ভয় করছে না, বলব না। ধারে-কাছে ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়লে কার না ভয় লাগে! সোমবার ভোরেই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে আমাদের এখান থেকে আধ কিলোমিটারের মধ্যে একটি বহুতল গুঁড়িয়ে গিয়েছে। তবু আপাতত এখানেই থাকছি। ইজ়রায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ভরসা আছে। বাগদায় (উত্তর ২৪ পরগনা) ফিরে করব কী? ওখানে তেমন আয়ের কাজ নেই।
থাকি তেল আভিভ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দূরে, পেতাহ টিকভা শহরে। এখানে প্লাস্টিক কারখানায় ত্রিপল তৈরির কাজ করি। অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পরে কার্যত বসেই ছিলাম। টুকটাক চাষের কাজ করতাম। হঠাৎ এখানে কাজের সুযোগ পেলাম। গত বছর এসেছি। ভাড়ায় থাকি চারতলা ভবনের একটি ঘরে। সঙ্গে আরও সাত জন। বাঙালি আর কেউ নেই। ছ’জন ভারতীয় আছেন। এক জন রাশিয়ান।
আমার মতো বাকি সাত জনেরও ইজ়রায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভরসা আছে। দু’-একটা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র এ-দিক ও-দিক ঢুকতে পারে, তবে রবিবার রাতেই ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইজ়রায়েল আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা-ই হচ্ছে। ইরান বেশি হামলা চালাচ্ছে তেল আভিভে। ইজ়রায়েলও পাল্টা জবাব দিচ্ছে।
এখানে প্রযুক্তি অনেক উন্নত। ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লে, মোবাইলে বার্তা চলে আসছে। সাইরেন বাজছে। যে বাড়িতে ভাড়া থাকি, তার একটা তলা মাটির নীচে। সেখানে চলে যাচ্ছি। অন্যেরাও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। তার মধ্যেও অনেকে মোবাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের ছবি তুলছেন। বাকি সবই স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। দিনে দোকানপাট খোলা। মানুষ পথে বেরোচ্ছেন। সূর্য ডুবলে দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় লোকজনও কমছে।
বাগদা থেকে স্ত্রী-সন্তান ফিরতে বলছে। কিন্তু ফিরলে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে বেকার হতে হবে। এখানে ভাল উপার্জন। কারখানাও বন্ধ হয়নি। নিরাপত্তার কোনও অভাব বোধ করছি না। ওদের (স্ত্রী-সন্তানকে) বলে দিয়েছি, দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ইজ়রায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী।
অনুলিখন: সীমান্ত মৈত্র
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)