ঘটনাস্থলে পুলিশি প্রহরা। সোমবার কাবুলে। ছবি: এএফপি।
সাত সকালেই জোরালো বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল ও তার আশপাশের এলাকা। আজ সকাল ছ’টা নাগাদ কাবুল-জালালাবাদ রোডে একটি যাত্রিবাহী বাসে হামলা চালায় আত্মঘাতী জঙ্গি। এত সকালেও বাসটিতে বেশ ভিড় ছিল। আর সেটি স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও নেপালি নিরাপত্তারক্ষীতে ঠাসা ছিল। ছিলেন কয়েক জন ভারতীয়ও।
আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র সেদিক সিদ্দিকি জানান, আজ সকালের এই আত্মঘাতী হামলায় মৃত্যু হয়েছে দুই ভারতীয়ের। মারা গিয়েছেন ১৪ জন নেপালি নাগরিক। এঁরা প্রত্যেকেই কাবুলে কানাডার দূতাবাসে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মোট সংখ্যা ২৫। আহত অনেকে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপও টুইটারে দুই ভারতীয়ের মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘কাবুলে আজকের আত্মঘাতী হামলায় নিহতদের মধ্যে দু’জন ভারতীয় রয়েছেন। নিহতদের নাম, গণেশ থাপা ও গোবিন্দ সিংহ।’’ ওই দুই ভারতীয় দেহরাদূনের বাসিন্দা। একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতে কাবুল এসেছিলেন তাঁরা। নিহত নেপালি রক্ষীদের মতো তাঁরাও সম্ভবত কানাডার দূতাবাসে কাজ করতেন। তাঁদের দেহ ভারতে ফেরানোর জন্য নয়াদিল্লি সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে তাঁদের পরিবারকে। টুইটারে এই হামলার নিন্দা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিস্ফোরণের খবর শোনা মাত্রই পাকিস্তানের নেপালি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেপাল সরকার। আফগানিস্তানে নেপালের কোনও দূতাবাস নেই। ইসলামাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই কাবুলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে নেপাল সরকার। কানাডা সরকার জানিয়েছে, বিস্ফোরণে তাদের ভবনের ক্ষতি হয়নি। নিহত রক্ষীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে তারা। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলিও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন।
প্রথমে আজকের হামলার দায় নিয়েছিল আফগান তালিবান। তাদের নয়া প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা টুইটারে জানান, আফগানিস্তানের মাটিতে মার্কিন অভিযানের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই এই হামলা। পরে আইএসের পাক ও আফগান শাখাও এই হামলার দায় নেয়। তাই আদতে কোন জঙ্গি সংগঠন এই হামলা চালিয়েছে, তা নিয়ে কার্যত ধন্দে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জালালাবাদ যাওয়ার দিকে একটি স্থানীয় বাজারে অপেক্ষা করছিল ওই আত্মঘাতী জঙ্গি। হলুদ রঙের ওই বাসটি বাজারের দিকে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সে বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রচণ্ড শক্তিশালী সেই বিস্ফোরণের জেরে আশপাশের কয়েকটি দোকান ভালমতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন সেই সময় বাজারে উপস্থিত কিছু ক্রেতা-বিক্রেতাও। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে কাবুল শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেঙে গিয়েছে আশপাশের অনেক বাড়ির জানলার কাচ।
এই ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই হামলা হয়েছে দেশের অন্য দুই জায়গাতেও। কাবুলে প্রথম হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশের উত্তরের বাদাকশান প্রদেশের এক ব্যস্ত বাজারে মোটরবাইকে রাখা বিস্ফোরক ফেটে মৃত্যু হয় দশ জনের। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। বেলার দিকে হামলা চালানো হয় কাবুলের এক প্রাদেশিক কাউন্সিল সদস্যের গাড়িতে। আফগান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক জানিয়েছে, এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক জনের। ওই নেতা ও তাঁর কয়েক জন দেহরক্ষী আহত হয়েছেন। কাবুলের দ্বিতীয় হামলার দায় নিয়েছে আইএস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy