E-Paper

ঘরে-বাইরে চাপে হাসিনা সরকার, ভোটে অংশ নেওয়া নিয়ে চাপে বিএনপি

গত সাধারণ নির্বাচনে দেশের ৩০০টি আসনের অধিকাংশতেই প্রশাসনিক মদতে ঢালাও কারচুপির অভিযোগ করে থাকে বিরোধী দলগুলি। সরকারের দু-একটি শরিক দলও সেই সময়ে একই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৪৮
A photograph of Sheikh Hasina

চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪-এর জানুয়ারিতে যে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা, তা নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপে আছে শেখ হাসিনা সরকার। ফাইল ছবি।

বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে খানিকটা মহড়ার মতো কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন করিয়ে নেয় নির্বাচন কমিশন। এ বারেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে জনসমর্থন ও শক্তির দিক দিয়ে বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ না-নেওয়ার ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচন কমিশন ও এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনেই তাঁরা অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতৃত্ব। তবে প্রকাশ্যে তারা যা-ই বলুক, নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে দলের মধ্যেই বিস্তর ধন্দ রয়েছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪-এর জানুয়ারিতে যে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা, তা নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপে আছে শেখ হাসিনা সরকার। গত সাধারণ নির্বাচনে দেশের ৩০০টি আসনের অধিকাংশতেই প্রশাসনিক মদতে ঢালাও কারচুপির অভিযোগ করে থাকে বিরোধী দলগুলি। সরকারের দু-একটি শরিক দলও সেই সময়ে একই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে এবং সম্প্রতি জাপানের রাষ্ট্রদূতও প্রকাশ্যে বিষয়টি তুলে আগামী ভোট সুষ্ঠু ভাবে করানোর দাবি তুলেছেন। আবার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যদি অংশ না-নেয়, সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রমাণ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।

সেটা বুঝেই সরকারকে চাপে রাখতে কোনও নির্বাচনে অংশ না-নেওয়ার ঘোষণা আগাম করে রেখেছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল। ‘নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার’ গঠনের দাবিতে খানিকটা প্রথা ভেঙে রমজান মাসেও আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরের কথায়, “আওয়ামী লীগ দীর্ঘকাল অগণতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে পরিণত করতে মানুষ এখনই পরিবর্তন চান।” মির্জার দাবি, মানুষ মরিয়া বলেই এরশাদ আমলের পরে এই প্রথম দলের নেতাকর্মীরা রমজান মাসেওরাস্তায় নেমেছেন।

কিন্তু বিষয়টির এখানেই শেষ নয়। ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তার পর থেকেই বিএনপির সাধারণ কর্মীরা মেয়র ও কাউন্সিলর ভোটে অংশ নিতে চেয়ে দলের নেতাদের কাছে দরবার শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, আওয়ামী লীগ টানা তিন দফা ক্ষমতায় থাকায় প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। বিএনপি ভোটে অংশ না-নিলে শাসক দলকে এক রকম বিনাযুদ্ধে জমি ছেড়ে দেওয়া হবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভাল ফল হলে সাধারণ নির্বাচনেও চাপে থাকবে শাসক দল। বস্তুত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটা অংশও এইযুক্তিতে সহমত।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায়, “অনিচ্ছুক দলকে ভোটে নিয়ে আসাটা সরকারের দায় নয়। সে কাজ নির্বাচন কমিশনের। কেউ আসুক বা না-আসুক ভোট হবেই। এ বারে আর ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকবে না।” শাসক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনও বর্জন করে, তারা একটি গুরুত্বহীন দলে পরিণত হবে। আমরা চাই, আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিক।”

ওবায়দুল কাদেরের মতে লন্ডনে ফেরার বিএনপি-র নেতা তারেক জিয়া মনে করেন, দলের নেতারা সাংসদ হয়ে গেলে তাঁকে মানবেন না। কাদের বলেন, “এই টানাপড়েনে বিএনপি দু’ভাগ হয়ে এক ভাগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তখন তারেককী করবেন?”

বস্তুত বিএনপি-তে ফাটলের দিকেই এখন তাকিয়ে শাসকদলের নেতৃত্ব।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

bnp Bangladesh Election Shiekh Hasina

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy