Advertisement
E-Paper

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বার ক্যামেরাবন্দি ভুতুড়ে হাঙর! বিস্মিত গবেষকরা

ঘোলাটে, প্রাণহীন, নিশ্চল দু’টো চোখ। তীক্ষ্ণ ফলার মতো সামনের দিকে ঠিকরে এসেছে নাকটা। চোয়ালের আকার আর মাথাটাকে ঘিরে থাকা ছোপগুলো যেন কোনও সুদূর প্রাগৈতিহাসিক সময়ের চিহ্ন বহন করছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৬:১০
প্রশান্ত মহাসাগরের সুগভীর অঞ্চলে এই ভুতুড়ে হাঙরটিকেই দেখা গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশান্ত মহাসাগরের সুগভীর অঞ্চলে এই ভুতুড়ে হাঙরটিকেই দেখা গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

ঘোলাটে, প্রাণহীন, নিশ্চল দু’টো চোখ। তীক্ষ্ণ ফলার মতো সামনের দিকে ঠিকরে এসেছে নাকটা। চোয়ালের আকার আর মাথাটাকে ঘিরে থাকা ছোপগুলো যেন কোনও সুদূর প্রাগৈতিহাসিক সময়ের চিহ্ন বহন করছে।

‘ভুতুড়ে হাঙর’। আরও একটা নাম রয়েছে তার— শিমেরা। গ্রিক পূরাণে এই নাম প্রথম খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।

সমুদ্র বিশেষজ্ঞ বা সমুদ্রজীবীদের কাছে ভুতুড়ে হাঙর কিন্তু পরিচিত নাম। কিন্তু শুধু নামটাই পরিচিত, অস্তিত্বটা কারও কাছেই তেমন স্পষ্ট ছিল না। ভুতুড়ে হাঙরের সঙ্গে আলাপ হোক, নাবিকরা এমনটা চানও না সচরাচর। কেন চান না, নামটা শুনলেই সেটা বেশ খানিকটা স্পষ্ট হয়ে যায়।

আতঙ্কটা প্রথম বার হানা দিয়েছিল ২০০২ সালে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং নিউ ক্যালিডোনিয়ার মাঝে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের নির্জন বিস্তারে প্রথম বার দেখা গিয়েছিল ভুতুড়ে হাঙর। দমিনিক দিদিয়ের দাগিত নামে এক গবেষক তার দেখা পেয়েছিলেন। নির্জন সমুদ্রে ভুতুড়ে হাঙরের দেখা পাওয়ার অভিজ্ঞতা হাড় হিম করে দেওয়ার মতোই ছিল সম্ভবত। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম গবেষক হিসেবে ভুতুড়ে হাঙরের দেখা পেয়ে দাগিত উচ্ছ্বসিতও হয়েছিলেন। কিন্তু আমেরিকার মন্টেরি বে অ্যাকোয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা সম্প্রতি যে ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছেন, তা অনেককেই চমকে দিয়েছে। কারণ এই প্রথম গভীর মহাসমুদ্রের নীচে শিমেরা বা ভুতুড়ে হাঙরের ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য ভিডিও রেকর্ড করা সম্ভব হয়েছে।

ভিডিও সৌজন্য: মন্টেরি বে অ্যাকোয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

শরীরের ফ্যাকাসে নীল আভায় যেন মৃত্যুর শীতল স্পর্শ, নিষ্পলক চোখে সেই হাড় হিম করে দেওয়া প্রাণহীন দৃষ্টি, সেই ঠিকরে আসা তীক্ষ্ণ নাক আর পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক জীবের মতো সেই চোয়াল— সামুদ্রিক আতঙ্কের প্রতিমূর্তি যেন ধরা পড়েছে সেই ভিডিওয়।

কাছ থেকে এই রকম দেখতে ভুতুড়ে হাঙরকে। ছবি: সংগৃহীত।

ওয়াশিটন পোস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিডিওটি নতুন নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের এক গভীর অঞ্চল থেকে ২০০৯ সালে এই ছবি তুলে এনেছিলেন মন্টেরি বে অ্যাকোয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিইটের গবেষকরা। লনি লুন্ডসেন নামে এক বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। সমুদ্রের গভীরতম অঞ্চলে জীবজগতের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য সে বছর কয়েকটি চালকবিহীন, রিমোট নিয়ন্ত্রিত জলযানকে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে পাঠিয়েছিলেন গবেষকরা। ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাঝখানে প্রশান্ত মহাসাগরের যে বিস্তার, সেই এলাকায় সমুদ্রের এমন কিছু অংশে এই জলযান নামানো হয়েছিল, যেখানে সচরাচর মানুষ পৌঁছয় না বা যে এলাকার জীবজগতের তথ্য মানুষের কাছে অনেকটাই অন্ধকারে ঢাকা। ভুতুড়ে হাঙরের খোঁজ নেওয়ার জন্যই যে জলযানগুলি পাঠানো হয়েছিল, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৭০০ ফুট গভীরে গিয়ে ছবি তুলে জলযানগুলি ফিরে আসার পর গবেষকরা স্তম্ভিত হয়ে যান। কারণ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বার সমুদ্রের গভীরতম অঞ্চলে ভুতুড়ে হাঙরের ভেসে বেড়ানোর ছবি ধরা পড়েছিল ক্যামেরায়।

দক্ষিণ গোলার্ধে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং নিউ ক্যালিডোনিয়ার মাঝে এই অঞ্চলে প্রথম বার দেখা গিয়েছিল ভুতুড়ে হাঙর।

লনি লুন্ডসেন কিন্তু নিজের এবং সহকর্মীদের এই বিরাট কৃতিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি। তাই সমুদ্রের গভীর থেকে উঠে আসা ভিডিওটি বেশ কয়েক জন প্রখ্যাত শিমেরা বিশেষজ্ঞকে দেখান তাঁরা। বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন, ওই ছবি ভুতুড়ে হাঙরেরই। লুন্ডসেনরা তবু কিছুটা সন্দিহান। কারণ এত দিন পর্যন্ত সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা জানতেন, শুধুমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরেই শিমেরার দেখা মেলে। ক্যালিফোর্নিয়া এবং হাওয়াই-এর মাঝেও যে এই বিরল সামুদ্রিক জীবটি রয়েছে, তা এর আগে কারওরই জানা ছিল না। উত্তর গোলার্ধে এই প্রথম বার ভুতুড়ে হাঙরকে দেখা গিয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল আর হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাঝে অবস্থিত এই অংশেই গভীর সমুদ্রে ভুতুড়ে হাঙরের দেখা মিলেছে এ বার।

মন্টেরি বে অ্যাকোয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ভুতুড়ে হাঙরের ভিডিও সংগ্রহ করে ওয়াশিংটন পোস্ট তা প্রকাশ্যে এনেছে বটে। তবে এটি ঠিক কোন প্রজাতির শিমেরা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। র‌্যাট ফিশ, র‌্যাবিট ফিশ, স্পুক ফিশ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত ভুতুড়ে হাঙরের বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে বলে গবেষকরা জানাচ্ছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে যে প্রজাতির ভুতুড়ে হাঙরের দেখা মিলেছিল, লুন্ডসেনদের ভিডিওয় কয়েদ হওয়া ভুতুড়ে হাঙরও সেই প্রজাতিরই কি না, সে সম্পর্কে গবেষকরা এখনও নিশ্চিত নন।

আরও পড়ুন: মঙ্গলে আবার মিলল প্রাচীন সভ্যতার স্তম্ভ? নাসা কী বলছে?

লুন্ডসেনদের ভিডিওয় যে ভয়ঙ্কর চেহারাটা ধরা পড়েছে, তা থেকে অবশ্য স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, এই হাঙরের নাম ভুতুড়ে হাঙর কেন হয়েছে।

Weird Animals Shark Ghost Shark Pacific Ocean
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy