E-Paper

বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র, এক রাতেই শেষ পরিবারের ৪০ জন

হামাস-ইজ়রায়েলের যুদ্ধে ৯ হাজারের বেশি প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে। এর বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। ৩২ হাজারের বেশি মানুষ জখম। প্রতি দিন, প্রতি রাতে বোমাবর্ষণ শুরু হতেই কয়েকশো মানুষ প্রাণ হারান।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৫
Israel Palestine Conflict

হামাস-ইজ়রায়েলের যুদ্ধে ৯ হাজারের বেশি প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে। —ফাইল চিত্র।

সারা দিন ধরে গুলিবোমার আওয়াজ। ধ্বংসস্তূপের মাঝে বসে মৃত্যুভয়টাও যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। সন্ধেবেলা বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন আমানি আল-হোর। মনটাকে একটু অন্য দিকে সরিয়ে রাখতে ভাইবোনদের সঙ্গে তাস খেলতে বসেছিলেন। রাত বাড়তে উঠে পড়েন, চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাড়ির দিকে এগোন। কাছেই নিজের বাড়ি। সবে বাড়িতে পা রেখেছেন, আচমকা প্রবল বিস্ফোরণ।

গাজ়ায় এখন এ রোজের কাহিনি। ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েছিল মা-বাবার বাড়িতে। সেই সন্ধ্যায় নুসেরাত শরণার্থী শিবিরে আমানির বাপের বাড়িতে আটটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। আমানির বাবা-মা, তাঁদের তিন বিবাহিত ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনিরা, দুর্সম্পকের আত্মীয়েরা... ঘরবাড়ি ছেড়ে সকলে এক জায়গায় উঠেছিলেন। বিপদের সময়ে একসঙ্গে থাকছিলেন। ইজ়রায়েলি বিমান বাড়িটিকে নিশানা করে। এক রাতে আমানির পরিবারের ৪০ জন শেষ। আমানি বলেন, ‘‘আমি কিছু শুনতে পাইনি। হঠাৎ করে মনে হল আমি কবরে। অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে ছেলেমেয়েদের খুঁজে বার করি। কোনও মতে বেরিয়ে আসি বাইরে। আমার বোন, তাঁর চার ছেলেমেয়ে, ভাই, ভাইয়ের বৌ, তাঁদের মেয়েরা, বৌদি, তাঁর সন্তান... সকলে মারা গিয়েছেন। বাড়িতে অনেক লোকজন ছিল। বাচ্চাগুলো এখনও ধ্বংসের নীচে চাপা পড়ে।’’

আমানির মায়ের দেহটা বিস্ফোরণে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে শুধু দু’টো হাত দেখতে পেয়েছেন। পেটের ভিতর থেকে অন্ত্র বেরিয়ে এসেছে...। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘আমিও যদি মরে যেতাম, ভাল হত। এ দৃশ্য দেখতে হত না।’’ শুধু আমানির মা নন, এই পরিণতি হয়েছে পরিবারের অনেকেরই। ওই বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও পর্যন্ত ১৮টি দেহ বার করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু মৃতদেহের টুকরো। সেগুলি কার দেহাংশ, তা বোঝার উপায় নেই।

হামাস-ইজ়রায়েলের যুদ্ধে ৯ হাজারের বেশি প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে। এর বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। ৩২ হাজারের বেশি মানুষ জখম। প্রতি দিন, প্রতি রাতে বোমাবর্ষণ শুরু হতেই কয়েকশো মানুষ প্রাণ হারান। হাসপাতালগুলোর ভয়াবহ অবস্থা। বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জল নেই, চিকিৎসা সামগ্রী নেই। ইতিমধ্যেই গাজ়ায় ১৫টি হাসপাতাল কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এর অর্থ, এই হাসপাতালগুলোর থেকে রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু যেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেই সব হাসপাতালে আগে থেকেই উপচে যাওয়া ভিড়। শুধু তো রোগী নয়, হাজার হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে হাসপাতালের করিডর, চাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। এই আশায়, যে ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমান হাসপাতালে হামলা চালাবে না। যদিও হাসপাতাল হোক কিংবা ধর্মস্থান, গাজ়ার কোনও জায়গাই আর নিরাপদ নেই।

কবরস্থানগুলিতেও ভিড়। মুখতার আল-হোর নামে ৫৭ বছর বয়সি এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘শেষকৃত্যেরও তো কিছু নিয়ম আছে। সাধারণ সময়ে কারও মৃত্যুর পরে কয়েকশো মানুষ আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। তার পর মরদেহ কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় কবরস্থানে। এখন এমন অবস্থা, প্রিয়জনের জন্য শেষ প্রার্থনাটুকু করার লোক অবশিষ্ট নেই।’’ কবরস্থানেও জায়গার অভাব। ডের এল-বালা শহরের মেয়র ডিয়াব আল-জারু বলেন, ‘‘এত লোক মারা যাচ্ছেন, কোথায় কবর দেব! গণকবর দিতে হচ্ছে। গত শুক্রবার রাতে ১৫০ জন মারা গিয়েছেন। কী করব! সকলকে এক সঙ্গে কবর দিতে হল।’’

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরে তেল আভিভে এসেছেন সে দেশের বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গাজ়ায় এত সংখ্যক মৃত্যু আটকানোর জন্য তিনি আর্জি জানিয়েছেন ইজ়রায়েলি নেতামন্ত্রীদের কাছে। ইজ়রায়েলের অবশ্য জবাব তৈরিই ছিল। তারা জানিয়েছে, ইজ়রায়েল যে হামলার গতি বাড়াবে, সে কথা জানিয়ে হাজার হাজার প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে গাজ়ার বিভিন্ন প্রান্তে। আগেই থেকে সতর্ক করা হয়েছে প্যালেস্টাইনিদের। শুনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘‘আমরা ইজ়রায়েলের পাশে আছি। ইজ়রায়েলের আত্মরক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে।’’ যদিও এই উত্তর নেই, গাজ়ার মানুষগুলো পালিয়ে যাবে কোথায়!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Israel Palestine Conflict Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy