Advertisement
E-Paper

আমি হংকংয়ের! শুনেই ছাত্রীকে হেনস্থা বস্টনে

হুইয়ের দাবি, তার পরেই তাঁর সহযাত্রী বেশ ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করেন, হংকং নয়, হুইয়ের উচিত ছিল নিজেকে চিনের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেওয়া। কারণ সেই ১৯৯৭ সাল থেকেই ব্রিটিশ ওই উপনিবেশের নিয়ন্ত্রণ চিনের হাতে চলে গিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০৫:৩২
ফ্রান্সেস হুই

ফ্রান্সেস হুই

নিজের জায়গা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বস্টন শহরের একটি বাসে বসে সহযাত্রীর কাছ থেকে প্রশ্নটা ধেয়ে এসেছিল তাঁর দিকে। ‘আপনি কোথাকার লোক?’’ কথায় কথায় এখানকার এমারসন কলেজের ছাত্রী ফ্রান্সেস হুই জানান, তিনি হংকংয়ের।

হুইয়ের দাবি, তার পরেই তাঁর সহযাত্রী বেশ ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করেন, হংকং নয়, হুইয়ের উচিত ছিল নিজেকে চিনের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেওয়া। কারণ সেই ১৯৯৭ সাল থেকেই ব্রিটিশ ওই উপনিবেশের নিয়ন্ত্রণ চিনের হাতে চলে গিয়েছে। হুই পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘উনি আমায় বুঝিয়ে গেলেন, আপনি চিনা নাগরিক। আপনার উচিত, নিজের পরিচয় ঠিক করা। আমার ভীষণ অপমানিত লাগছিল। পরিচয় ব্যক্তিগত বিষয়। আমার নিজস্ব ব্যাপার।’’

এমারসন কলেজের পত্রিকায় এ বিষয়ে কলমও ধরেছেন ফ্রান্সেস হুই। যার শিরোনাম, ‘চিন নয়, আমি হংকংয়ের নাগরিক।’ লেখার শুরুতে রয়েছে, ‘‘আমি এমন একটা শহরের মানুষ যেটি এমন একটা দেশের হাতে রয়েছে, যাকে আমি নিজের বলে মনেই করি না।’’ ফ্রান্সেসের এই লেখা প্রকাশ হতেই শুরু হয় বিতর্ক। তাঁর কলেজে থাকা চিনের অনেক পড়ুয়া তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দিতে শুরু করেন বলে জানিয়েছেন হুই। হংকং থেকে এত দূরে থেকেও এমন গভীর সঙ্কটে পড়তে হবে, স্বপ্নেও ভাবেননি ফ্রান্সেস। এই ধরনের লেখা কলেজের ২০-৪০ জন পড়েন সাধারণত। হুইয়েরটি ভাইরাল হয়েছে। হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা এসেছে।

বেজিংয়ের শাসন নিয়ে গত পাঁচ বছর আগে পর্যন্তও প্রতিবাদে মুখর ছিল হংকংয়ের পথঘাট। বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বশাসন বজায় থাকলেও ‘বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল’ হিসেবে হংকংয়ে ধীরে ধীরে প্রতিপত্তি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে চিন। গণতন্ত্রকামী তরুণ প্রজন্মের প্রতিবাদের রাশ নিয়ন্ত্রণ করেছে শক্ত হাতে। এখন হংকংয়ের অন্দরে অনেকের উদ্বেগ, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে স্বাধীনতা রয়েছে, তার উপরেও কোপ পড়বে বেজিংয়ের। ‘বিশেষ মর্যাদা’ পাওয়ার দিনও এ বার শেষ হতে চলেছে হংকংয়ে, এমনটা মনে করছেন অনেকেই। তাই আবার জোরালো প্রতিবাদের পথে হাঁটার কথা ভাবছেন হংকংবাসীদের একটা বড় অংশ।

ব্রিটেনের কাছ থেকে হস্তান্তরিত হওয়ার সময়কার শর্তে যদিও রয়েছে, ২০৪৭ সাল পর্যন্ত হংকংয়ে রাজনৈতিক, বিচার সংক্রান্ত এবং আর্থিক ক্ষেত্রে স্বশাসনের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ২০১৪ সালে হংকংয়ের প্রতিবাদ শুরু হতেই বেজিং আরও কড়া হয়। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে হংকংয়ের আদালতে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে ১৬ মাস কারাবাসের সাজা দেওয়া শুরু হয়েছে। আন্দোলনের অন্যতম মুখ ২২-এর তরুণ জোশুয়া ওয়ং-ও আছেন এর মধ্যে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হওয়া সত্ত্বেও এমন সাজার বিরুদ্ধে আপত্তি উঠছে নানা স্তরে। তার পরেও হংকংয়ের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়ালকারী দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোনও কোনও দৈনিকের সম্পাদককে বহিষ্কার করা হয়েছে। হংকং সরকার চাপ দিয়ে এমন একটি বিল পাশ করাতে চাইছে, যাতে বলা হয়েছে চিনা জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা ফৌজদারি অপরাধের শামিল। তা ছাড়াও এমন একটি প্রত্যর্পণ বিল পাশ করানোর চেষ্টা হচ্ছে, যাতে পলাতক যে কাউকে যে কোনও দেশের হাতে কোনও চুক্তি ছাড়াই ফেরত দেওয়া যায়— হংকংয়ে বেজিংয়ের ক্ষমতা বাড়ানোর এটাও একটা পথ বলে মনে করছেন অনেকে।

এ মাসের গোড়ায় ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসের আলোচনায় হংকংয়ের স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ এবং তাতে মার্কিন সরকার কী প্রতিক্রিয়া জানাবে, সে সব উঠেছিল। সেটি ইউটিউবে লাইভস্ট্রিম হয়। সেখানে ‘হংকং চিন নয়’, ‘হংকংয়ে মুক্ত করা হোক’— এ ধরনের মন্তব্য আসতে থাকে। সেখান বস্টনের ফ্রান্সেসের মতো তাইওয়ান, তিব্বতের অনেক পড়ুয়ার কথাও ওঠে। ফ্রান্সেস হংকংয়ে থাকাকালীন পথে নেমে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর বয়স তখন আরও কম। জোশুয়া ওয়ং ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণা। যিনি ফ্রান্সেসদের বুঝিয়েছিলেন, ‘‘আমাদের লড়াইটা অনেকটা আবহাওয়ার সঙ্গে। তুমি ছাতা আর বর্ষাতি আনতেই পারো। কিন্তু আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে পারবে না, বৃষ্টি বন্ধ করো!’’

Harassment Student Hong Kong Boston
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy