। কিন্তু অনুদানের অন্যতম প্রধান শর্ত হল, স্কুলের পরিচালন সমিতি তৈরি করতে হবে সরকারি নিয়ম মেনে। সেখানে সরকার-নির্দিষ্ট সদস্যদের রাখতে হবে।

যারা এই শর্তে রাজি, সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে ২০১৩-র অক্টোবরের মধ্যে ‘সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত’ (গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড) হতে আবেদন করতে বলা হয়। রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর এ ব্যাপারে যথা সময়ে স্কুলগুলিকে সচেতন করলেও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের তরফে তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের একটা বড় অংশের। ওই দফতর এ ব্যাপারে নির্দেশ না পাঠানোয় অনেকেই বিষয়টি জানতে পারেননি। রাজ্যে মোট হাইমাদ্রাসার সংখ্যা ৬১৪টি। তাদের মধ্যে নদিয়ার মোট ১৮টি, মালদহের মোট ৮১টি এবং মুর্শিদাবাদের মোট ১১১টি হাই মাদ্রাসার একটিও সরকারি অনুমোদন পেতে আবেদন করেনি। হাওড়ার ৩০টি-সহ মোট ৫০টি হাই-মাদ্রাসা অবশ্য ওই আবেদন করেছিল।

শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এ রাজ্যের ১২ হাজার হাইস্কুলের মধ্যে হাজার দেড়েক এ বছর আরএমএসএ-র অনুদান পাচ্ছে। প্রায় হাজারটি স্কুলে অনুদান ইতিমধ্যে চলেও গিয়েছে। স্কুলপিছু ৫০ হাজার টাকা ছাড়াও, কয়েকটি বাছাই স্কুলকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৪০-৫০ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ, আবেদন করার পরেও ওই ৫০টি হাই-মাদ্রাসা এ বছর আর টাকা পাবে না প্রক্রিয়াগত জটিলতায়। কয়েক কোটি টাকার কেন্দ্রীয় অনুদানে বঞ্চিত হল তারা।

যদিও হাই-মাদ্রাসাগুলির অনুদান চাওয়ার দাবি যে যথাযথই ছিল, তার প্রমাণ মিলেছে খাজনাবাহালা হাই মাদ্রাসাটিতে গিয়ে। সেখানে শুধু নবম ও দশম শ্রেণিতেই পড়ুয়া প্রায় ৪০০। সরকারি নিয়ম হল ৪০ জন পড়ুয়াপিছু চাই একটি ক্লাসঘর। সে হিসেবে দরকার ছিল ১০টি ক্লাসঘর। রয়েছে তিনটি। পরীক্ষাগারের জন্য প্রচুর যন্ত্রপাতি এসেছে। কিন্তু তা রাখার জায়গা নেই। বইপত্র রাখার জায়গা নেই গ্রন্থাগারে। প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামের আক্ষেপ, “একে তো অন্য স্কুলের লোকেদের থেকে জেনে কেন্দ্রের অনুদানের জন্য আবেদন করলাম। যাদের থেকে জেনে আবেদন করলাম, তারা অনুদান পেল। অথচ, দরকার থাকলেও আমরাই বঞ্চিতই রয়ে গেলাম।”

কেন এই সমস্যা?

মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, এর পিছনে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের দীর্ঘসূত্রিতা এবং সদর্থক পদক্ষেপ করায় অনীহা। আবার মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতির রাজ্য কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি সৈয়দ নুরে খোদার বক্তব্য, “গলদ রয়েছে অন্যত্রও। সংখ্যালঘু মর্যাদাপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাই-মাদ্রাসাগুলির পরিচালন সমিতির সব সদস্যই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। আবার আরএমএসএ প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে পরিচালন সমিতিতে সরকার যে সদস্যদের রাখবে, তাঁরা সবাই সংখ্যালঘু হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। এই সমস্যার ফাঁস কাটিয়ে কী ভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পাওয়া যায়, সেটাই দেখা দরকার ছিল।”

মাদ্রাসা বোর্ডের অধিকর্তা আবিদ হোসেন জানান, কেন্দ্রীয় অনুদান পেতে আগ্রহী হাই-মাদ্রাসাগুলির আবেদন পাঠানো হয়েছিল মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ওই দফতরের। আমতা আমতা করে মন্ত্রী বলেছেন, “কোন পদ্ধতিতে গেলে হাই মাদ্রাসাগুলিকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে আনা যাবে, সে বিষয়ে আমাদের আইনজীবী সেলের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।” কিন্তু ২০১৩ সালে করা আবেদনের ভিত্তিতে দু’বছর পরেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া গেল না জানতে চাওয়া হলে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

হাই-মাদ্রাসাগুলির প্রধান শিক্ষকদের একটা বড় অংশ এবং পরিচালন সমিতির অনেকেরই মন্তব্য, “সংখ্যালঘু ভোটে টান না পড়লে সরকারের টনক নড়বে না।”

সহ প্রতিবেদন: অনল আবেদিন এবং মনিরুল শেখ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE