E-Paper

পালাবদলের এক বছরে রাজরোষে অধ্যাপক-সাংবাদিক

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, যাঁরা নীলিমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাংলাদেশে পালাবদলের এক বছর পূর্ণ হবে আগামী ৫ অগস্ট। গত এক বছরে পদ্মা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে, কিন্তু শিক্ষক-অধ্যাপক এবং সাংবাদিকদের বার বার পড়তে হচ্ছে সরকারের রোষে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা নীলিমা আখতার। সমাজমাধ্যমে সরকার-বিরোধী মন্তব্য করায় আপাতত তাঁকে শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

একই অবস্থা সাংবাদিকদেরও। অভিযোগ, সরকার এবং সরকার-ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের মন মতো খবর না করায় বহু সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন, অনেকে কারান্তরালে, আবার অনেকের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে একাধিক মামলাও।

দিন কয়েক আগে ফেসবুকে সরকার-বিরোধী মন্তব্য করার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া নীলিমার বিরুদ্ধে মিছিল করে এবং উপাচার্যের কাছে স্মারক লিপি দিয়ে তাঁকে বহিষ্কারের দাবি তোলে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, যাঁরা নীলিমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়াদের একাংশের বক্তব্য, ওই বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বিভাগের পড়ুয়াদের ৩-৪ শতাংশ। দিন চারেক আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইংরেজি বিভাগের ওই অধ্যাপিকাকে একটি চিঠি দিয়ে বলছেন, ‘...অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটির কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে আপনাকে ২৯/০৭/২০২৫ তারিখ হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হল’। যা বহিষ্কার প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে নীলিমা আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার, এমনকি রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করে থাকেন! ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন শিক্ষকদের পেশাগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অথচ একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে!’’

শুধু নীলিমা নন, গত এক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৯ জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অধ্যাপক বলেন, ‘‘নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটছে। শিক্ষক হিসেবে আমাদের মৌলিক অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। চলছে মানসিক নির্যাতনও।’’

শিক্ষক-অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে মব-সন্ত্রাস, কুৎসাকে যেমন হাতিয়ার করা হচ্ছে, তেমনই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে খুন, হিংসায় উস্কানির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। একটি বেসরকারি চ্যানেলের সাংবাদিক ফরজ়ানা রূপা, তাঁর স্বামী শাকিল আহমেদ, সাংবাদিক মোজ্জাম্মেল হক বাবু এবং শ্যামল দত্ত গত এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট’ সংগঠনকে জানিয়েছেন, তাঁরা ঠিক বলতে পারে না এখন কতগুলি মামলার মুখোমুখি। তাঁরা অন্তত ছয়টি খুনের মামলার কথা জানেন, যেগুলোর সঙ্গে তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে। বাবুর পরিবারের মতে, তাঁর বিরুদ্ধে এমন ১০টি মামলা করা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy