যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলার জেরে এ বার কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হলেন ত্রাণ সরবরাহ করতে আসা ‘ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন’ সংগঠনের সাত কর্মী। সোমবার রাতে, ঘটনার সময়ে গাড়িতে ও কর্মীদের উর্দিতে সংগঠনের লোগো ছিল। তা-ও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রথমে ঘটনার দায় অস্বীকার করলেও পরে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও ইজ়রায়েলি বাহিনী (আইডিএফ) মেনে নিয়েছে যে, এই হামলা ইজ়রায়েল-ই চালিয়েছে। তবে একই সঙ্গে নেতানিয়াহুর মন্তব্য, ‘যুদ্ধে এমন হতেই থাকে’। এ দিকে, হামলার কথা জানার পর থেকেই গাজ়ায় সব ধরনের মানবাধিকার সাহায্য পাঠানো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই সংগঠন।
ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কিছু কর্মী মঙ্গলবার জলপথে আসা ১০০ টন খাবার নিয়ে দু’টি গাড়ি করে মধ্য গাজ়া স্ট্রিপের দিকে যাচ্ছিলেন। তবে তাঁদের গাড়িগুলি দের আল-বালা ছাড়িয়ে যেতেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়। এক প্যালেস্টাইনি চালক-সহ সাত জনের দেহ উদ্ধার হয়। নিহতেরা প্যালেস্টাইন, আমেরিকা, পোল্যান্ড, ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। বুলেট প্রুফ, সংগঠনের লোগো দেওয়া জ্যাকেট পরা রক্তাক্ত দেহগুলি প্রথমে গাজ়ার আল আকসা হাসপাতালে ও পরে রাফার আবু ইউসেফ আল নজ্জর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানানো হয় যে রাফা ক্রসিং দিয়ে সেগুলি নিয়ে যাওয়া হবে।
মঙ্গলবার কর্মীদের নিহত হওয়ার খবরের পাশাপাশি ওই সংগঠন জানিয়েছে যে, ইজ়রায়েলের বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখেই যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইনের সাধারণ নাগরিকদের খাবার পাঠাচ্ছিল তারা। তাদের কর্মীদের উপরে এই হামলা চালানোর পরে গাজ়ায় এ বার থেকে সব রকমের সহায়তা দেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা। যে ২৪০ টন সাহায্য পাঠানো হচ্ছিল গাজ়ায়, তা-ও এ বার ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। সংগঠনের এই সিদ্ধান্তের পরে নানা মহলের আশঙ্কা— এর ফলে গাজ়ায় আগামী দিনে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে।
এ দিনের ঘটনার ছবি ও ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। রক্তাক্ত দেহ ও ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলির ছবি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া, সাইপ্রাস, মিশর, ইরান, জর্ডান, পোল্যান্ড, স্কটল্যান্ড-সহ বেশ কিছু দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। হামাস পরিচালিত মন্ত্রকের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, এই ভাবে মানবাধিকার কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়ে, তাঁদের আতঙ্কিত করে ইজ়রায়েল চায় গাজ়ায় সাহায্যের সব রকম পথ আটকে দিতে। একই সঙ্গে আল শিফা হাসপাতালের উপরে হামলা চালিয়ে, তা কার্যত গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ‘আল শিফার ধ্বংস (গাজ়ার) স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দেওয়ার সমান’, এমনই মন্তব্য করেছেন হু-এর মুখপাত্র।
এ দিনের হামলার কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আইডিএফ-এর তরফে দেওয়া একটি বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলা হয়েছে। ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে তারা। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ভবিষ্যতে যাতে এমন না ঘটে, তা তিনি নিশ্চিত করবেন। তবে একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন, ‘যুদ্ধে এমন হতেই থাকে’। নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে নানা মহলে। একই সঙ্গে উঠেছে মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)