E-Paper

বাংলাদেশে ঘরে ফেরাই সাদিকুলের ‘বড় দিন’

মানসিক সমস্যার জেরে দিনাজপুরের দোলুয়া গ্রামের বাড়ি থেকে প্রায় দু’দশক আগে ছিটকে গিয়েছিলেন সাদিকুল। কোনও ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে নানা বিপর্যয়ের পরে বছর দশেক পাভলভ হাসপাতালে কাটান তিনি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৪
শেখ সাদিকুল ইসলাম।

শেখ সাদিকুল ইসলাম। —ফাইল চিত্র।

বেনাপোল সীমান্তের ‘নোম্যানস ল্যান্ডের’ কিনারে তাঁর চোখেমুখে ধরা পড়েছিল ক্ষণিকের অনিশ্চয়তা। এর কিছু ক্ষণ বাদেই ভাইয়ের ফোন থেকে শেখ সাদিকুল ইসলাম জানালেন, বাংলাদেশে বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাঁর। গলায় খুশি ঝরে পড়ছে। মানসিক সমস্যার জেরে দিনাজপুরের দোলুয়া গ্রামের বাড়ি থেকে প্রায় দু’দশক আগে ছিটকে গিয়েছিলেন সাদিকুল। কোনও ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে নানা বিপর্যয়ের পরে বছর দশেক পাভলভ হাসপাতালে কাটান তিনি। বুধবার, ২০২৪-এর বড়দিনটা তাঁর কাছে সত্যিকারের বড় দিন হয়ে ধরা পড়ল।

মঙ্গলবার বিকেলে সীমান্তের দু’পারে অভিবাসনের লম্বা আনুষ্ঠানিকতার পরে বাংলাদেশে ঢোকেন ৫০ ছুঁই ছুঁই সাদিকুল। সীমান্ত পেরোনোর আগে পুনর্বাসনের টাস্ক ফোর্স সদস্য বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ‘দিদি’দের কাছে বার বার, দেশে মা-বাবাকে দেখার ইচ্ছের কথা বলছিলেন তিনি। বাসে রংপুর হয়ে বড়দিনের দুপুরেই ঘরের ছেলে দিনাজপুরে ঘরে ফিরলেন। দীর্ঘদিন ধরেই সম্পূর্ণ সুস্থ সাদিকুল। শুধু রাতে একটু ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু পড়শি দেশে বাড়ি বলেই ফিরতে পারছিলেন না তিনি। বাংলাদেশে পালাবদলের পরে নানা টানাপড়েনেও দু’দেশের বিপন্ন নাগরিকদের পুনর্বাসনের কাজটা জারি রেখেছে দু’দেশের যৌথ টাস্ক ফোর্স। মঙ্গলবারই সাদিকুলের সঙ্গে মোট ২৫ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা বেশির ভাগই বিভিন্ন হোমের আবাসিক বা পাচারকন্যা। কয়েক জন নাবালক-নাবালিকাও ছিল। তবে হাসপাতালের আবাসিক সাদিকুলের দেশে ফেরার বাধা কেটেছে জানার পরে আগেই তাঁর বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেরানোর বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলেন পাভলভে সক্রিয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধিকারিকেরা। ওই সংস্থা ‘অঞ্জলি’-র কর্ণধার, মানসিক স্বাস্থ্য অধিকার কর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘অতীতে মানসিক হাসপাতালের কয়েক জন আবাসিককে বাংলাদেশ পাঠালেও তাঁদের বাড়ি ফিরতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর থেকে শিক্ষা নিয়েই আমরা সাদিকুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করাতে সক্রিয় হই। কাজটা সোজা ছিল না। তবে এ পার-ও পার দু’পারের বন্ধুরাই অদ্ভুত আন্তরিকতায় এগিয়ে আসেন।’’

অঞ্জলির কর্মীদের থেকে সাদিকুলের খবর পেয়ে কলকাতাবাসী সমাজকর্মী নাতাশা আহমেদ (জন্মসূত্রে ঢাকার মেয়ে) বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শুধু দিনাজপুর আর সাদিকুলের গ্রামের নাম শুনে অবশ্য ঠিকানা বের করা সম্ভব ছিল না। মিজানুর বলেন, ‘‘সাদিকুল দিনাজপুর শহরে আলুর হিমঘরের পাশে ওঁর খালার বাড়ির কথা বলেছিলেন। সেই সূত্র ধরে এগোই। এর পরে গ্রামের নির্দিষ্ট এলাকাটি চিহ্নিত করে লোক পাঠিয়ে বীরগঞ্জ ডাকঘরের কাছে আমরা বাড়ি-বাড়ি খোঁজ নিই। সাদিকুলের ভাই আজিজুরকে তখনই খুঁজে পাই।’’

ভিডিয়ো কলে সাদিকুলের পেটে কাটা দাগ দেখেই বাড়ির লোক চিনে নেন তাঁকে। দু’দশক আগে সাদিকুলের ভাই নেহাতই ছোট। তবে ওঁর মাথায় চোটের চিহ্ন দেখে সাদিকুলও চিনতে পারেন। ভিডিয়ো কলে বাবার মাথা ভরা পাকা চুল দেখেও সাদিকুল অবাক! তখন ভুলে গিয়েছেন, তিনি নিজেও প্রৌঢ়ত্বের কিনারে। পুনর্মিলন শেষে দু’দেশের প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে রত্নাবলী বলছেন, ‘‘দু’দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে খামোখা যুদ্ধের জিগির তোলা হাস্যকর। দুই বাংলার মানুষের পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সহমর্মিতাই এখনও শেষ কথা বলছে।’’ রাজ্যের মানসিক হাসপাতালগুলিতে আরও জনা দশেক বাংলাদেশি, নিয়মের গেরোয় বন্দি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India-Bangladesh Christmas 2024 Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy