Advertisement
E-Paper

অস্ট্রিয়ায় ট্রাকে দমবন্ধ হয়ে ৭১ জন শরণার্থীর মৃত্যু

এক দিকে ইসলামিক স্টেট-এর জঙ্গিরা। অন্য দিকে প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের সেনা। দুইয়ের মাঝে পড়ে নাভিশ্বাস সাধারণ সিরিয়াবাসীর।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ১৮:৩৫
সরানো হচ্ছে শরণার্থীদের দেহ। ছবি: এএফপি।

সরানো হচ্ছে শরণার্থীদের দেহ। ছবি: এএফপি।

এক দিকে ইসলামিক স্টেট-এর জঙ্গিরা। অন্য দিকে প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের সেনা। দুইয়ের মাঝে পড়ে নাভিশ্বাস সাধারণ সিরিয়াবাসীর। গৃহযুদ্ধ বিধস্ত সিরিয়া থেকে তাঁরা দলে দলে দেশ ছাড়ছেন। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ইরাক, লিবিয়ার মতো গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশের নাগরিকরাও। কখন তাঁদের গন্তব্য তুরস্ক, জর্ডনের মতো প্রতিবেশী দেশ, কখনও আরও ঝুঁকি নিয়ে সরাসরি ইউরোপে। বহুপথ পেরিয়ে, বহুক্লেশ সয়ে একটু নিরাপত্তা, একটু সুস্থ জীবনের সন্ধান। আর এর ফলেই ইউরোপের শরণার্থী সমস্যার ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার সেই ভয়াবহতার আরও এক প্রমাণ মিলল অস্ট্রিয়ায়। বন্ধ ট্রাক থেকে মিলল ৭১ জন শরণার্থীর মৃতদেহ। দমবন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান।

স্বদেশে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হলে একটি হিমায়িত ট্রাকের মধ্যে ৭১ জন মানুষ লুকিয়ে থাকতে পারেন তা অনুমান করে শিউরে উঠছেন মানবাধিকার কর্মীরা। বুধবার রাত থেকে ট্রাকটি দাঁড়িয়ে ছিল অস্ট্রিয়ার ব্যস্ত সড়ক এ-৪। চালক ছিল না। হিমায়িত অংশটি বন্ধ ছিল। এ ধরনের ট্রাক সাধারণত হিমায়িত মাংস পরিবহণ কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা ভেবেছিলেন বিকল হয়েই দাঁড়িয়ে পড়েছে গাড়িটি। কিন্তু পরে স্থানীয় বাসিন্দারা খেয়াল করেন লরির গা বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। সঙ্গে পচা গন্ধ। বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধার কাজে নেমে পুলিশ দেখে তাতে মৃতদেহ ভর্তি।

দেহগুলিতে এমন ভাবে পচন ধরেছিল যে সংখ্যা গোনা যাচ্ছিল না। পরে দেখা যায় মোট ৭১টি মৃতদেহ। পুলিশের প্রাথমিক ভাবে অনুমান এই ট্রাকের ৫৯ জন পুরুষ, আট জন মহিলা, চারটি শিশুর দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। মৃতদেহের সঙ্গে মেলা নথি থেকে পুলিশের অনুমান এঁরা সিরিয়ার শরণার্থী। এখানেই শেষ নয়, এর মধ্যেই আবার ভূমধ্যসাগরের উপকূলে দেহ ভেসে আসার খবর মিলতে শুরু করেছে। ইউরোপের নানা সীমান্ত অঞ্চলে তাঁবু খাটিয়ে তীব্র কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন শয়ে শয়ে শরণার্থী। মাঝে মাঝে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে কোনওক্রমে কাঁটাতারের ফাঁক গলে ইউরোপের নানা দেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে। পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঘুরপথে ঢোকার চেষ্টা করছেন অনেকে। ফলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচার চক্র।

পুলিশের অনুমান সিরিয়ার এই দলটি কোনও মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়েছিল। মোটা অর্থের বিনিময়ে যেনতেন প্রকারে শরণার্থীদের ইউরোপের নানা দেশে ঢুকিয়ে দেয় এই চক্রগুলি। অনেক সময়ে সফল হয়, অনেক সময়ে এমন কাণ্ড ঘটে। পুলিশ বুলগেরিয়ান-অস্ট্রিয়ান একটি চক্রকে সন্দেহ করছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, হাঙ্গেরি থেকে ট্রাকটি অস্ট্রিয়ায় আসছিল। হাঙ্গেরির নেমপ্লেট লাগানো ট্রাকটি বুদাপেস্ট থেকে বুধবার রওনা দিয়েছিল। এর মধ্যেই হাঙ্গেরি থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, তাঁরাই এই ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। ট্রাকটির গন্তব্য ছিল ভেনিস। মৃতদেহগুলি দেখে পুলিশ জানিয়েছে হাঙ্গেরি থেকে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশের সময়েই শরণার্থীদের দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়।

পশ্চিম এশিয়ার নানা দেশে গৃহযুদ্ধ চলায় এ বছরের ইউরোপে শরণার্থীদের ঢল নেমেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ ও নানা মানবাধিকার সংগঠন এই সমস্যাকে ঐতিহাসিক বলে চিহ্নিত করেছে। শরণার্থীর চাপে ইতালি, গ্রিসের মতো দেশের অবস্থা সঙ্গীন। পাশাপাশি অভিযোগ ইউরোপের অনেক ধনী দেশ এই সম্পর্কে উদাসীন। যা সমস্যাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। শুধু জুলাই মাসেই ইউরোপে এক লক্ষের বেশি শরণার্থী প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে সঙ্কটের ছবিটি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে।

71 dead 71 syrian dead austria truck frozen truck syrian deadbody islamic state wartorn syria war affected syria syria refugee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy