‘এইচ-১বি ভিসা’ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণার পরে চিন্তায় আমেরিকায় কর্মরত বিদেশি কর্মীরা। এই আবহে নতুন ভিসানীতি কার্যকর করে বিভিন্ন দেশের মেধাসম্পন্ন কর্মীদের নিজেদের দেশে আনতে চাইছে চিন। চালু করতে চলেছে ‘কে ভিসা’। রবিবার বেজিঙের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, আগামী ১ অক্টোবর থেকেই এই ভিসা কার্যকর হতে চলেছে। গত অগস্টেই অবশ্য এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছিল শি জিনপিঙের প্রশাসন। সে কারণে চিনের বিদেশিদের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত নিয়মে বদল আনা হয়।
অন্য দিকে, বিদেশের মেধাবীদের নিজেদের দেশে আনতে সচেষ্ট ব্রিটেনও। ‘ফিনানসিয়াল টাইম্স’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের সেরা পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়া বিদেশিদের জন্য ভিসা ‘ফি’ তুলে দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে শীর্ষ স্তরে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। প্রস্তাব সরকারি সিলমোহর পেলে ওই যোগ্যতা থাকা যে কেউ কোনও অর্থ ছাড়াই ব্রিটেনের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
কারা চিনের ভিসার আবেদন করতে পারবেন
চিনের কে ভিসার জন্য আবেদন জানানোর নিয়মকানুন অনেকটা আমেরিকার এইচ-১বি ভিসার মতোই। বিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে মেধাবীরা, যাঁরা চিন বা বিশ্বের যে কোনও প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই এই ভিসার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। যাঁরা শিক্ষকতা কিংবা গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন। তবে বিবৃতিতে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ করতে হবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি জমা দিতে হবে।
‘কে ভিসা’র বৈশিষ্ট্য কী কী
চিন এত দিন বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মোট ১২ রকমের ভিসা দিত। কে ভিসা এগুলির থেকে আলাদা। কেউ এই ভিসা পেলে তুলনায় অনেক বেশি সুযোগসুবিধা পাবেন। বেজিঙের তরফে সবিস্তার এই বিষয়ে কিছু জানানো না-হলেও প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, কে ভিসার মেয়াদ প্রয়োজন মতো বৃদ্ধি করা যাবে। তা ছাড়া অন্য ভিসার ক্ষেত্রে নিয়োগকারী সংস্থা বিদেশি কর্মীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। এই ভিসা পেতে তেমন আমন্ত্রণের প্রয়োজন পড়বে না। কে ভিসা নিয়ে বিদেশের যে কেউ চিনে বাণিজ্যিক কাজকর্ম করতে পারবেন। যোগ দিতে পারবেন সে দেশের সাংস্কৃতিক পরিসরেও।
উপকৃত হতে পারেন কারা
চিনের কে ভিসার জন্য উপকৃত হতে পারেন দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশের মানুষ। এইচ-১বি ভিসা নিয়ে প্রতি বছর ভারত থেকে বহু মানুষ আমেরিকায় যান। এই মুহূর্তে ভারতীয়েরাই এই ভিসার সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। শুধু গত বছরেই ভিসার ৭১ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে ভারত থেকে। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, এই ভিসার জন্য নতুন যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের এককালীন এক লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) দিতে হবে। এত দিন পর্যন্ত এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে তিন বছরের জন্য ১৭০০ (প্রায় দেড় লক্ষ টাকা) থেকে ৪৫০০ (৩.৯৬ লক্ষ টাকা) মার্কিন ডলার দিতে হত কর্মীদের। ট্রাম্পের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে আমেরিকার বহু বহুজাতিক সংস্থা এবং সেখানকার বিদেশি কর্মীরা, যাঁদের অধিকাংশই আবার ভারতীয়। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার দরজা কার্যত বন্ধ হয়ে গেলে নতুন কর্মীদের কাছে বিকল্প হয়ে উঠতে পারে চিন। কয়েক বছরের শৈত্য কাটিয়ে ফের কাছাকাছি আসার ইঙ্গিত দিয়েছে নয়াদিল্লি এবং বেজিং। সে ক্ষেত্রে আমেরিকাকে বার্তা দিতে ভারতীয় কর্মীদের জন্য চিন দরজা খুলে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
চিনের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কি কৌশল
গত কয়েক বছর ধরেই ধাপে ধাপে চিনে প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত নিয়মকানুন খানিকটা শিথিল হয়েছে। বর্তমানে ৫৫টি দেশের মানুষ সে দেশে টানা ২৪০ ঘণ্টার জন্য ভিসা ছাড়াই থাকতে পারেন। তা ছাড়া সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চিনে প্রতি বছরই বিদেশিদের যাতাযাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিনের কে ভিসা সংক্রান্ত ঘোষণাকে এই প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসাবেই দেখছেন কেউ কেউ। আবার অন্য একটি অংশের মতে, আসলে আমেরিকা থেকে বিশ্বের মেধাসম্পদ নিজেদের দেশে টেনে আনতেই চিনের এই কৌশল। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ আমেরিকার সঙ্গে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই টক্কর রয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চিনের। সম্প্রতি বেজিঙে সামরিক কুচকাওয়াজ এবং এসসিও সম্মেলেনর আসরকে কার্যত আমেরিকার বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ হিসাবে হিসাবে তুলে ধরে চিন। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার মেধাসম্পদকেও চিন ছিনিয়ে নেওয়ার কৌশল নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, ব্রিটেন সরকারও চাইছে এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে বিশ্বের মেধাসম্পদের একাংশকে নিজেদের দেশে নিয়ে যেতে।