Advertisement
E-Paper

হলদিয়া যাচ্ছেন না বুদ্ধ, নেতৃত্ব বদলে জট

বিদায় নিয়েছেন এক কালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা লক্ষ্মণ শেঠ। তাঁর পিছু পিছু দল ছেড়েছেন জেলার আরও এক ঝাঁক নেতা। তার পরেও বিগত লোকসভা ভোটে জেলায় দলের ফল হয়েছে অন্যান্য জেলার চেয়ে ভাল। কিন্তু এ বার সেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দলের হাল কার হাতে যাবে, সেই প্রশ্নে নতুন করে গোল বেধেছে সিপিএমে! জেলা সম্মেলনের আগে পূর্ব মেদিনীপুর সিপিএমের নানা শিবির যখন নতুন করে ঘুঁটি সাজাচ্ছে, সেই সময়েই আহার ওই জেলা-সফরের কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:১৪

বিদায় নিয়েছেন এক কালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা লক্ষ্মণ শেঠ। তাঁর পিছু পিছু দল ছেড়েছেন জেলার আরও এক ঝাঁক নেতা। তার পরেও বিগত লোকসভা ভোটে জেলায় দলের ফল হয়েছে অন্যান্য জেলার চেয়ে ভাল। কিন্তু এ বার সেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দলের হাল কার হাতে যাবে, সেই প্রশ্নে নতুন করে গোল বেধেছে সিপিএমে!

জেলা সম্মেলনের আগে পূর্ব মেদিনীপুর সিপিএমের নানা শিবির যখন নতুন করে ঘুঁটি সাজাচ্ছে, সেই সময়েই আহার ওই জেলা-সফরের কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দলের এ বারের সম্মেলন-পর্বে এখনও পর্যন্ত কলকাতার বাইরে শুধু নন্দীগ্রামের জেলাতেই যাওয়ার কথা ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। হলদিয়ায় আগামী রবিবার জেলা সম্মেলনের সমাবেশে তিনিই প্রধান বক্তা, এই মর্মে প্রচারও হয়ে গিয়েছিল জেলায়। কিন্তু বুদ্ধবাবুর সিদ্ধান্ত, পূর্ব মেদিনীপুরেও তিনি শেষ পর্যন্ত যাবেন না। তাঁর অপারগতার কথা দলকে জানিয়েও দিয়েছেন এই পলিটব্যুরো সদস্য, এমনই খবর সিপিএম সূত্রে।

শারীরিক কারণেই ইদানীং কলকাতার বাইরে যাওয়া স্থগিত রেখেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে ২০১২ সালের সম্মেলনে যে ক’টি জেলায় গিয়েছিলেন, এ বার তার তুলনায় কিছুই করতে পারেননি। হলদিয়ায় না যাওয়ার পিছনেও শারীরিক সমস্যাকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে কারণ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে দলীয় মহলে। কিন্তু আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে নেতৃত্ব বদলের প্রক্রিয়া নিয়ে দলের অন্দরে যা চলছে, তাতে অত্যন্ত বিরক্ত পলিটব্যুরোর এই বর্ষীয়ান সদস্য। বুদ্ধবাবুর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “গাড়িতে কয়েক ঘণ্টার সফর করে হলদিয়া যাওয়া হয়তো অসম্ভব নয়। কিন্তু পরিস্থিতির বিচারেই উনি যেতে চান না!” দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, ঠিক যে কারণে কলকাতা জেলা সম্মেলনের শেষ পর্বে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ঢোকেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, পূর্ব মেদিনীপুর এড়িয়ে যাওয়ার নেপথ্যেও একই প্রেক্ষাপট কাজ করছে!

লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ নেতারা সিপিএম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে পূর্ব মেদিনীপুরে আপাতত দল চালানো হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধানকে দিয়ে। তিনিই ওই জেলায় এখন প্রবীণতম দলীয় সদস্য। আলিমুদ্দিনের ইচ্ছা, লক্ষ্মণ-মুক্ত দলকে চাঙ্গা করতে আরও একগুচ্ছ জেলার মতো পূর্ব মেদিনীপুরেও নেতৃত্ব বদল হোক। লোকসভা ভোটে এই জেলায় তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে লড়াই করেও বিজেপি-র উত্থান ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল সিপিএম। বুদ্ধবাবুদের পরিকল্পনা, সেই ভিতের উপরে দাঁড়িয়েই নতুন করে দলকে গড়ে তোলার চেষ্টা হোক। কিন্তু বাদ সেধেছে দলের অন্দরের বিবাদ! প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি নতুন জেলা সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে আছেন। সিপিএম সূত্রের খবর, তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতা রবীন দেব। কিন্তু কৃষক সভার নেতা নিরঞ্জনবাবুকে সম্পাদক করা হলে সিটু নেতা নির্মল জানা ও তাঁর অনুগামীদের বিদ্রোহের ইঙ্গিত আবার এসে পৌঁছেছে আলিমুদ্দিনের কাছে! এখন তাই সঙ্কট নিরসনের রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে।

দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “এক জন দায়িত্ব পেলে অন্য আর এক দল মানবে না, এই পরিস্থিতি এখন কোনও ভাবেই কাম্য নয়। তার চেয়ে তৃতীয় কাউকে দায়িত্বে আনাই ভাল।” দলের একাংশের মতে, সঙ্কট সামলাতে বাজি হতে পারেন যুব সংগঠনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক তাপস সিংহ। নানা জায়গায় নানা ভূমিকায় কাজ করে আসার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তাপসবাবুকে দায়িত্ব দেওয়ার ‘ঝুঁকি’ নিলে আখেরে ভবিষ্যতে উপকার হবে বলেই ওই অংশের মত। জেলারই এক নেতার কথায়, “ভোটাভুটি বা দলে আরও ভাঙন, এর কোনওটাই নিশ্চয়ই এখন কাঙ্খিত নয়! তা হলে

নিরপেক্ষ মুখ হিসাবে কাউকে তুলে আনাই ভাল।”

সম্প্রতি কলকাতা জেলা সিপিএমে নেতৃত্ব নিয়ে একই রকম সঙ্কটে পড়ে বিবদমান দুই শিবিরকে ঠেকিয়ে বর্ষীয়ান নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে দায়িত্বে এনেছিলেন রবীনবাবুরা। পূর্ব মেদিনীপুরেও একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি হয়ে প্রশান্তবাবুকে পদে রেখে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দলের মধ্যেই। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “দুই শীর্ষ নেতা বিমান বসু এবং সূর্যকান্ত মিশ্র জেলা সম্মেলনে থাকবেন। তাঁরা নিশ্চয়ই খোলা মনে সিদ্ধান্ত নেবেন।”

দলের মধ্যেই এখন প্রশ্ন, হলদিয়া না গিয়েও ‘খোলা মনে’র সিদ্ধান্তে কি ভূমিকা নেবেন বুদ্ধবাবু?

haldia sandipan chakrabarty buddhadeb bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy