Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
usa

ওঁরা সংখ্যা নন

২০১১-র ১১ই সেপ্টেম্বর, ৯/১১ হামলার দশ বছরে, নিহতদের আত্মীয়রা একে একে এসে পড়েছিলেন ২৯৭৭ জনের নাম।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বস্টন শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৫
Share: Save:

পাক-আমেরিকান তরুণী সাবিলা খানের একটি সাক্ষাৎকার দেখছিলাম। তিনি বলছিলেন, ‘‘প্রায় এগারো মাস এই মৃত্যু উপত্যকা দিয়ে হাঁটছি। তবু প্রতিদিন প্রথম যে সংখ্যাটা আমার ফোনে খুঁজি, সেটা কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর। প্রত্যেক দিন।’’

ভয়ঙ্কর চেহারা নেওয়ার প্রথম দিকেই, গত বছর এপ্রিলে, সাবিলার বাবা শাফকাত খানকে কেড়ে নিয়েছিল এই অতিমারি। ব্যক্তিগত শোক আর জাতীয় শোকের সূত্রটা ছেঁড়েননি সাবিলা। নিউ জার্সির বাসিন্দা শাফকাত ছিলেন সমাজকর্মী, মানুষের কথা ভাবতেন সব সময়ে। শুধু পাকিস্তানি নয়, যে কোনও অভিবাসীকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন।


বাবার মৃত্যুর শোক বহন করতে করতে মেয়ে সাবিলার মনে হয়, তিনি তো একা নন। প্রতিদিন এ দেশে প্রিয়জন হারাচ্ছেন কত শত মানুষ। তাঁদের সেই শোককে ভাগ করে নিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ‘গ্রুপ’ বানিয়েছেন সাবিলা। শোকগ্রস্ত পরিবারের অসংখ্য মানুষ যোগ দিচ্ছেন তাঁর বানানো এই গ্রুপে, ভাগ করে নিচ্ছেন দুঃখ।

ফ্লরিডার পেনসাকোলার বাসচালক জেমস ম্যাকিনটারকেও কেড়েছে এই অতিমারি। তাঁর স্ত্রী ক্যারল জানালেন, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে পর্যন্ত সুস্থ ও কর্মক্ষম ছিলেন জেমস। প্রত্যেক দিন বাড়তে থাকা মৃতের সংখ্যাটা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে ক্যারলের মতো আরও কত জনকে!

আর কত মানুষ চলে যাবেন এ ভাবে, সেটা ভেবেই কি ক্রমশ অসাড় হয়ে যাচ্ছি আমরা? শুধু আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা দেখছি আর নিজেদের কাছেই বাস্তবটা যেন অস্বীকার করে চলছি। এই মানসিক পক্ষাঘাত দশা থেকে বেরিয়ে আসতে অনেককে সাহায্য করছে সাবিলার তৈরি করা সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ। সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়েছে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা। এই গ্রুপে যোগ দিয়েছেন তরুণ যশও। তাঁর বাবা ষাট বছর বয়সে মারা গিয়েছেন, মাত্র তিন দিনের অসুস্থতায়। যশের কথায়, ‘‘আমাদের দেশের কোনও একটি ছোটখাটো যত জনসংখ্যা, তত জনকে কেড়ে নিয়েছে কোভিড।’’ তা হলে আমাদের আর কেন সে ভাবে আঘাত করছে না এই সংখ্যা? যশের কথায়, ‘‘এই সংখ্যাকে নিজেদের মস্তিষ্কে ধারণ করে বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা এই দেশের মানুষদের বোধহয় আর নেই। কিন্তু যাঁরা প্রিয়জনদের হারালেন, তাঁদের কাছতে মৃতেরা কিছুতেই একটা সংখ্যা হতে পারেন না।’’

জো বাইডেন আর কমলা হ্যারিস শপথ নেওয়ার সময়ে স্মরণ করেছিলেন এ দেশের সেই চার লক্ষ মানুষকে, যাঁরা কোভিডে মারা গিয়েছেন। তার এক মাসের মধ্যে আমেরিকা ছুঁল পাঁচ লক্ষ মৃত্যুর মাইলফলক।

২০১১-র ১১ই সেপ্টেম্বর, ৯/১১ হামলার দশ বছরে, নিহতদের আত্মীয়রা একে একে এসে পড়েছিলেন ২৯৭৭ জনের নাম। গোটা দেশের চোখে তখন জল। এই অতিমারি শেষ হলে কত সময় লাগবে এই শোককে অতিক্রম করতে? যুদ্ধে বা প্রাকৃতিক দুযোর্গে বিধ্বস্ত হলে জীর্ণ ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটে থেকে যায় সর্বনাশের চিহ্ন। এই পাঁচ লক্ষেরও বেশি পরিবারও থাকবে, তাদের জীর্ণতা, না-দেখা ক্ষতচিহ্ন ও শূন্যতা নিয়ে।

আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

usa Social Media New Jersey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE