২০০৪ সালের ২১ অগস্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। বুধবারও এই মামলার শুনানি হয়। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, সরকারের এই আপিল ‘লোক দেখানো’। তাঁদের যুক্তি, যে তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ব্রিটেনে বৈঠক করেন, তাঁর শাস্তির জন্যই আবার আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে সরকার। যদিও প্রশাসনের বক্তব্য, যা করা হয়েছে, সবটাই আইন মোতাবেক, এর মধ্যে অন্য কিছু খোঁজা অর্থহীন। আজ, বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় বার হতে পারে।
২০০৪ সালের ২১ অগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছিলেন। পরে ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দু’টি মামলা হয়। ২০১৮ সালে আদালত ওই দু’টি মামলার রায়ে বাবর, প্রাক্তন শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু-সহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। পাশাপাশি, তারেক রহমান-সহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হয়। কিন্তু গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে পালাবদলের পরে সকলকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছ’সদস্যের আপিল বেঞ্চে অভিযুক্তদের আইনজীবী এস এম শাহজাহান জানান, কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই গ্রেনেড হামলা মামলায় যে ভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা হয়েছিল, তা উপমহাদেশে নজিরবিহীন। তাঁর সওয়াল, মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া সরকারের কাছে আর কোনও প্রমাণ নেই। এবং ওই জবানবন্দি পরবর্তী সময়ে হান্নান অস্বীকার করেছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত ১৩ জুন লন্ডনে যখন ইউনূস-তারেক সাক্ষাৎ হয়, তখন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ওই সাক্ষাৎকে ‘ঐতিহাসিক’ এবং ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য একটি ‘গেম-ওভার’ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যে তারেককে রাজনৈতিক ভাবে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধেই মামলার আবেদন করা হচ্ছে আদালতে? ২১ অগস্ট গ্রেনেড হামলার হতাহতদের পরিজন ও বাংলাদেশের আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, ওই সাক্ষাৎ বিচার ব্যবস্থার প্রতি একটি ভয়ঙ্কর বার্তা এবং চাপের ইঙ্গিত, যা আইনের শাসনের প্রতি ইউনূস প্রশাসনের চরম অবহেলার বহিঃপ্রকাশ। আওয়ামী লীগের বক্তব্য, গোটা বিষয়টিই ‘লোক দেখানো’। রায় কী হবে, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)