কখনও তাঁর হাত ধরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কাহিনির রসাস্বাদন করেছেন পাঠক। কখনও অবাক হয়ে দেখেছেন আরবে জন্মগ্রহণ করা এক প্রাক্তন ব্রিটিশ কমান্ডো কেমন ভাবে হয়ে উঠেছেন ‘আফগান’। প্রতি মুহূর্তে কাহিনির অদ্ভূত মোচড়ে পাঠকদের তাক লাগিয়ে দেওয়া সেই ফ্রেডরিক ফোরসাইথ চলে গেলেন। বছর ছিয়াশির যে লেখকের হাত ধরে কার্যত সাহিত্যের এক ধারার নতুন সংজ্ঞা তৈরি হয়েছিল বলে মত প্রকাশক বিল স্কট-কেরের।
‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল’, ‘দ্য ওডেসা ফাইল’, ‘দ্য ডগস অব ওয়ার’, ‘দ্য আফগান’-এর মতো রোমাঞ্চকর কাহিনির লেখক ফ্রেডরিকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৫-এর বেশি। সারা পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রায় ৭.৫ কোটি বই বিক্রি হয়েছে।
১৯৩৮ সালে ব্রিটেনের কেন্টে জন্ম ফ্রেডরিকের। আঠারো বছর বয়সে তিনি যোগ দেন ব্রিটিশ বায়ুসেনায়। পরে বিবিসি ও রয়টার্সের সামরিক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি জানান, ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছিলেন ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআইসিক্সের হয়েও।
তাঁর অনেক কাহিনিই সারা বিশ্বে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া উপাদানে ভরপুর। ১৯৭১ সালে ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল’ উপন্যাসের মাধ্যমেই প্রথম সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন ফোরসাইথ। সে সময়ে বেকার ছিলেন তিনি। পরে বলেছিলেন, “তখন আমার ঋণ ছিল। ফ্ল্যাট ছিল না, গাড়ি ছিল না। ভেবেছিলাম কী ভাবে নিজেকে এই অবস্থা থেকে বার করা যায়? বোধহয় সবচেয়ে অচিরাচরিত উপায় বার করেছিলাম। লিখে ফেলেছিলাম একটা উপন্যাস।”
১৯৬৩-র প্রেক্ষাপটে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলকে হত্যার জন্য নিযুক্ত এক ব্রিটিশের সেই কাহিনি মোহিত করেছিল বিশ্বের রোমাঞ্চপ্রেমী পাঠককে। ১৯৭৩-এ সে কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হয় সিনেমা। হত্যাকারী ‘জ্যাকল’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেন এডওয়ার্ড ফক্স। গত বছরে আবার ওই কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হয় টিভি ড্রামা। যাতে ‘জ্যাকল’-এর ভূমিকায় রয়েছেন এডি রেডমেন।
ফোরসাইথের এজেন্ট জোনাথন লয়েড জানিয়েছেন, কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন ফোরসাইথ। সোমবার মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তাঁর কথায়, “কয়েক সপ্তাহ আগেই ওঁর সঙ্গে বসে ওঁরই জীবনের উপরে ভিত্তি করে তৈরি তথ্যচিত্র ইন মাই ওন ওয়র্ডস দেখছিলাম। এক অসাধারণ জীবনের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছিল সেই তথ্যচিত্র।” জোনাথন জানিয়েছেন, গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার সময়ে যা দেখেছিলেন তাতে অত্যন্ত আঘাত পেয়েছিলেন ফোরসাইথ। তা থেকেই সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল’-এর সূত্রপাত।
ফোরসাইথের স্ত্রী স্যান্ডি মোলি ছিলেন চিত্রনাট্যকার। একদা অভিনেত্রী এলিজ়াবেথ টেলরের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করা স্যান্ডির মৃত্যু হয় ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল’ অবলম্বনে তৈরি নয়া টিভি ড্রামার লন্ডনের প্রিমিয়ারের কয়েক দিন আগেই। প্রিমিয়ারের কেন্দ্রে থেকেও তাই সে দিন ব্যক্তিগত ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন ফোরসাইথ।
গুপ্তচরের অন্ধকার দুনিয়া থেকে উজ্জ্বল আলোর দুনিয়া পর্যন্ত সফর করা লেখক এ বার পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)