Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Joe Biden

পিছনে বাইডেন, বরফ কি গলছে ভারত-পাকিস্তানের

দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী আজ কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন।

জো বাইডেন।

জো বাইডেন। ছবি রয়টার্স।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ ০৭:১২
Share: Save:

দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী আজ কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন। সৌদি আরবের মাটিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ‘ব্যাক চ্যানেল’ যোগাযোগের সংবাদ পল্লবিত হল এবং আজ তাজিকিস্তানে এসসিও (সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন) নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে একই মঞ্চে ভারত-পাক নিরাপত্তা উপদেষ্টা। আগামী রবিবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি রওনা হচ্ছেন ওয়াশিটংনের উদ্দেশে।

এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি অদৃশ্য সুতোর সংযোগ রয়েছে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। যার একটি দিক ধরা রয়েছে ওয়াশিংটনের জো বাইডেন প্রশাসনের হাতে।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো এবং আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার নির্বিঘ্নে ঘটাতে যে ভাবে হোক উপমহাদেশে শান্তি বজায় রাখা জরুরি আমেরিকার। আর সেই লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই নীরবে সক্রিয় জো বাইডেন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া (যার মধ্যে কাশ্মীরও রয়েছে) যাতে অন্তত একটা পর্যায়ে পৌঁছয়, সে জন্য সচেষ্ট তিনি। কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তান ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠুক, এবং তার রেশ ছড়িয়ে পড়ুক গোটা অঞ্চলে— এটা বাইডেন প্রশাসনের জন্য সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। সূত্রের মতে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মোদী সরকারের তরফে জম্মু ও কাশ্মীরে মোবাইল সংযোগ চালু করার সিদ্ধান্তের পিছনেও আমেরিকার চাপ ছিল।

আজ দিল্লিতে যখন কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন মোদী, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার কয়েক ঘণ্টা আগে তাজিকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী একটি যৌথ বিবৃতিতে সই করছে ভারত এবং পাকিস্তান, এসসিও-র অন্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে। সেখানে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ, মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে এসসিও-ভুক্ত দেশগুলি পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে লড়াই করবে।

সূত্রের মতে, ডোভালের নেতৃত্বে গত দু’মাসে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ‘ব্যাক চ্যানেল’ কথাবার্তা চালু হয়েছে। গত বছর লাগাতার পাকিস্তানের তরফ থেকে ভারত-পাক সীমান্তে সংঘর্ঘ বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা এবং রক্তপাতের পরে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কিন্তু সীমান্ত অনেকটাই শান্ত। কাশ্মীর-সহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার বার্তাও এসেছে ইসলামাবাদের তরফে।

সামনেই রয়েছে সন্ত্রাসবাদে আর্থিক পুঁজি জোগানের উপর আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থা এফএটিএফ-এর বৈঠক। সেখানে ধূসর তালিকা থেকে নেমে কালো তালিকায় চলে যাওয়ার জুজু পাকিস্তানের উপর রয়েছে। সূত্রের খবর, পাকিস্তানকে এক ধরনের ‘জুজু’ ও ভারতকে অন্য ধরনের উপহার (কোভিড-সহায়তা) দিয়ে নিজেদের স্বার্থে শান্তি কিনতে মরিয়া আমেরিকা।

অবশ্য এটাও মোদী সরকারকে বিবেচনার মধ্যে রেখে এগোতে হচ্ছে যে পাকিস্তান-বিরোধিতার মধ্যে বিজেপির জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অন্যতম শিকড় প্রোথিত। একই ভাবে পাকিস্তানকেও (তা সে সামরিক নেতৃত্ব বা আইএসআই হোক অথবা ইমরান সরকার) ঘরোয়া রাজনীতিতে কাশ্মীরকে আবেগকে জিইয়ে রাখতেই হয়। তাই ভারত-পাক ‘ব্যাক চ্যানেলের’ পাশাপাশি বাইরে পারস্পরিক সংঘাতের চিত্রনাট্যটিকে বহাল রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, আফগানিস্তানে ভারত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জায়গা দখল করে রয়েছে। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচির কথায়, “এটা আফগানিস্তানের মানুষের উপর নির্ভর করে কাদের তাঁরা বন্ধু হিসাবে বেছে নেবেন এবং তাদের কতটা জায়গা দেবেন। আমরা আফগানিস্তানে বিদ্যুৎ, বাঁধ, স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক প্রকল্প গড়ছি। গোটা বিশ্ব জানে পাকিস্তান আফগানিস্তানের জন্য কী নিয়ে এসেছে!” পাশাপাশি তিনি বলেছেন, “পাকিস্তান-সহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। পাকিস্তান অবশ্যই সহায়ক আবহাওয়া তৈরি করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য ও পাকাপাকি ব্যবস্থা নিক, যাতে তাদের জমি ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের ঘাঁটি না হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Joe Biden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE