Advertisement
E-Paper

আসিয়ার মতো বিচার চাইছেন আরও ৪০ জন

মার্কিন বিশ্বদ্যালয়ে পড়াশোনা করা অধ্যাপক ‘উদার’ কিছু পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। তাতে রুষ্ট হয়েছিলেন ইসলামি আন্দোলনকারীরা। তার পরেই ঠিকানা সেই এক। ধর্মদ্রোহের অভিযোগ অধ্যাপককেও পৌঁছে দিয়েছে জেলে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০১:০৯

রাস্তা সাফ করতেন খ্রিস্টান লোকটি। পড়াশোনা জানা নেই। এক মুসলিম বন্ধুর সঙ্গে মদ্যপান করতে গিয়ে তর্কাতর্কি। আর ধর্মদ্রোহের অভিযোগে সোজা জেলে।

মার্কিন বিশ্বদ্যালয়ে পড়াশোনা করা অধ্যাপক ‘উদার’ কিছু পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। তাতে রুষ্ট হয়েছিলেন ইসলামি আন্দোলনকারীরা। তার পরেই ঠিকানা সেই এক। ধর্মদ্রোহের অভিযোগ অধ্যাপককেও পৌঁছে দিয়েছে জেলে।

পাকিস্তানে আসিয়া বিবি যেখানে থাকতেন, এখন সেই কুঠুরিতে ঠাঁই হয়েছে মধ্যবয়সি মহিলার। ধর্মদ্রোহের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পেলেও আসিয়া পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে মুক্তি পান। এক দশকের কাছাকাছি সময় মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে শেষ পর্যন্ত এ মাসে কানাডা চলে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন তিনি। আসিয়ার যুদ্ধে আপাতত দাঁড়ি পড়লেও যে তিন জনের কথা ফের সংবাদমাধ্যমে এসেছে, ওঁদের সামনে এখনও বড় প্রশ্নচিহ্ন। ওঁদের নিয়ে মোট ৪০ জন এখন কারাগারে। ধর্মদ্রোহের অভিযোগে কেউ সাজা পেয়েছেন, কারও শাস্তি ঘোষণা সময়ের অপেক্ষা। সাজাপ্রাপ্তদের অনেকেই পেয়েছেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বাকিরা আসিয়ার মতোই মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত কাউকে ধর্মদ্রোহের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়নি। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরে অনেকেই পাল্টা আবেদন জানিয়ে একা কুঠুরিতে পৌঁছে গিয়েছেন, আসিয়ার মতো এখন তাঁদের অপেক্ষা— কবে আর্জি শুনবে আদালত।

কিন্তু তাঁদের আইনজীবী এবং পরিবারের লোকজন মনে করছেন, আসিয়ার ঘটনাটা একেবারেই ব্যতিক্রম। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে লড়াইয়ের পথটা এতটা মসৃণ হয়ে ওঠা দিবাস্বপ্নের মতো। এই ধরনের অভিযুক্তরা এমনিতেই জনতার চোখে কোণঠাসা। বেশির ভাগ আইনজীবী তাঁদের হয়ে লড়তে চান না। নিম্ন আদালতের উপরেও চাপ থাকে, এঁদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করতেই হবে। আপিল কোর্টে মৃত্যুদণ্ড বদলে বড়জোর যাবজ্জীবন হয়। কিন্তু সেটা পেতেও বছর গড়িয়ে যায়। একলা বন্দি থেকে শরীর-মনের জোর খুইয়ে বাঁচার ইচ্ছেও তখন তলানিতে ঠেকে।

২০০২ সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল ওয়াজিহুল হাসানকে। তার পর থেকে পাল্টা আবেদন জানিয়ে মুক্তির জন্য দিন গুনছেন তিনি। গত বছরের নভেম্বরে আসিয়াকে যখন মুক্তি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, তার দু’সপ্তাহ পরেই একটি খ্রিস্টান ওয়েবসাইটে হজরত মহম্মদকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে লাহৌরে দুই ভাই, কাইজ়ার ও আমুন আয়ুবকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়।

‘‘আসিয়া বিবি মুক্তি পেয়েছেন। আল্লার কাছে প্রার্থনা করি আমার স্বামীও যেন ছাড়া পান,’’ বলছিলেন বছর তিরিশের সোবিয়া। সাওয়ান মাসিহ, তাঁর স্বামী শহরের রাস্তাঘাট সাফ করতেন। মদ খেয়ে তর্কে জড়িয়ে ইসলাম অবমাননার দায়ে এখন জেলে। ২০১৩-র ঘটনা। পরের বছরই মৃত্যুদণ্ড হয় সাওয়ানের। গত বছর বড়দিনের সময়ে শেষ বার জেলে স্বামীকে দেখেন সোবিয়া। ‘‘আমাদের জীবনটা ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। লুকিয়ে থাকতে হয়। বাবার পরিচয়টুকুও বাচ্চারা বলতে পারে না,’’ বলেন সোবিয়া। ঘটনা যখন জানাজানি হয়েছিল, আশপাশের মুসলিমরা চড়াও হতে যাচ্ছিলেন সাওয়ানের উপরে। ওঁরা যেখানে থাকতেন, সেই এলাকা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

জোসেফ ফ্রান্সিস নামে এক আন্দোলনকারী বলছেন, ‘‘জনতার থেকে বাঁচাতে সাওয়ানকে পুলিশের হাতে তুলে দিই।’’ ধর্মদ্রোহের অভিযোগ উঠলে জনতার ক্ষোভের পারদ চড়ে— এটাও আকছার ঘটে থাকে পাকিস্তানে। ২০১৪ সালে এক খ্রিস্টান দম্পতি প্রাণ হারান জনতার হাতে। ধর্মদ্রোহের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় মিথ্যে অভিযোগে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় তাঁদের।

ধর্মদ্রোহের বিরুদ্ধে অনেক মুসলিম দেশেই আইন রয়েছে। পাকিস্তানের আইনটি বেশ কড়া ও সহজেই এই আইন ব্যবহার করে কাউকে জেলে ভরা যায়। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ উঠলে
১০ বছরের কারাবাস। অভিযোগ যত গুরুতর, তার উপরে নির্ভর করে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড। অভিযোগের নিশানা মূলত সাধারণত দরিদ্র সংখ্যালঘু খ্রিস্টানরা। অনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যে অভিযোগ ওঠে। তার পর লড়াই কোন পথে নিয়ে যায়, অনেক ক্ষেত্রেই জানেন না অভিযুক্তরাও।

Blasphemy Pakistan Asia Bibi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy