E-Paper

ইউনূস জমানায় বিনা বিচারে বন্দি শতাধিক সাংসদ, রিপোর্ট

রিপোর্টে পূর্বোক্ত সময়সীমায় আওয়ামী লীগ সরকারের ১০৮ জন নির্বাচিত সাংসদ এবং ১২ জন মহিলা সাংসদকে কোনও বিশেষ অভিযোগ ছাড়াই জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও ওয়ারেন্টও ছিল না বলে দাবি।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ০৮:৫৩
মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

গত ১০ মাসে (৯ অগস্ট থেকে ২৭মে) বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের একশো জনেরও বেশি সাংসদ, প্রাক্তন মন্ত্রী, স্বাধীনতা সংগ্রামীকে গ্রেফতার করে রেখে দেওয়া হয়েছে বিনা বিচারে। তাঁদের আইনজীবীর সহায়তাও নিতে দেওয়া দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট (বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সুরক্ষা মঞ্চ গ্লোবাল সেন্টার ফর ডেমোক্র্যাটিক গভর্নেন্স) সাউথ ব্লকে আসার পর চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক শিবিরে। সেই রিপোর্টে ১০০ জন গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর ছবি, গ্রেফতারের দিন, তাঁদের নির্বাচনী কেন্দ্র এবং শেষ সরকারি বা সংসদীয় পদের তালিকাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, ইউনূস সরকারের আমলে বাংলাদেশে বিচারবিভাগীয় নিরপেক্ষতা এবং সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। সে দেশে ভোট যবেই হোক, গ্রেফতার হওয়া রাজনৈতিক নেতাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করা হচ্ছে।

রিপোর্টে পূর্বোক্ত সময়সীমায় আওয়ামী লীগ সরকারের ১০৮ জন নির্বাচিত সাংসদ এবং ১২ জন মহিলা সাংসদকে কোনও বিশেষ অভিযোগ ছাড়াই জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও ওয়ারেন্টও ছিল না বলে দাবি। অথচ বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান আইন অনুযায়ী এঁরা প্রত্যেকেই জামিন পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু ১০১ জন সংসদ সদস্যের বারবার আবেদনকে ফিরিয়ে দিয়েছে আদালত। অভিযোগ, পুলিশ এবং বিচারবিভাগীয় সংস্থার কর্মীদের কাছ থেকে মানসিক নির্যাতন, গালিগালাজ, কারাগারের ভিতর শারীরিক নিগ্রহ, আদালত চত্বরে গণআক্রমণেরমুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি, অন্তর্বর্তী সরকারের আইনজীবীরাও আক্রমণে উদ্যত এমনটাও নাকি দেখা গিয়েছে। হাই কোর্টে যদিও বা জামিন মঞ্জুর হয়েছে কয়েকজনের, কিন্তু তারপরই উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসছে। এমনটাও বলা হচ্ছে, আটক বন্দিকে ছাড়ার পর জেল গেটেই নতুন অভিযোগে ফের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাঁদের আইনজীবীর সহায়তা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর চাপে তাঁদের আইনজীবীদের আদালতে পৌঁছতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও উল্লেখ রিপোর্টে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই বন্দিমুক্তির দাবি জানালেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত উদাসীন।

বলা হচ্ছে, ‘ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইট’ (আইসিসিআরপি)-র অনুচ্ছেদ ৯-এ এই ধরনের যথেচ্ছ গ্রেফতারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। কোনও সাংসদ অপরাধ করলে তাঁকে সাজা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ আইন বলবৎ রয়েছে। কিন্তু বিচারহীন ভাবে তাঁদের ভিড়াক্রান্ত, স্থান সংকুলানহীন, বদ্ধ হাজতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দি করে রাখার পিছনে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ কাজ করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই রিপোর্টে। এই সংস্থার তরফে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের কাছে দাবি করা হয়েছে, গ্রেফতার হওয়া সাংসদদের অধিকার সুরক্ষিত করতে এবং গোটা বিষয়টিতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে।

যে তালিকাটি দেওয়া হয়েছে তাতে রয়েছেন, চট্টগ্রাম-১১-র চারবারের সাংসদ সত্তর বছর বয়স্ক মহম্মদ আব্দুল লতিফ, নোয়াখালি-৬-এর ৭০ বছর বয়স্ক চারবারের সাংসদমোহাম্মদ আলি, নোয়াখালিরই দু’বারের সাংসদ চৌষট্টি বছরের আয়েষা ফেরদৌস, চুয়াত্তর বছর বয়স্ক সালমান ফজলুর রহমান (ঢাকার দু বারের সাংসদ) প্রাক্তন তথ্যপ্রযুক্তি এবং যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনেইদ আহমেদ পালক, প্রাক্তন আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি, প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী রমেশচন্দ্র সেন, প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রাক্তন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের মতো ব্যক্তিরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Muhammad Yunus Bangladesh Imprisonment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy