বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তরুণদের নতুন দলের প্রধান নাহিদ ইসলাম। মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশে গঠিত হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র প্রধান হন তিনি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ বলেন, “গত সাত মাসে আমরা মনে করেছিলাম, স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশি ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো যাবে। কিছু পর্যায়ে তা হয়েছে, তবে আমাদের প্রত্যাশামতো সেটি হয়নি।”
রয়টার্স জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচন করাতে চাইছে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, সম্প্রতি ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর বা খুব বিলম্ব হলে পরের বছরের মার্চের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে নাহিদের মতে, এ বছরে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। রয়টার্সকে তিনি বলেন, “বর্তমানে যে আইনশৃঙ্খলা এবং পুলিশি ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে আমার মনে হয় না এই বছরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।” মাত্র এক সপ্তাহ আগেই তৈরি হয়েছে নাহিদদের নতুন দল। নির্বাচনের সময় নিয়ে নাহিদ সন্দিহান হলেও তিনি জানান, যখনই ভোট হবে, জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত।
বস্তুত, বাংলাদেশকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফেরানো এবং সার্বিক সংস্কারের জন্য বেশ কিছু কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার কমিটিগুলির কিছু রিপোর্টও জমা পড়েছে প্রশাসনের কাছে। তবে এর মধ্যেও শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বেশ কিছু বিশৃঙ্খল ঘটনা দেখা গিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে তাণ্ডব। এক দল উন্মত্ত জনতার তাণ্ডবের সময়ে পুলিশ কী করছিল, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলারও বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, সেগুলির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হিংসার কোনও যোগ নেই।
আরও পড়ুন:
রয়টার্সকে দেওয়া নাহিদের সাক্ষাৎকারে উঠে আসে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’র প্রসঙ্গও। তাঁর মতে, নির্বাচন আয়োজনের আগে ওই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হওয়া প্রয়োজন। বস্তুত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফেই প্রথম এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের ডাক দেওয়া হয়। পরে ইউনূসের প্রশাসন ঘোষণাপত্র প্রকাশে উদ্যোগী হওয়ায় নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ওই ঘোষণাপত্র তৈরি হওয়ার কথা। নাহিদ বলেন, “যদি এ বিষয়ে এক মাসের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন করা যেতে পারে। কিন্তু যদি তা না-হয়, তবে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া উচিত।”