মার্কিন মুলুকে অর্থবর্ষ শুরু ১ অক্টোবর থেকে। আগামী আর্থিক বছরের জন্য সবে এইচ-১বি ভিসার আবেদনপত্র জমা নিতে শুরু করেছে আমেরিকা। ঠিক তখনই তার ‘অপব্যবহার’ বন্ধের জন্য মার্কিন সংস্থাগুলিকে কড়া হুমকি দিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
মঙ্গলবার সিভিল রাইটস ডিভিশনের কার্যনির্বাহী অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল টম হুইলার স্পষ্ট বলেছেন, এইচ-১বি ভিসা নিয়ে জালিয়াতি ও তার অপব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না। কাজের ক্ষেত্রে আগে সুযোগ দিতে হবে মার্কিন ভূমিপুত্রদের। ওই ভিসা ব্যবহার করে সস্তায় বিদেশিদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে গিয়ে কাজে ইচ্ছুক ও যোগ্য মার্কিনরা বঞ্চিত হচ্ছেন কি না, সে দিকেও সতর্ক নজর রাখা হবে।
এইচ-১বি ভিসা কী?
• কাজের সূত্রে মার্কিন মুলুকে অস্থায়ী ভাবে থাকার ছাড়পত্র
• যে কাজে বিশেষ দক্ষতা লাগে (ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, হিসাব রক্ষণ ইত্যাদি), তাতে আমেরিকার বা ওই দেশে অফিস থাকা কোনও সংস্থা মার্কিন মুলুকের মাটিতে এক জন বিদেশিকে নিয়োগ করতে চাইলে এই ভিসা জরুরি
• নির্ভরশীল হিসেবে সঙ্গে নেওয়া যায় পরিবারের সদস্যদের
• ৫ বছর কাটালে পাকাপাকি ভাবে থাকার আবেদনও করা সম্ভব
কাদের লাগে?
• বরাত পাওয়া কাজে কর্মী পাঠাতে ভারতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা
• এ দেশ থেকে কর্মী নিতে ব্যবহার করে গুগ্ল, মাইক্রোসফটও
• আইন বদলালে সবচেয়ে বিপাকে সংস্থাগুলির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা
সুযোগ পান ক’জন?
• বছরে ইস্যু করা হয় ৬৫ হাজার পর্যন্ত। তার বাইরেও ২০ হাজারটি তোলা থাকে স্নাতকোত্তর বা তার বেশি ডিগ্রি থাকাদের জন্য
• এইচ-১বি ভিসার অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ থাকে ভারতীয়দের পকেটে
এ বিষয়ে কতখানি কড়াকড়ি করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপে। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস বলেছে, ভিসার অপব্যবহার ঠেকাতে অফিসে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। জানানো হয়েছে, শুধু কম্পিউটার প্রোগ্রামারকে আর বিশেষ দক্ষতার অধিকারী কর্মী হিসেবে গণ্য করা হবে না। অর্থাৎ বাইরে থেকে আসা কর্মীকে হতে হবে আরও উচ্চতর দক্ষতার অধিকারী। এই সব কিছুর ফলে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির রক্তচাপ বাড়বে বলে অনেকের ধারণা।
যদিও ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি হবে আঁচ করে ইতিমধ্যেই ব্যবসার কৌশল বদলাতে শুরু করেছে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। জোর দিচ্ছে বেশি দক্ষতার কাজে। কিনছে মার্কিন সংস্থা। নিয়োগ বাড়াচ্ছে আমেরিকার কলেজ-ক্যাম্পাস থেকেও।
আসলে ভিসা নিয়ে দুশ্চিন্তার মেঘ জমা হচ্ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই। তার উপর ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের শিরদাঁড়ায় আশঙ্কার ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছিল মার্কিন প্রতিনিধিসভায় পেশ হওয়া ভিসা-বিল। ওই বিলের খসড়ায় বলা হয়েছে, এইচ-১বি ভিসায় নিযুক্ত কর্মীদের বেতন বছরে হতে হবে অন্তত ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার। কাজের জন্য আগে ডাকতে হবে সম বা বেশি যোগ্যতার মার্কিন ভূমিপুত্রকে। ২০% ভিসা তুলে রাখতে হবে স্টার্ট-আপগুলির জন্য। যেখানে কর্মী পঞ্চাশের মধ্যে। তা ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে মার্কিন মুলুকে পড়াশোনা শেষে কাজের জন্য কিছু দিন থেকে যাওয়ার সুযোগ মেলে। নতুন সরকারি নির্দেশে জারি হলে ভাটা পড়বে তাতেও।
ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকমের দাবি, ভিসার আবেদন জানানো হচ্ছে দক্ষ কর্মীদের জন্যই। ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস গোপালকৃষ্ণনেরও মত, এই অর্থবর্ষে এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বাড়বে ৯-১০ শতাংশ হারে।
মার্কিন প্রতিনিধিসভায় পেশ করা বিলের খসড়া অনুযায়ী
• এই ভিসায় কর্মীকে বেতন দিতে হবে বছরে অন্তত ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার। এখন যা ৬০ হাজার ডলার
• আগে কাজ দিতে হবে একই যোগ্যতার ভূমিপুত্রকে
• ২০% ভিসা তুলে রাখতে হবে স্টার্ট-আপগুলির জন্য
নতুন নির্দেশ
মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া বার্তা—
• বন্ধ করতে হবে এইচ-১বি ভিসার অপব্যবহার ও জালিয়াতি
• আগে কাজ দিতে হবে মার্কিনদের
• শুধু ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামার’কে আর বিশেষ ভাবে দক্ষ বলা যাবে না
• কাজের সূত্রে মার্কিন মুলুকে অস্থায়ী ভাবে থাকার ছাড়পত্র
• যে কাজে বিশেষ দক্ষতা লাগে (ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি, হিসাব রক্ষণ ইত্যাদি), তাতে আমেরিকার বা ওই দেশে অফিস থাকা কোনও সংস্থা মার্কিন মুলুকের মাটিতে এক জন বিদেশিকে নিয়োগ করতে চাইলে এই ভিসা জরুরি
• নির্ভরশীল হিসেবে সঙ্গে নেওয়া যায় পরিবারের সদস্যদের
• ৫ বছর কাটালে পাকাপাকি ভাবে থাকার আবেদনও করা সম্ভব
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy