Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিন্দা আইএস-কে, ঘর বাঁচাতে মরিয়া আফগান তালিবান

জঙ্গিদের নিন্দা এ বার জঙ্গিদেরই মুখে। ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর পোস্ট করা একটি গণহত্যার ভিডিওকে কড়া সমালোচনা করল আফগান তালিবান। রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে তারা জানিয়েছে, ‘‘এ ভাবে মানুষ খুন পুরোপুরি ইসলাম-বিরোধী।’’

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:৪১
Share: Save:

জঙ্গিদের নিন্দা এ বার জঙ্গিদেরই মুখে। ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর পোস্ট করা একটি গণহত্যার ভিডিওকে কড়া সমালোচনা করল আফগান তালিবান। রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে তারা জানিয়েছে, ‘‘এ ভাবে মানুষ খুন পুরোপুরি ইসলাম-বিরোধী।’’

ঘটনার সূত্রপাত দিন কয়েক আগে। রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ৪ মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করে আইএস। ভাষ্য আগাগোড়া আরবি এবং পাখতুন ভাষায়। মনে করা হচ্ছে, পূর্ব আফগানিস্তানের কোনও প্রত্যন্ত এলাকায় ভিডিওটি তোলা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, কয়েক জন আফগানকে কালো কাপড়ে চোখ ঢেকে, দু’হাত বেঁধে রেখে ভয়াবহ বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আইএসের দাবি, এরা প্রত্যেকেই রাষ্ট্র ও ধর্ম-বিরোধী। মঙ্গলবার এই ভিডিও প্রসঙ্গেই ইরাক ও সিরিয়া থেকে ক্রমশ আড়েবহরে বাড়তে থাকা আইএস-কে আক্রমণ করে তালিবান। তাদের বক্তব্য, ‘শিক্ষা’ দেওয়ার নাম করে কয়েক জন নিরীহকে মেরেছে ওরা। রেয়াত করা হয়নি এমনকী শিশু, বৃদ্ধকেও। ধর্মের জিগির তুলে আইএস আদতে ইসলামকেই লুণ্ঠিত করছে বলে অভিযোগ তালিবানের।

কিন্তু হঠাৎ কেন এই উলটপুরাণ? ১৪ বছর ধরে মার্কিন সমর্থিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে একের পর এক ‘নরমেধ হামলা’ চালিয়েছে তালিবান।

ঘাতক হিসেবে যারা নিজেরাই কুখ্যাত, তাদের মুখেই গণহত্যার নিন্দা?

বিষয়টিতে অন্য সমীকরণ দেখছেন দেশের কূটনীতিকরা। তাঁদের ব্যাখ্যা— আইএসের হাত থেকে প্রাণপণে নিজেদের ঘর বাঁচাতে চাইছে তালিবান। কারণ, দলের প্রধান মোল্লা ওমরের মৃত্যুতে তালিবানের মাটি যখন নড়বড়ে, ঠিক তখনই কাবুলকে কেন্দ্র করে জমি দখলে এগোচ্ছে আইএস। আফগান তালিবান সংগঠনের মাথায় এখন মোল্লা আখতার। যাঁকে নিয়ে আবার আপত্তি রয়েছে খোদ ওমরের ছেলে ও ভাই-সহ শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশের। তাই এই ডামাডোলেই আফগানিস্তানের মাটিতে কোপ মারতে চাইছে আইএস।

কাবুলের সামরিক বিশ্লেষক আতিকুল্লাহ আমরখিলের কথায়, ‘‘দু’দলের সম্পর্কটা এখানে সাপে-নেউলে। আইএস-ই এখন আফগান তালিবানের পয়লা নম্বর শত্রু।’’ এক তালিবানে রক্ষা নেই, দোসর এ বার ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি গোষ্ঠী। যুযুধান এই দুই জঙ্গি গোষ্ঠীকে ঘিরে তাই সিঁদুরে মেঘই দেখছে প্রশাসন।

এ দিকে, মোল্লা ওমরের মৃত্যুতেও যে তাদের সংগঠন দুর্বল হয়ে যায়নি, তা প্রমাণে মরিয়া তালিবান গোষ্ঠী। গত সপ্তাহ জুড়ে তাদের ধারাবাহিক হামলায় প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৬০ জনের, আহত ২০০। হামলার লক্ষ্য কখনও সেনা-ঘাঁটি লাগোয়া জনবহুল এলাকা, তো কখনও পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখন আবার ময়দান দাপাতে তৈরি আইএস-ও। আজও দেশের দক্ষিণ হেলমন্দ প্রদেশের একটি পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালায় তালিবান। ঘটনায় নিহত অন্তত ১৪ পুলিশকর্মী। প্রশাসনের দাবি, পুলিশের পোশাকেই ছিল জঙ্গিরা। পরে তালিবান মুখপাত্র কারি ইউসুফ আহমাদি হামলার দায় স্বীকারও করেন।

গণহত্যা জারি রেখেছে আইএস-ও। ঘটনাস্থল এ বার মিশর। বছর তিরিশের এক ক্রোয়েশীয় পণবন্দিকে মুণ্ডচ্ছেদের ছবি আজই পোস্ট করেছে জঙ্গিরা। আফগান তালিবানের তরফে অবশ্য এখনও এ নিয়ে কোনও বার্তা মেলেনি। কিন্তু আফগান মুলুকে আইএসের বাড়বাড়ন্ত যে তারা মানবে না — ইঙ্গিত স্পষ্ট।

এই পরিস্থিতিতে দেশের শান্তিপ্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল নয়, মানছে সংশ্লিষ্ট সব শিবিরই। এত দিন আলোচনার খাতিরে পাকিস্তানপন্থী ভূমিকা নিয়েছিলেন আশরফ ঘানি। এ বার তিনি কোন পথে চলেন, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE