Advertisement
E-Paper

শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ-নেপাল! চার বছরে ভারতের তিন পড়শি দেশ দেখাল গণরোষের একই রূপ, ঘটিয়ে ছাড়ল পালাবদলও

২০২২ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং ২০২৪-এর অগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। ওলির ‘অবস্থান’ এখনও জানা যায়নি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৪২
After Sri Lanka in 2022 and Bangladesh in 2024 now change of power in Nepal amid  mass protest

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

তফাতটা শুধু পতাকার রং আর স্লোগানে। বাকিটা শুধুই মিল। জনতার স্বতস্ফূর্ত বিক্ষোভে। শাসকের প্রাথমিক অনমনীয়তা আর দমনপীড়নে। শেষ পর্যন্ত প্রবল জনবিক্ষোভের জেরে পতন এবং পলায়নে। কলম্বো, ঢাকার পরে এ বার কাঠমান্ডুও দেখল একই ছবি। চার বছরের মধ্যে ভারতের তিন প্রতিবেশী দেশে গণ আন্দোলনের জেরে হল ক্ষমতাবদল।

২০২২ সালের জুলাই মাসে আর্থিক মন্দায় ধ্বস্ত শ্রীলঙ্কায় বিক্ষুব্ধ জনতার নিশানা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে এবং তদারকি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের (গণরোষের জেরে গোতাবায়ার দাদা মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পরে যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন) সরকারি বাসভবনের দখল নিয়েছিল বিদ্রোহী জনতা। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলন রূপ নিয়েছিল দেড় দশকের শাসকদল আওয়ামী লীগবিরোধী হিংসাত্মক বিক্ষোভে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পরে তাঁর সরকারি আবাস গণভবনেরও একই পরিণতি হয়েছিল।

ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার নেপালি ছাত্র-যুবদের রোষ আছড়ে পড়েছে সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মার ওলির দল কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং তার সহযোগী নেপালি কংগ্রেসের সদর দফতরে। রেহাই পাননি সরকারের মন্ত্রীরাও। কারও বাসভবনে আগুন জ্বলেছে। কাউকে বা রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে জনতা। গোতাবায়া এবং হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। ওলির পদত্যাগ করলেও তাঁর ‘অবস্থান’ এখনও জানা যায়নি। নেপালি সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে, দুবাই চলে যেতে পারেন তিনি। কারণ, দেশে থাকলে তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বস্তুত, তিন দেশেই গণরোষের ধাঁচ হুবহু এক। জনতার নিশানায় শাসকের ঠিকানা।

সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার থেকেই বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন নেপালের তরুণেরা। ওই বিক্ষোভে ১৯ জন বিক্ষুব্ধের মৃত্যু হয়। শেষে ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের মুখে সোমবার রাতেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় নেপাল সরকার। কিন্তু এর পরেও বিদ্রোহ থামেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবিতে বিদ্রোহ আরও জোরালো হয়। একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভের মুখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ওলি। মঙ্গলবার সকালেই তিনি জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যায় সর্বদল বৈঠক করবেন। কী ভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের পথ কী, তা নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তার আগেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।

সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নেপাল সরকার। তা ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয় ওলির ওই সিদ্ধান্ত। প্রতিবাদে পথে নামে দেশের ছাত্রযুবরা। তাদের বিক্ষোভে সোমবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল রাজধানী কাঠমান্ডু। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গুলি চালায়। তাতে মৃত্যু হয় অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারীর। এর পর বিক্ষোভের ঝাঁজ আরও বেড়ে গিয়েছে। চাপে পড়ে রাতেই নেপাল সরকার সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিবৃতি জারি করেছিল। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওলির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিস্থিতি ক্রমে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। ফলে চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে হল ওলিকে। গোতাবায়া পতনের ২৫ মাস পরে গণবিক্ষোভে গদি হারিয়েছিলেন হাসিনা। তার মাত্র ১৩ মাসের মাথাতেই কুর্সি গেল ‘চিন ঘনিষ্ঠ’ ওলির।

Nepal Unrest Bangladesh Unrest Sri Lanka Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy