Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

Immigration Officer: কলকাতা থেকে হংকং, ৩ দেশ ঘুরে!

তাই উড়ান নিষেধাজ্ঞার অশনি সঙ্কেত থাকলেও এপ্রিল মাসে কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চিরদীপ দে
হংকং শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫১
Share: Save:

দিল্লি বিমানবন্দরে অভিবাসন অফিসারের সেই অবাক দৃষ্টি মনে পড়ছে। থাকি হংকংয়ে। কিন্তু কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে প্রথমে যাব ইউক্রেনের কিভ, সেখান থেকে তুরস্কের ইস্তানবুল, তার পরে, অন্তত তিন সপ্তাহ পরে, হংকং?

অফিসার জানতেন না যে, এই যাত্রাপথ ছাড়া আমার হংকং ফেরার আর উপায় নেই। সৌজন্যে, ভারতে অতিমারির দাপাদাপি এবং ডেল্টা স্ট্রেনের আতঙ্কে আন্তর্জাতিক সফরে নানা নিষেধাজ্ঞা। এই সব নিয়মনীতির গেরোয় আমার সাধারণ সফরসূচির যে কী হাল হল, সেটাই বলব।

কলকাতায় থাকেন প্রৌঢ় মা-বাবা। দেড় বছর তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়নি। তাই উড়ান নিষেধাজ্ঞার অশনি সঙ্কেত থাকলেও এপ্রিল মাসে কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ভারত সরকারের নিয়ম, বিমানে ওঠার আগে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। সেই মতো হংকংয়ে পরীক্ষা করিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে উঠলাম। যাব সোজা দিল্লি। সেখান থেকে বিমান পাল্টে কলকাতার উড়ান।

আসার পথে একটা মজার ঘটনা ঘটল। কোনও অজ্ঞাত কারণে বিমানটি প্রথমে এল কলকাতায়। বিমানবন্দরে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইলাম আমরা। বিমানবন্দর থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি, কিন্তু বিমান থেকে নামার অনুমতি মিলল না। বিমান ফিরে গেল দিল্লি। তার পরে অবশ্য কলকাতায় নির্বিঘ্নেই পৌঁছলাম। তখনও কি জানি, ফেরার পথে কী কাণ্ড আমার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে!

কয়েক দিন পরেই হংকং ভারতকে এ-১ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করল। অর্থাৎ, কেউ দু’ঘণ্টার বেশি ভারতে থাকলে
২১ দিন হংকংয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না! ২১ দিন পরে হংকং ঢোকার পরেও ২১ দিন কোয়রান্টিনে থাকতে হবে নির্দিষ্ট হোটেলে। সুকুমার রায় একেই কি ২১শে আইন বলেছিলেন!

হংকংয়ে ফিরতে গেলে ভারতকে গুডবাই করে ২১ দিন কোথায় থাকব? বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি অনেকগুলো দেশের কথা ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু মে মাস থেকে বাড়তে শুরু করল ডেল্টা স্ট্রেনের প্রভাব। এই সব দেশই ভারতীয়দের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করল।

ব্যস, শুরু হয়ে গেল আমার গবেষণা। কোন দেশ ভারতীয়দের সহজেই ভিসা দিচ্ছে, ভিসা পেতে কী করতে হবে, সেই দেশে কোয়রান্টিন বাধ্যতামূলক কি না, সেই দেশের কোভিড পরিস্থিতি কী, সেই দেশকে হংকং সরকার কোন ‘অ্যালার্ট ক্যাটেগরিতে’ রেখেছে, সেই দেশ থেকে আদৌ হংকং যাওয়া সম্ভব কি না, ইত্যাদি। এ দিকে, আমার সংস্থা ভারতে থেকে মাত্র এক মাস কাজ করার অনুমতি দিয়েছিল। এক মাস দেখতে দেখতে শেষ। তার পরে পেরেন্টস
কেয়ার লিভ, তার পরে ক্যাজ়ুয়াল লিভ, তারও পরে মাইনে ছাড়া পার্সোনাল লিভ। বলা বাহুল্য, অচিরেই শেষ ক্যাটেগরিতে পৌঁছে গেলাম।

রাশিয়ায় ২১ দিন কাটিয়ে হংকং ফেরার একটা রুট পাওয়া গেল বটে, কিন্তু আমি নিজেই পিছিয়ে এলাম। ওখানে ডেল্টা স্ট্রেন বাড়ছে, যদি হংকং রাশিয়াকেও ব্ল্যাকলিস্ট করে দেয়? পরের লক্ষ্য— তুরস্ক, কারণ ইস্তানবুল থেকে হংকং উড়ান আছে। কলকাতায় তুরস্কের ভিসা অফিস বন্ধ, তাই ভিসা দিতে ও নিতে দু’বার দিল্লি যেতে হল। এরই মধ্যে তুরুস্ক ভারত থেকে তার সরাসরি উড়ান বাতিল করে দিল। দুবাই হয়ে ইস্তানবুল যাওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ‘ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইন্স’ হঠাৎ উড়ান বাতিল করে দিল। টাকাও ফেরত দিল না! তার পরে মলদ্বীপ-ইস্তানবুল হয়ে হংকং যাওয়ার একটা রাস্তা বার করলাম। টিকিটও কাটলাম। কিন্তু মলদ্বীপের হোটেলের ভাড়া দেখে মাথা ঘুরে গেল। এর পরে আর্মেনিয়া, সেটাও বিফলে গেল। অবশেষে ইউক্রেন। কী ভাবে ই-ভিসা পেলাম, হোটেল বুক করলাম সেটা বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে।

অনেক কাণ্ড করে কিভ পৌঁছলাম। এ বার কিভ-ইস্তানবুল হয়ে হংকং এ পৌঁছনোর কথা ২১ দিন পরে। নির্দিষ্ট দিনের তিন দিন আগে হংকং সরকার ইস্তানবুল থেকে হংকং দু’সপ্তাহের জন্য উড়ান স্থগিত করে দিল। কারণ তুরস্কে সংক্রমণ বাড়ছে। বিকল্প রুট— কিভ-দোহা (কাতার)-হংকং। প্রার্থনা করতে লাগলাম যে, দোহায় যেন সংক্রমণ না বাড়ে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন, বাড়লও না।

অবশেষে ২৮ ঘণ্টা বিমানযাত্রার পরে আরও চার ঘণ্টা পিসিআর পরীক্ষার ফলের অপেক্ষা করে আপাতত হংকংয়ের কোয়রান্টিন হোটেলে ঢুকেছি। নতুন অধ্যায় শুরু হল। হোটেলের ঘরের বাইরে পা বাড়ালেই জরিমানা বা শাস্তি। তবুও এ ভেবেই আনন্দে রয়েছি যে, আমার ছেলেরা হোটেলের উল্টো দিকের রাস্তা থেকেই আমাকে দেখতে তো পাবে।

(লেখক হংকংয়ে কর্মরত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus Delta Variant COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE