বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। — ফাইল চিত্র।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের জেরে অশান্ত ভারতের পড়শি দেশ। পড়ুয়াদের আন্দোলন রুখতে প্রথম থেকেই কড়া পদক্ষেপের কথা বলেছিল শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা স্পষ্ট করেন, আন্দোলন থামাতে আরও কঠিন পথে হাঁটতে পারে তাঁর সরকার। পাশাপাশি এ-ও জানান, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই এখন লক্ষ্য তাঁর।
টানা আন্দোলনের জেরে রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের একটা বড় অংশ বন্ধ। ঢাকার মধ্যে ট্রেন চলাচল করছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। স্কুল-কলেজে আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের। রাস্তায় রাস্তায় সেনা টহল দিচ্ছে। জারি করা হয়েছে কার্ফু। এর ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় প্রভাব পড়েছে। শিল্প-কারখানা সব বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এমন অবস্থায় সোমবার বাংলাদেশের রফতানিকারী ও ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলিকে নিয়ে নিজের দফতর গণভবনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।
সেই বৈঠকেই দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেন হাসিনা। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কথাও বলেন। তিনি বলেন, ‘‘দ্রুতই অবস্থার পরিবর্তন হবে। আমরা পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত করে এনেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কার্ফু শিথিল করা হবে।’’ একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাস্তায় যে আন্দোলন চলছে, তা নিয়ে আক্রমণ করেন হাসিনা। পাশাপাশি বিরোধীদের নিশানা করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ছাত্রদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে বিরোধীরা দেশের ক্ষতি করছেন। দেশের ভাবমূর্তি ফেরানো এবং শান্তি ফিরিয়ে আনাই প্রধান লক্ষ্য বলে জানান হাসিনা।
১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু করেছিল। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে আরও ২৬ শতাংশ কোটা ছিল। সেই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন অনেক দিনের। ২০১৮ সালে হাসিনার সরকার সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাত জন হাই কোর্টে মামলা করেন। হাই কোর্ট হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়। তার পর আবারও শুরু হয় আন্দোলন। সরকার হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। গত রবিবার সেই মামলায় রায় দেয় আদালত। রায়ে উল্লেখ করে, সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে মাত্র সাত শতাংশ। বাকি নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এমনকি, আন্দোলনকারীরাও আদালতের রায় নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। তবে তাঁরা আন্দোলন থেকে এখনই যে সরে আসবেন না, তা-ও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এখন দাবি করছেন, আন্দোলনে পড়ুয়াদের মৃত্যুর নেপথ্যে দায়ী যাঁরা, তাঁদের বিচার চাই।
অন্য দিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও আন্দোলন কেন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হাসিনা। তাঁর দাবি, ছাত্ররা যা চেয়েছিলেন, আদালতের রায়ে সেটাই রয়েছে। তার পরও এই আন্দোলন এবং সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের অর্থ কী? তবে পড়ুয়াদের আবারও শান্ত থাকার আর্জি জানান হাসিনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy