গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
‘‘১০০০ বিটকয়েন পাঠালে ২০০০ ফেরত দেব।’’ এমনই অভিনব টুইট ঘিরে তোলপাড় গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রতিদ্বন্দ্বী, সেলিব্রিটি গায়ক থেকে শিল্পপতি— বহু প্রভাবশালী মার্কিন নাগরিকের টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে এই রকম পোস্ট ঘিরে তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আমেরিকায়। টুইটারের ইতিহাসে এত বড় মাপের হ্যাকিং-এর ঘটনা আর হয়নি বলেই মত সাইবার বিশেষজ্ঞদের। দীর্ঘক্ষণ থাকার পরে অবশ্য টুইটগুলি মুছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর ফলে টুইটারের বিশ্বাসযোগ্যতায় বিরাট ধাক্কা খাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন আমেরিকার একটা বড় অংশের রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, সেলিব্রিটি ও প্রভাবশালীরা। তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন, শিল্পপতি জেফ বেজোস, ওয়ারেন বাফেট, বিল গেটস, মাইক ব্লুমবার্গ, এলন মাস্ক, সঙ্গীতশিল্পী কেনে ওয়েস্টের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিখ্যাত মানুষজন। তবে সবার হ্যাকিংয়ের ধরন মোটামুটি এক। বয়ানও মোটের উপর একই ধাঁচের। ওই সব পোস্টে বলা হয়েছে, ‘‘করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় আমি সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। আমার অ্যাকাউন্টে আপনারা ১০০০ বিটকয়েন দিলে আমি ২০০০ বিটকয়েন ফেরত দেব।’’ তার নীচে বিটকয়েন পাঠানোর একটি ঠিকানাও দেওয়া হয়েছে ওই সব পোস্টে। সব টুইটে একই ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৩২ হাজার! দেশে মোট আক্রান্ত ন’লক্ষ ৬৮ হাজার
কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, ওই সব পোস্ট যে টুইটার অ্যাকাউন্টের মালিকরা করেননি, সেটা জানার পরেও দীর্ঘক্ষণ সেগুলি ডিলিট করা যায়নি। মার্কিন সময় বুধবার সকালে টুইটগুলি করা হয়। সেগুলি ডিলিট করা সম্ভব হয়েছে দুপুরের দিকে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টুইটারের কন্ট্রোল পেজের অ্যাকসেস পেয়ে গিয়েছিল কোনও হ্যাকার। সেই কারণেই পর পর বহু মানুষের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রায় একই রকম পোস্ট করতে পেরেছে।
বারাক ওবামার অ্যাকাউন্টে হ্যাকারের টুইটের স্ক্রিনশট।
সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিল অবশ্য বুধবার সাত সকালেই। বহু মানুষ অভিযোগ জানাতে শুরু করেন যে তাঁরা টুইট করতে পারছেন না। পাসওয়ার্ডও পাল্টানো যাচ্ছে না। টুইটার কর্তৃপক্ষের তরফেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে হয়েছিল, ‘‘আমরা জানি, নিরাপত্তাজনিত কিছু কারণে অনেকেই টুইট করতে পারছেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে জানানো হবে।’’ কিন্তু তার সমাধান হওয়ার আগেই এই বিশাল হ্যাকিংয়ের ঘটনা।
আরও পড়ুন: দলের চাপে সুর নরম সচিনের
তবে এই সব বিরাট প্রভাবশালীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাকের পরেও যে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাজনিত কোনও সমস্যা হয়নি বা কোনও ভুল তথ্য দেওয়া হয়নি, সেটা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। সাইবার বিশেষজ্ঞ তথা ‘সোশ্যাল প্রুফ সিকিউরিটি’-র সিইও রাচেল টোবাক বলেছেন, এটা বিরাট ঘটনা। আমরা দেখা অন্যতম বড় সাইবার হানা। আমরা ভাগ্যবান যে এই সব হ্যাকাররা মূলত আর্থিক ভাবে লাভবান হতে চেয়েছে এবং সমাজে কোনও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়নি।’’
একই ভাবে টুইট করা হয়েছে বিল গেটসের অ্যাকাউন্টেও।
তবে এতে যে টুইটারের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা বিরাট ধাক্কা খাবে, তেমনটাই মত বড় অংশের বিশেষজ্ঞদের। রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি থেকে ব্যবসায়ী— সবাই টুইটারের মাধ্যমে বার্তা দেন এবং এত দিন পর্যন্ত এটা নিশ্চিত ছিল যে ওই টুইট, অ্যাকাউন্টের ইউজারই করেছেন। এই ঘটনার পর থেকে সেটা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। ২০১২ সালে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের মুখ্য তথ্যপ্রযুক্তি আধিকারিক তথা মার্কিন উদ্যোগপতি হার্পার রিড মনে করেন, সমস্যা হল, আমরা সবাই টুইটারকে নিরাপদ ও নিশ্চিত বলে মনে করতাম। জো বাইডেন কোনও টুইট করলে সেটা যে তিনিই করেছেন, সেটাও নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু টুইটার প্রমাণ করল, সেটা নাও হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy