ভারত-ইরান-আফগানিস্তান অক্ষ আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা। এক মাসের মধ্যে চালু হতে চলেছে ছাবাহার বন্দর। জানালেন আফগানিস্তানের কনসাল জেনারেল আমন আমিন। ওমান উপসাগরের বুকে ভারত-ইরান যৌথ উদ্যোগে ছাবাহার বন্দর সম্প্রসারণ তথা আধুনিকীকরণের কাজ প্রায় শেষ। এই বন্দর খুললে ভারত-আফগানিস্তান বাণিজ্য এবং পণ্য পরিবহণের পথে পাকিস্তান আর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। শুধু তাই নয়, মধ্য এশিয়ার সমুদ্রেও ভারতের স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি হয়ে যাবে।
২০১৬-র মে মাসে ভারত-ইরান-আফগানিস্তান ছাবাহার নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত তথা জলসীমার খুব কাছে অবস্থিত ছাবাহার বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। বিনিময়ে মেলে ছাবাহার বন্দর ব্যবহারের অধিকার। আফগান কূটনীতিক সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘আর এক মাসের মধ্যেই ছাবাহার বন্দর খুলে যাচ্ছে এবং তাতে ভারত-আফগান বাণিজ্য আরও গতি পাবে।’’
রাতের ছাবাহার। ছবি: সংগৃহীত।
তালিবানের হাত থেকে মুক্তি পেতে যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল আফগানিস্তানকে, তার ক্ষতচিহ্ন এখনও বহন করছে দেশটি। সে ক্ষতচিহ্ন মুছতে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে বিপুল সহায়তা করছে ভারত। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্যিক সম্পর্কও অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু সব দিকেই স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা আফগানিস্তানে পণ্য পাঠানোর জন্য ভারতকে পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। পাকিস্তান এই ভারত-আফগান বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আফগানিস্তানের সড়ক ব্যবহার করে পাকিস্তান মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে যে বাণিজ্য চালায়, কাবুল সেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় ইসলামাবাদ ভারত-আফগান বাণিজ্য পথ বন্ধ করার সাহস পায়নি। কিন্তু এ বার পাকিস্তানের উপর সেই নির্ভরতাও আর থাকবে না। ছাবাহার বন্দর খুলে গেলে ইরান হয়ে সরাসরি আফগানিস্তান পৌঁছবে ভারত। শুধু আফগানিস্তানের সঙ্গে নয়, ছাবাহার বন্দরের সুবাদে মধ্য এশিয়ার অন্য দেশগুলির সঙ্গে ভারতের দূরত্ব অনেক কমবে, বাণিজ্য বাড়বে এবং অনেক কম খরচে আমদানি-রফতানি চলবে।
আরও পড়ুন: গোটা ভারত মহাসাগরকে বিপজ্জনক করে তুলছে দিল্লি: উদ্বেগ পাকিস্তানের
এক মাসের মধ্যে ছাবাহারে ভারতীয় বিনিয়োগে গড়ে ওঠা বন্দরের উদ্বোধন হবে, এমন খবর যে চিন এবং পাকিস্তানকে ঘোর অস্বস্তিতে রাখবে, তা বলাই বাহুল্য। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের অঙ্গ হিসেবে আরব সাগরের উপকূলবর্তী গোয়াদরে বন্দর তৈরি করেছে চিন। মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের স্বার্থে পাকিস্তানের মাটিতে চিনা উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই গোয়াদর বন্দরের উপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে নির্ভর করতে হবে বলে চিন আশা করেছিল। কিন্তু গোয়াদর থেকে জলপথে ২০০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত ছাবাহারে ভারত যে পাল্টা বন্দর তৈরি করবে, তা চিন-পাকিস্তান আশা করেনি। মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্নে গোয়াদরের চেয়ে ছাবাহারের অবস্থান অনেক সুবিধাজনক। তাই গোয়াদর থেকে যে ভাবে অর্থনৈতিক লাভ পাওয়ার আশা করেছিল চিন-পাকিস্তান, তা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা তো থাকছেই। আরব সাগরের বুকে চিনা ঘাঁটির শ’খানেক কিলোমিটারের মধ্যে ভারতের পাল্টা আস্তানাও তৈরি থাকছে। স্বাভাবিক ভাবেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে বেজিং এবং ইসলামাবাদের কর্তাদের।